বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ৩০৩ কোটি টাকারও বেশি অর্থ পাচারের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চার সদস্যকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে তাদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিচারিক আদালতে হাজির করতে শাহবাগ থানাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রবিবার (২২ মে) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের এই চার আসামি হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চার সদস্য এম এ কাশেম, বেনজীর আহমেদ, রেহানা রহমান ও মোহাম্মদ শাহজাহান।
এর আগে মামলার আসামিরা জামিন আবেদন করেন। জামিন আবেদনের বিষয়ে বুধবার ও বৃহস্পতিবার (১৮ ও ১৯ মে) শুনানি গ্রহণ করেন আদালত। শুনানি শেষে রবিবার তাদের জামিন আবেদন নাকচ করেন আদালত।
আদালতে আসামিদের জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন তিন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি, এ এফ হাসান আরিফ, ফিদা এম কামাল ও মিজান সাঈদ। অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ ও এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। আর দুদকের পক্ষে ছিলেন মো. খুরশীদ আলম খান।
ক্যাম্পাসের জমি কেনা বাবদ অতিরিক্ত ৩০৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয় দেখিয়ে তা আত্মসাতের অভিযোগে দুদক গত ৫ মে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করে।
দুদকের উপ-পরিচালক মো. ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারী বাদী হয়ে এ মামলা করেন। মামলায় ট্রাস্টি বোর্ডের ওই চার সদস্য ছাড়াও চেয়ারম্যান আজিম উদ্দিন আহমেদ এবং আশালয় হাউজিং অ্যান্ড ডেভেলপার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিন মো. হিলালীকে আসামি করা হয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে পাশ কাটিয়ে ট্রাস্টি বোর্ডের কয়েকজন সদস্যের অনুমোদন/সম্মতির মাধ্যমে ক্যাম্পাস উন্নয়নের নামে ৯০৯৬.৮৮ ডেসিমেল জমির দাম ৩০৩ কোটি ৮২ লাখ ১৩ হাজার ৪৯৭ টাকা বেশি দেখিয়ে তা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, “বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলের টাকা আত্মসাতের হীন উদ্দেশ্যে কম দামে জমি কেনা সত্ত্বেও বেশি দাম দেখিয়ে তারা প্রথমে বিক্রেতার নামে টাকা প্রদান করেন। পরবর্তীতে বিক্রেতার নিকট থেকে নিজেদের লোকের নামে নগদ চেকের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করে আবার নিজেদের নামে এফডিআর করে রাখেন এবং পরবর্তীতে নিজেরা উক্ত এফডিআরের অর্থ উত্তোলন করে আত্মসাত করেন।”
“অবৈধ ও অপরাধলব্ধ আয়ের অবস্থান গোপনের জন্য উক্ত অর্থ হস্তান্তর ও স্থানান্তর মাধ্যমে মানি লন্ডারিংয়ের অপরাধও সংঘটন করেন।”
মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/১০৯/৪২০/১৬১/১৬৫ক ধারা এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ এর ৪(২)(৩) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান আজিম উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন- ২০১০ অনুযায়ী নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ বোর্ড অব ট্রাস্টিজ। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেমোরেন্ডাম অব অ্যাসোসিয়েশন অ্যান্ড আর্টিকেলস (রুলস অ্যান্ড রেগুলেশনস) অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় একটি দাতব্য, কল্যাণমুখী, অবাণিজ্যিক ও অলাভজনক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।