নাটোরের গ্রাম অঞ্চলে পথের ধারে, জঙ্গলের ভিতরে একসময় প্রচুর পরিমাণ এই গাছের জন্ম হত। এই গাছের ফুল অনেকেই খালি মুখে খেত, নাটোরের আঞ্চলিক ভাষায় কেউ ‘চুকাই’ ‘চুকা’ অথবা টকের গাছ বলে আখ্যায়িত করত, তবে মূলত গাছটির নাম “রোজেলা”।
ঔষধি গুণ সমৃদ্ধ এই গাছ, বর্তমানে চাষ করছে ভেষজ চাষী। চাষী বলছেন- অধিক লাভজনক এই ফুল উৎপাদন করলে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়া সম্ভব। আর জেলা কৃষি বিভাগ বলছেন- অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করতে রোজেলা চাষীদেরকে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।
বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বলছেন- রোজেলা চা, সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারিতা রয়েছে। শারীরিক ভাবে অনেক রোগ প্রতিরোধ করবে। তবে বাজার মূল্য বেশি হওয়ার কারণে এই চাষ কতটুকু সফলতা অর্জন করবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে অনেকের।
নাটোর সদর উপজেলা লক্ষীপুর খোলাবাড়ীয়া ইউনিয়ন‘এর কাঠালবাড়িয়া এলাকার ভেষজ চাষী মোঃ শহিদুল ইসলাম জানান, পরীক্ষামূলক ১০ কাঠা জমিতে রোজেলা চাষ করেছিলাম। উৎপাদন হয়েছে ২৫ কেজি। উৎপাদিত ফুলের বর্তমান বাজার মূল্য ১ লক্ষ টাকা। রোপণ থেকে শুরু করে বাজারজাত পর্যন্ত সর্বমোট ব্যয় হয়েছিল ১০ হাজার টাকা।
এবার আমি ১০ বিঘা জমিতে এই ফুলের চাষ করার পরিকল্পনা করছি। আমার নিজস্ব নার্সারিতে চারা উৎপাদন করছি যা ৫ টাকা মূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে। চা তৈরির নিয়মাবলী সম্পর্কে তিনি জানান, এক কাপ গরম পানিতে ৩ থেকে ৪ টি ফুল বয়েল করলেই চা তৈরি হয়ে যাবে। অন্য কিছুই প্রয়োগ করার প্রয়োজন নেই।
নাটোর সদর হাসপাতালে অবসরপ্রাপ্ত মেডিকেল অফিসার ডাঃ কালাম জানান, ‘রোজেলা চা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। শরীরে উচ্চ রক্তের চর্বি হৃদরোগের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়। রক্তচাপ কম রক্তচাপকে সহায়তা করার অন্যতম নিরাপদ এবং প্রাকৃতিক উপায় হতে পারে রোজেলা চা।
২০১০ খ্রিস্টাব্দে জার্নাল অব নিউট্রিশনে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে রোজেলা চা পান করা উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকিতে থাকা লোকেদের মধ্যে রক্তচাপকে হ্রাস করতে সহায়তা করে। রক্তচাপ কমানোর পাশাপাশি, রক্তের ফ্যাট স্তর হ্রাস করতেও সহায়তা করতে পারে।
রোজেলা চা পান করা লোকেরা ভাল কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে, মোট কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস পেয়েছে। রোজেলা চা নিষ্কাশন দেহে আট প্রকারের ব্যাকটেরিয়া গুলির সাথে লড়াই করতে সক্ষম। এক্সট্রাক্ট শরীরের ওজন, মেদ, ভর সূচক এবং হিপ অনুপাত হ্রাস করতে পারে।’
নাটোরের গণমাধ্যমকর্মী মেহেদী হাসান বাবু বলেন, সাধারণত একটি চা দোকানে ৫ টাকায় কিনতে পাওয়া যায়। কিন্তু রোজেলা চা পেতে হলে কমপক্ষে ৩০ টাকা ব্যয় হবে। যা অনেকেরই সাধ্যের বাইরে। যদি বেশি বেশি ফুল উৎপাদন হয়, ১০ থেকে ১৫ টাকায় এক কাপ চা পাওয়া যায়, তবেই সাধারণ মানুষের জন্য এটা পান করা সম্ভব হবে।
নাটোর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মেহেদুল ইসলাম জানান, ‘ঔষধি গ্রামের ভেষজ চাষী শহিদুল ইসলাম পরীক্ষামূলক এই রোজেলা চা উৎপাদন করেছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তাকে সার্বিক সহযোগিতা করা হয়েছে। অন্যান্য কৃষকরা যেন লাভজনক রোজেলা চাষে আগ্রহী হয়, সে বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে কৃষকদেরকে উদবদ্ধ করা হচ্ছে।’
রোগ প্রতিরোধক ঔষধি গুণ সমৃদ্ধ এই রোজেলা চা উৎপাদনে বিস্তার ঘটুক নাটোরের আনাচে-কানাচে, স্বাস্থ্যসম্মত এই চা খেয়ে উপকৃত হোক জনসাধারণ, নাটোরের উৎপাদিত এই রোজেলা ফুল ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাক দেশসহ বহির্বিশ্বে। অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হোক নাটোরের অর্থনৈতি, এমনটাই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্ট সকলের।