রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলামের তিন স্বজনকে জরিমানা করে বরখাস্ত হওয়া ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরিদর্শক (টিটিই) মো. শফিকুল ইসলামকে কাজে বহাল করা হয়েছে।
পশ্চিমাঞ্চলীয় পাকশী রেলওয়ে বিভাগের ব্যবস্থাপক শহীদুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
শহীদুল ইসলাম বলেন, “আমি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে শফিকুলকে কাজে বহাল করেছি। গণমাধ্যমে যেসব বিষয় উঠে এসেছে, সেগুলোর তদন্ত চলবে। ১১ মে পর্যন্ত তদন্ত চলবে। যারা দোষী সাব্যস্ত হবেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তিনি বলেন, “সরাসরি শফিকুল ইসলামকে বরখাস্ত না করে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হলে ভালো হতো। এ ক্ষেত্রে যে কর্মকর্তা তাকে বরখাস্ত করেছেন, সেই কর্মকর্তা যদি কারও দ্বারা প্ররোচিত হয়ে ঘটনা ঘটিয়ে থাকেন; তাহলে তাঁর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এর আগে, আত্মীয় পরিচয় দিয়ে বিনা টিকিটে ট্রেনে ভ্রমণ করার ঘটনায় টিটিই শফিকুল ইসলামের বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করা হবে বলে জানিয়েছিলেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন।
রবিবার সচিবালয়ের বাইরে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন।
একইসঙ্গে পাকশীর বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) নাসির উদ্দিনকে শোকজ করা হবে বলেও জানান তিনি।
রেলের একাধিক সূত্রে জানা যায়, গত ৫ মে ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন স্টেশন থেকে তিন যাত্রী বিনা টিকিটে খুলনা থেকে ঢাকাগামী আন্তঃনগর সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনে উঠেছিলেন। বিনা টিকিটে এসি কেবিনে ঢাকা যাওয়ার সময় কর্তব্যরত টিটিই শফিকুল ইসলাম তাদের টিকিট দেখতে চাইলে তারা রেলমন্ত্রীর আত্মীয় বলে নিজেদের পরিচয় দেন।
টিটিই শফিকুল ইসলাম বিষয়টি নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে পাকশী বিভাগীয় রেলের সহকারী বাণিজ্যিক কর্মকর্তা নুরুল আলমের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি সর্বনিম্ন ভাড়া নিয়ে এসি টিকিট না করিয়ে সাধারণ কোচের টিকিট কাটার পরামর্শ দেন।
এসিওর পরামর্শ অনুযায়ী টিটিই তাদের ৩৫০ টাকা জনপ্রতি হিসেবে ১০৫০ টাকা নিয়ে তিনটি সুলভ শ্রেণির নন-এসি কোচে সাধারণ আসনের টিকিট দেন। এ সময় ট্রেনে কর্তব্যরত অ্যাটেনডেন্টসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরিদর্শক (টিটিই) শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়া মো. ইমরুল কায়েস রেলমন্ত্রীর স্ত্রী শাম্মী আক্তারের মামাতো বোন ইয়াসমিন আক্তারের ছেলে।
ইমরুল কায়েসদের বাড়ি ঈশ্বরদী উপজেলা সদরের নূর মহল্লায়। ভ্রমণের দিন তার সঙ্গে আরও ছিলেন, শাম্মী আক্তারের মামাতো ভাই ফারুক হোসেন ও হাসান আলী। ইমরুল কায়েস নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পাস করেছেন। বর্তমানে তিনি একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে কর্মরত।
ইমরুল কায়েস প্রান্তের মা ইয়াসমিন আক্তার নিপা জানান, রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনের স্ত্রী শাম্মী আক্তার মনির ফোনের পরই ট্রেনের ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরীক্ষক (টিটিই) বরখাস্ত হন।
নিপা আক্তার সংবাদমাধ্যম সমকালকে বলেন, “ছেলের সঙ্গে টিটিই অসদাচরণ করলে ফোন করে তা আমার ফুফাত বোন শাম্মীকে জানাই। টিটিইকে বদলি করে দিতে বলি। সঙ্গে সঙ্গে তিনি রেলের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তাকে ফোন করে ওই টিটিইকে বরখাস্ত করতে বলেন। এরপরই টিটিই বরখাস্ত হন।”
ইমরুল কায়েসের মা ইয়াসমিন আক্তার নিপা বলেন, “৫ মে রাতে টিকিট না পাওয়ায় নুরুল আলম নামের রেলওয়ের এক সহকারী বাণিজ্যিক কর্মকর্তাকে (এসিও) ফোন দেন শাম্মী আক্তার। রেলমন্ত্রীর স্ত্রীর পরিচয় পেয়ে স্টেশনমাস্টার টিকিট করতে হবে না বলে জানান। তিনি বলেছিলেন, আপনার আত্মীয়ের টিকিট করতে হবে না। সে কারণেই ইমরুল কায়েস টিকিট ছাড়া ট্রেনে ওঠেন। পরে তাদের সম্মান দেখিয়ে এসি কামরায় বসানো হয়।”
ইয়াসমিন আক্তার আরও বলেন, “ওরা (তিন যাত্রী) একটু আরামের জন্য এসি কামরায় বসেছিলেন। ট্রেন ছাড়লে টিটি এসে ছেলেদের সঙ্গে খারাপ আচরণ শুরু করেন। তিনি ছেলেকে ‘ট্রেন কি তোর বাপের’ বলে গালি দেন। রাত তিনটার দিকে ছেলে ফোন দিয়ে এসব জানালে তারা শাম্মীকে ফোন দেন। পরিচয় পাওয়ার পরও টিটিইর এই আচরণে শাম্মী রেগে গিয়ে রেলের পাকশী বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তাকে (ডিটিও) ফোন দিয়ে টিটিইকে বরখাস্ত করতে বলেন। পরে তিনি টিটিইকে বরখাস্ত করেন”
ঘটনাটি নিয়ে সমালোচনার মুখে আত্মীয় পরিচয় দিয়ে বিনা টিকেটে রেল ভ্রমণ করা ব্যক্তিদের চেনেন না বলে জানান রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম।
এ প্রসঙ্গে ইয়াসমিন আক্তার বলেন, “ঘটনার পর রেলমন্ত্রী আমাদের চেনে না বলায় কষ্ট পেয়েছিলাম। দুপুর একটার দিকে তিনি (রেলমন্ত্রী) নিজেই ফোন দিয়েছিলেন। তিনি বলেছেন, আপা, আমি যা বলেছি, এতে মন খারাপ করবেন না। জনগণ সবাই আমার কাছে সমান। তাই বলেছি। বিষয়টা আমি দেখছি।”