বাংলাদেশ ব্যাংক আবারও মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমিয়েছে। সোমবার (২৩ মে) প্রতি মার্কিন ডলারের বিনিময়মূল্য ৪০ পয়সা বাড়িয়ে ৮৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে অনেক ব্যাংক এখনও ১০০ টাকা দরে প্রবাসী আয় সংগ্রহ করছে ও রপ্তানি বিল নগদায়ন করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমিয়ে দেওয়ায় আমদানিকারকদের বেশি দামে ডলার কিনতে হচ্ছে। এ কারণে তাদের খরচ বাড়ছে। অন্যদিকে, এতে রপ্তানিকারক ও প্রবাসীরা লাভবান হবেন।
এ বছর জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে ডলারের বিনিময় মূল্য ২০ পয়সা বাড়িয়ে ৮৬ টাকা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত ২৩ মার্চ তা আররও ২০ পয়সা বাড়িয়ে ৮৬ টাকা ২০ পয়সা করা হয়। গত ২৭ এপ্রিল বিনিময় মূল্য ২৫ পয়সা বাড়ানোর ফলে প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য দাঁড়ায় ৮৬ টাকা ৪৫ পয়সায়। সর্বশেষ ৯ মে ডলারের বিনিময় মূল্য ২৫ পয়সা বাড়িয়ে ৮৬ টাকা ৭০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে প্রতিনিয়ত ডলার বিক্রি করছে। আর ডলারের চাহিদা বেশি হওয়ায় ধীরে ধীরে দাম বাড়াচ্ছে। এভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। যদিও অর্থনীতিবিদদের অনেকে ডলারের দাম চাহিদা-জোগানের ওপর ছেড়ে দেওয়ার পক্ষপাতী।
আন্তর্জাতিক বাজারে ভোগ্যপণ্য, কাঁচামাল ও তেলের দাম থেকে শুরু করে জাহাজের ভাড়াও বেড়ে যাওয়ায় আগের চেয়ে আমদানি ব্যয় প্রায় ৪৪% বেড়েছে। তবে আমদানি বাড়লেও রপ্তানি সে হারে না বাড়ায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর গিয়ে চাপ পড়ছে।
আবার প্রবাসী আয়ও কমে যাওয়ার প্রভাবে প্রতি মাসে ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। এ কারণে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করে আমদানির খরচের জোগান দিতে হচ্ছে।
বর্তমানে দেশে রিজার্ভ রয়েছে ৪,২০০ কোটি মার্কিন ডলার। এ রিজার্ভ দিয়ে সাড়ে পাঁচ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। আবার আমদানি খরচ এভাবে বাড়তে থাকলে রিজার্ভ আরও কমে যাবে। আবার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের চাপ রয়েছে রিজার্ভের হিসাব সঠিক নিয়মে করার। সেটি করতে গেলে রিজার্ভের অর্থে গঠিত রপ্তানিকারকদের ঋণ তহবিল, সরকারি প্রকল্প ও শ্রীলঙ্কাকে দেওয়া ঋণ এবং সোনালী ব্যাংকে রাখা আমানত রিজার্ভের হিসাব থেকে বাদ দিতে হবে। এতে রিজার্ভ কমবে ৭০০ কোটি ডলারের বেশি।
ব্যাংকারদের ভাষ্য, ঈদের কারণে দেশে ভালো প্রবাসী আয় এসেছে। তবে আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় প্রবাসী আয় ও রপ্তানি আয় দিয়ে সেই খরচ মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে ডলার নিয়ে দেশের মুদ্রাবাজারে এখন অস্থিরতা বিরাজ করছে। শিগগিরই এ সংকট কমার কোনো লক্ষণ নেই।
এ সংকটের পুরো প্রভাবটাই পড়ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে গচ্ছিত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে। পাশাপাশি ব্যাংক ব্যবস্থায় নগদ টাকারও সংকট দেখা দিয়েছে। কারণ, বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার বিক্রি করে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিচ্ছে। এতে চলতি হিসাবে লেনদেন ভারসাম্যেও ঘাটতি তৈরি হচ্ছে।