অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় আলোচিত এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদারের অবৈধ সম্পদের সন্ধানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে অভিযান চালানো হয়েছে। এতে সন্ধান মিলেছে বিপুল পরিমাণ সম্পদের। পিকে হালদারের সহযোগী সুকুমার মৃধার কাছে এই অর্থের সন্ধান মেলে।
শুক্রবার দেশটির উত্তর ২৪ পরগনার কয়েকটি এলাকাতে এই অভিযান চালানো হয়। পৃথক এসব অভিযানে পি কে হালদারের সহযোগী সুকুমার মৃধা, পৃতিশ কুমার হালদার, প্রাণেশ কুমার হালদার ছাড়াও তাদের সহযোগীদের নামে থাকা বাড়ি ও সম্পত্তিতে হানা দিয়েছে ভারতের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টোরেট (ইডি) বিভাগ।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ইডি জানিয়েছে, এসব বাংলাদেশি ভুয়া পরিচয় দিয়ে ভারতে কোম্পানিও খুলেছে এবং কলকাতার অভিজাত এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে সম্পত্তি কিনেছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোতে বলা হয়েছে, বেশ কয়েকবছর আগেই অশোকনগরে কয়েক কাঠা জায়গার উপরে এই বিলাসবহুল বাগানবাড়ি তৈরি করেন সুকুমার মৃধা। যদিও তিনি বা তার পরিবারের কেউ এই বাড়িতে থাকতেন না।
ইডি কয়েকটি অভিজাত বাড়িসহ বিপুল সম্পত্তির খোঁজ পেয়েছেন। বাড়িগুলো থেকে জমির দলিলসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক নথি উদ্ধার করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে পিকে হালদারের ২০ থেকে ২২টি বাড়ি আছে বলে প্রাথমিক তথ্য পাওয়া গেছে।
কলকাতা থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার অশোকনগর পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে সুকুমার মৃধার বিশাল বিলাসী বাড়ির সন্ধান পেয়েছে ভারতের ইডি। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, মৃধাকে তাঁরা মাছ ব্যবসায়ী হিসেবে চিনতেন। পিকে হালদার ও সুকুমার মৃধা অশোকনগরে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবেশী। ইডি ধারণা করছে, এই দু’জনের দীর্ঘদিনের যোগসাজশে এনআরবির বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে।
ভারতী পল্লি এলাকার পাশে নবজীবন পল্লিতে বিলাসবহুল বাগানবাড়ি পাওয়া গেছে পিকে হালদারের আত্মীয় প্রণব কুমার হালদারের। ঠিক তার পাশেই আরেক বিলাসবহুল বাগানবাড়ি সুকুমার মৃধার। মাছ ব্যবসায়ী পরিচয় দিলেও এলাকাবাসী সুকুমার মৃধার বিলাসী জীবন দেখে সব সময়ই সন্দেহ করত।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ইডি বলেছে, প্রশান্ত কুমার হালদার শিবশংকর হালদার নামে ভারতীয় নাগরিকত্ব নেন। জালিয়াতির মাধ্যমে রেশন কার্ড, ভারতীয় ভোটার পরিচয়পত্র, আধার কার্ড, পিএএনের মতো সরকারি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করে এ নাগরিকত্ব নেন তিনি। ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে তিনি ও তার সহযোগীরা ভারতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান খুলেছে বলে ইডি নিশ্চিত হয়েছে। এছাড়া কলকাতার পোশসহ ভারতের বিভিন্ন এলাকায় তারা স্থাবর সম্পত্তি কিনেছে বলেও নিশ্চিত হয়েছে।
ভারতে ইডির অভিযানে নজর রেখেছে দমন কমিশন (দুদক)। পশ্চিমবঙ্গে সুকুরমার মৃধার অবৈধ সম্পদের খোঁজে দেশটির সরকারি তদন্ত সংস্থার অভিযানের খবর আসার পর এ বিষয়ে নজর রাখছে দুর্নীতি প্রতিরোধকারী প্রতিষ্ঠানটি। এ বিষয়ে কমিশনের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘বিষয়টির ওপর আমরা তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখছি, আমরা গুরুত্ব সহকারে দেখছি।’
খুরশীদ আলম খান বলেন, এই অভিযানে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ যদি পাওয়া যায় এবং ভারত সরকার তা নিশ্চিত করে, তাহলে সেসব অর্থ বাংলাদেশের আদালতের মাধ্যমে জব্দ হবে এবং তা বাংলাদেশে ফিরে আনার আইনি সুযোগ আছে।’
তবে দুদকের কোনো অভিযোগ বা আবেদনের প্রেক্ষিতে ইডি এ অভিযান করছে কি না তা নিশ্চিত করতে পারেননি এই কর্মকর্তা।
এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদার ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে হাজার কোটি টাকা অর্থ আত্মসাৎ ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এ পর্যন্ত মোট ৩৪টি মামলা করেছে দুদক। এগুলোর মধ্যে একটির অভিযোগপত্র আদালতে দাখিলও করেছে দুদক। সেই সঙ্গে আরও তিনটি অভিযোগপত্র কমিশনের অনুমোদনের জন্য অপেক্ষায় রয়েছে।
মামলায় আসামিদের মধ্যে ১৩ জনকে গ্রেফতার ও রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এরমধ্যে ১১ জন আসামি আদালতে নিজের দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। বাকি ৬৪ জনের বিদেশ যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে আদালতে।
এছাড়া এখন পর্যন্ত আলোচিত এই অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পি কে হালদারের ৮৩ সহযোগীর ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা মূল্যের জমি, বাড়ি, ফ্ল্যাটসহ অন্যান্য স্থাবর সম্পদ ক্রোক করা হয়েছে।