বিশ্বের ১৬টি দেশে অন্তত ১৬১ জনের মাংকিপক্স শনাক্ত হয়েছে। সংক্রামক রোগের তথ্য সংগ্রহকারী গোষ্ঠী গ্লোবাল ডট হেলথের বরাত দিয়ে মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম এনবিসি নিউজ।
নাম শুনে বানরের কথা মনে হলেও আসছে মাংকিপক্স ভাইরাসটির সঙ্গে সম্পর্ক মূলত ইঁদুরের। ভাইরাসটির প্রাকৃতিক আবাসভূমি পশ্চিম আফ্রিকা এবং রেইনফরেস্টে বাস করে এমন কেউ হয়তো আক্রান্ত ইঁদুরের সংক্রমণে এলে অসুখটি ছড়ায়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকার দুর্গম অঞ্চলে হাজারো মানুষকে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে দেখা গেছে। তবে আফ্রিকার বাইরে ইউরোপ, আমেরিকায় কিছু দিন আগে পর্যন্তও এর প্রাদুর্ভাবের কথা শোনা যায়নি। এখন যাদের মাংকিপক্স হচ্ছে তারা কোথা থেকে সংক্রমিত হচ্ছে – তাও স্পষ্ট নয়।
সম্প্রতি আফ্রিকার বাইরে প্রথম মাংকিপক্সে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় যুক্তরাজ্যে। দেশটিতে এ পর্যন্ত ৫৬ জনের এই ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। তালিকায় আছে স্পেন, পর্তুগাল, যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, সুইডেন, সুইজারল্যান্ডের মতো দেশগুলোও।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, এই সংক্রমণ অস্বাভাবিক। কারণ এগুলো এমন দেশে ঘটছে যেগুলো এ ভাইরাসটির স্বাভাবিক আবাসস্থল নয়।
মাংকিপক্স এমন একটি ভাইরাসবাহিত রোগ যা সাধারণত মৃদু অসুস্থতা সৃষ্টি করে। অধিকাংশ আক্রান্ত ব্যক্তিই কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। এটি খুব সহজে একজন মানুষ থেকে আরেকজন মানুষের ছড়াতে পারে না। মনে করা হয় বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মধ্যে এটি ছড়ানোর আশঙ্কা অপেক্ষাকৃত কম। এখনও পর্যন্ত এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনও টিকা নেই। তবে গুটিবসন্তের টিকা নিলে সেটি মাংকিপক্সের বিরুদ্ধেও ৮৫ শতাংশ সুরক্ষা দিয়ে থাকে। কারণ এই দুই ভাইরাসের অনেক মিল রয়েছে।
বিবিসির স্বাস্থ্য বিষয়ক সংবাদদাতা জেমস গ্যালাহার বলছেন, এটা কোভিডের মতো কিছু নয়। এ ভাইরাস একজন থেকে আরেকজনের শরীরে ছড়াতে অনেকটা সময়ের জন্য ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে থাকার দরকার হয়।
যৌন আচরণের সঙ্গে সম্পর্ক?
যারা মাংকিপক্সে সংক্রমিত হচ্ছেন তাদের অনেকেই সমকামী বা উভকামী তরুণ বা যুবক। আক্রান্তদের বেশিরভাগেরই যৌনাঙ্গ এবং তার আশপাশের জায়গায় গুটি হতে দেখা যাচ্ছে। জেমস গ্যালাহার বলেন, কেন সমকামী-উভকামী পুরুষরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন তা স্পষ্ট নয়। এটা কি শুধুই ঘটনাচক্রে এমন হচ্ছে, নাকি যৌন আচরণের ফলে ভাইরাসটি সহজে ছড়াতে পারছে তাও স্পষ্ট নয়। মাংকিপক্স সংক্রমিত কারও ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে এলে তা অন্যের দেহে ছড়াতে পারে। ফাটা বা কাটা চামড়া, চোখ, নাক বা মুখ দিয়ে ভাইরাসটি মানুষের শরীরে প্রবেশ করতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)-এর পক্ষ থেকে এরইমধ্যে মাংকিপক্সকে ‘নিয়ন্ত্রণযোগ্য রোগ’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। সংস্থাটির সংক্রামক রোগ বিষয়ক শীর্ষ পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ মারিয়া ভ্যান কেরখোভ এমন পর্যবেক্ষণের কথা জানিয়েছেন। ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব বিশ্বব্যাপী একটি জরুরি স্বাস্থ্য পরিস্থিতি কিনা, এমন প্রশ্নের উত্তরে ড. মারিয়া ভ্যান কেরখোভ বলেন, ‘এটি একটি নিয়ন্ত্রণযোগ্য পরিস্থিতি।’ তবে একইসঙ্গে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকাজুড়ে প্রাদুর্ভাব ঘটছে। সেখানে কী ঘটছে তা থেকে আমরা দৃষ্টি সরিয়ে নিতে পারি না।
মারিয়া ভ্যান কেরখোভ বলেন, ত্বক থেকে ত্বকের সংস্পর্শে সংক্রমণ ঘটছে। যাদের শনাক্ত করা হয়েছে তাদের বেশিরভাগেরই মৃদু উপসর্গ দেখা গেছে। সূত্র: এনবিসি নিউজ, বিবিসি।