কাশ্মীরের প্রখ্যাত স্বাধীনতাকামী নেতা ইয়াসিন মালিককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ভারতের রাজধানী দিল্লির একটি আদালত এ রায় দেন।
বুধবার (২৫ মে) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, সন্ত্রাসীদের অর্থ জোগান দেওয়ার একটি মামলায় ইয়াসিন মালিককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
নিষিদ্ধ সংগঠন জম্মু ও কাশ্মীর লিবারেশন ফ্রন্টের (জেকেএলএফ) প্রধান ইয়াসিন মালিক ভারত শাসিত কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামীদের মধ্যে অন্যতম হিসেবে বিবেচিত। ১৯৯৪ সালে সহিংসতা পরিত্যাগ করে সংগঠনটি।
৫৬ বছর বয়সী ইয়াসিন মালিক গত সপ্তাহে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন। তার বিরুদ্ধে একটি সন্ত্রাসী সংগঠনের জন্য সদস্য সংগ্রহ, বেআইনিভাবে তহবিল সংগ্রহ, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ রয়েছে। এসব অপরাধে আদালতের কৌঁসুলি ইয়াসিন মালিকের মালিকের মৃত্যুদণ্ড চেয়েছিলেন।
ভারতপন্থী কিন্তু কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসনের পক্ষের দলগুলোর জোট পিপলস অ্যালায়েন্স ফর গুপকার ডিক্লারেশন (পিএজিডি) ইয়াসিন মালিকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডকে দুর্ভাগ্যজনক বলে অভিহিত করেছে। এক বিবৃতে সংগঠনটি বলছে, ইয়াসিন মালিককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া দুর্ভাগ্যজনক। এটি শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে একটি বড় ধাক্কা। আমরা ভয় পাচ্ছি, এ রায় এই অঞ্চলের অনিশ্চয়তাকে আরও বাড়িয়ে তুলবে। এটি বিচ্ছিন্নতা ও বিচ্ছিন্নতাবাদী অনুভূতিকে আরও উস্কে দেবে। আদালত তার রায় দিয়েছে, কিন্তু এটি ন্যায়বিচার নয়।
খবরে আরও বলা হয়, নয়াদিল্লির সন্ত্রাস-বিরোধী আদালতে রায় ঘোষণার পরপরই শ্রীনগরসহ কয়েকটি এলাকায় মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা স্থগিত করা হয়েছিল। বিচার চলাকালীন কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামী এ নেতার পরিবার ও আইনজীবী বলেছেন, আদালতের রায় ন্যায্য নয়।
ইয়াসিন মালিক নিজেও এ রায় প্রত্যাখ্যান করেছেন। নিজেকে একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
গত সপ্তাহে তিনি দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর একটি বিবৃতি প্রকাশ করে জেকেএলএফ। এতে বলা হয়, ইয়াসিন মালিকের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো কল্পিত, বানোয়াট এবং রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
বিবৃতিতে ইয়াসিনের পক্ষে আদালতের বিচারককে উদ্ধৃত করে বলা হয়, যদি আজাদি (স্বাধীনতা) চাওয়া একটি অপরাধ হয়, তবে আমি এই অপরাধ এবং এর পরিণতি মেনে নিতে প্রস্তুত।
২০১৯ সালে জেকেএলএফ নিষিদ্ধ হওয়ার পরপরই ইয়াসিন মালিককে ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে তহবিল প্রদানের মামলায় গ্রেফতার করে। তার বিরুদ্ধে কাশ্মীরে ‘অশান্তির সময়’ নিয়ে আসার অভিযোগ তোলা হয়। এ ছাড়া ২০১০ ও ২০১৬ সালে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ও পাথর নিক্ষেপ করার জন্য পাকিস্তান থেকে তহবিল আদায়ের অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে।
একই বছরের আগস্টে নয়াদিল্লি ভারত-শাসিত কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে। পরবর্তীতে একতরফাভাবে রাজ্যের একমাত্র মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলটিকে দুটি ফেডারেল নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে বিভক্ত করে। এ পদক্ষেপের পর অঞ্চলটির প্রধান রাজনৈতিক ও বিদ্রোহী নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
সূত্র: আল জাজিরা