গত বছরের তুলনায় এ বছরে বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানি বেড়েছে। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে জনশক্তি রপ্তানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২২৬% বেড়েছে।
বিএমইটি এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে ৪ লাখ ২৬ হাজার ৫৫৮ জন কর্মী গেছে। গত বছর একই সময়ে এ সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৮১ হাজার ৪০ জন।
বাংলাদেশি শ্রমিকদের সবচেয়ে পছন্দের গন্তব্য সৌদি আরব। বাংলাদেশ থেকে গত ৪ মাসে দেশটিতে গেছেন ২ লাখ ৬৮ হাজার ৫৮৪ জন শ্রমিক, যা মোট জনশক্তি রপ্তানির ৬৩%।
শ্রম রপ্তানিতে এর পরের স্থানটি ওমানের। ২০২২ এর জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সেখানে ৫৬ হাজার ৮৩০ জন বাংলাদেশি শ্রমিক গিয়েছেন, যা মোট সংখ্যার ১৩.৩২%। তালিকার তৃতীয় স্থানে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। সেখানে এ সময়ের মধ্যে গেছেন ৫১ হাজার ৫৩১ জন বাংলাদেশি কর্মী, যা মোট সংখ্যার ১২%।
এছাড়া, গত চার মাসে বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুরে ১৩ হাজার ৫৬৪ জন (৪.৩৬%) সহ। জর্ডানে ৬ হাজার ৬৫৪ জন (১.৫৬%), কাতারে ৬,২৪১ জন (১.৩৯%), কুয়েতে ৩,১৬৭ জন (০.৬১%), ইতালিতে ৪৪৩ জন (০.১০%) এবং যুক্তরাজ্যে ১০১ জন (০.০২%) শ্রমিক গেছেন।
বাংলাদেশ থেকে ২০১৭ সালে ১০ লাখ ৮ হাজার ৫২৫ জন শ্রমিক বিদেশে গিয়েছিল, যা ৫০ বছরের মধ্যে এক পঞ্জিকাবর্ষে সর্বোচ্চ।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক পরিচালক এস এম জিল্লুর রহমান বলেন, “বর্তমানে প্রতি বছরে বাংলাদেশ প্রায় ১২-১৩ লাখ কর্মী বাইরে রপ্তানি করতে পারে। এভাবে চললে বিদেশে জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে দেশের সর্বোচ্চ রেকর্ডটি পেছনে ফেলা সম্ভব।”
২০১৮ ও ২০১৯ সালে বাংলাদেশ থেকে যথাক্রমে ৭ লাখ ৩৪ হাজার ১৮১ জন এবং ৭ লাখ ১৫৯ জন শ্রমিক কাজের জন্য দেশের বাইরে গিয়েছিল।
এদিকে, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ সম্প্রতি জানান, মালয়েশিয়া তিন বছর পর শ্রমবাজার উন্মুক্ত করেছে বলে বাংলাদেশ সরকার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা বজায় রাখবে। বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) কনভেনশন মেনে অভিবাসন খরচ ন্যূনতম পর্যায়ে রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে কোনো সিন্ডিকেটকে অনুমতি দেওয়া হবে না।
মালয়েশিয়া সরকার এ বছর প্রায় ৬ লাখ বিদেশি কর্মী নিয়োগ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ তার মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক শ্রমিক রপ্তানিতে কাজ করছে বলেও জানান তিনি।
১৯৭৬ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে মালয়েশিয়ায় মোট ১০,৫৭,২২৩ জন কর্মী পাঠিয়েছিল বাংলাদেশ। ২০১৮ সালে এদেশ থেকে ১,৭৫,৯২৭ জন শ্রমিক সেদেশে গেলেও ২০১৯, ২০২০ ও ২০২১ সালে সংখ্যাটি ছিল যথাক্রমে মাত্র ৫৪৫, ১২৫ ও ২৪। ২০২২ সালে জানুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে দেশটিতে ৩৪ জন কর্মী পাঠানো হয়।
বিএমইটি’র তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭৬ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে দক্ষ-অদক্ষ মিলিয়ে মালয়েশিয়ায় ১০ লাখ ৫৭ হাজার ৫৬ জন কর্মী পাঠিয়েছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির এক সদস্যের ভাষ্যমতে, সাম্প্রতিক সময়ে মহামারির প্রাদুর্ভাব কমে আসায় এবং অনেক দেশের শ্রমবাজার উন্মুক্ত হওয়ায় সরকারে উচিত বিদেশে জনশক্তি রপ্তানি বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া।
সংস্থাটির সাবেক মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী জানান, সংযুক্ত আরব আমিরাত বাংলাদেশিদের জন্য তার শ্রমবাজার উন্মুক্ত দিয়েছে এবং আগামী বছর উপসাগরীয় এই বাজারে জনশক্তি রপ্তানি ৫০ হাজারে পৌঁছাতে পারে।