মহামারি করোনাভাইরাসে বিশ্বজুড়ে এখন পর্যন্ত ৬৭ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু বায়ু দূষণসহ বিভিন্ন ধরনের দূষণের কারণে প্রতি বছরে এর চেয়ে অনেক বেশি মানুষের মৃত্যু হচ্ছে বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে।
দ্য লানসেট প্লানেটারি হেলথ জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ২০১৫ সাল থেকে শুরু করে ক্রমবর্ধমান বায়ু দূষণ ও বিষাক্ত সীসার কারণে বছরে ৯০ লাখ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। মানুষ ও পৃথিবীর স্বাস্থ্যের জন্য পরিবেশ দূষণ অস্তিত্বের হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই সঙ্গে আধুনিক সমাজের স্থায়িত্বকে তা বিপন্ন করে তুলছে। যুদ্ধ, সন্ত্রাস, ম্যালেরিয়া, এইচআইভি, যক্ষা, মাদক ও অ্যালকোহলের চেয়েও বিশ্বের জন্য এর প্রভাব মারাত্মক বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের প্রকল্প “গ্লোবাল বার্ডেন অব ডিজিস” এর ২০১৯ সালের তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করে এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন বিজ্ঞানীরা।
গবেষণা প্রতিবেদনের সহ-লেখক রিচার্ড ফুলার বলেন, ‘‘আমরা উত্তপ্ত পাত্রের ওপর বসে আছি এবং ধীরে ধীরে জ্বলছি। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন, ম্যালেরিয়া ও এইচআইভির মতো ইস্যুগুলো যতটা মনযোগ পাচ্ছে এই বিষয়টি ততটা পাচ্ছে না।’’
বিজ্ঞানীদের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত শিল্প ও নগরায়নের কারণে সৃষ্ট বায়ু দূষণজনিত মৃত্যু ৭% বেড়েছে। এর আগে ২০১৭ সালে প্রকাশিত এই গবেষণার আরেক সংস্করণে দূষণজনিত মৃত্যুর বার্ষিক সংখ্যা ছিল ৯০ লাখ। সে সময় প্রতি ছয়টি মৃত্যুর একটির জন্য দায়ী ছিল দূষণ। আর বছরে মোট আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৪.৬ ট্রিলিয়ন ডলার।
এই গবেষণা থেকে দেখা যায়, বিশ্বকে নাড়িয়ে দেওয়া করোনাভাইরাসের মহামারির চেয়েও অনেক বেশি মানুষ মারা যাচ্ছেন দূষণের কারণে।
সবশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কোভিডে এখন পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা ৬৭ লাখ। বিপর্যস্ত যেসব দেশ নতুন প্রকাশিত গবেষণা অনুযায়ী বিশ্বে জল আর অভ্যন্তরীণ বায়ু দূষণজনিত মৃত্যু কমছে। তবে আফ্রিকা ও অন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এখনও তা বড় সমস্যা হিসেবে রয়ে গেছে। শাদ, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক এবং নাইজারে এই ধরনের দূষণে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। অন্যদিকে ভারি ধাতু, কৃষিতে ব্যবহৃত রাসায়নিক আর জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে তৈরি হওয়া নির্গমণের কারণে মৃত্যু লাফিয়ে বাড়ছে।
২০০০ সালের পর থেকে এই ধরনের মৃত্যু ৬৬% বেড়েছে বলে জানিয়েছেন গবেষণার আরেক লেখক রাচায়েল কুপকা।
দূষণজনিত মৃত্যুতে শীর্ষ দশটি দেশের একটি তালিকাও দিয়েছেন গবেষকরা। দেশগুলো পর্যায়ক্রমে: ১. শাদ, ২. সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, ৩. নাইজার, ৪. সলোমোন দ্বীপপুঞ্জ, ৫. সোমালিয়া, ৬. সাউথ আফ্রিকা. ৭. উত্তর কোরিয়া, ৮. লেসোথো, ৯. বুলগেরিয়া, ১০. বুরকিনা ফাসো।