রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলামের আত্মীয় পরিচয় দিয়ে বিনা টিকেটে রেল ভ্রমণ করা সেই তিন যাত্রীর পরিচয় পাওয়া গেছে। ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরিদর্শক (টিটিই) শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়া মো. ইমরুল কায়েস রেলমন্ত্রীর স্ত্রী শাম্মী আক্তারের মামাতো বোন ইয়াসমিন আক্তারের ছেলে।
ইমরুল কায়েসদের বাড়ি ঈশ্বরদী উপজেলা সদরের নূর মহল্লায়।ভ্রমণের দিন তার সঙ্গে আরও ছিলেন, শাম্মী আক্তারের মামাতো ভাই ফারুক হোসেন ও হাসান আলী। ইমরুল কায়েস নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পাস করেছেন। বর্তমানে তিনি একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে কর্মরত।
ইমরুল কায়েস প্রান্তের মা ইয়াসমিন আক্তার নিপা জানান, রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনের স্ত্রী শাম্মী আক্তার মনির ফোনের পরই ট্রেনের ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরীক্ষক (টিটিই) বরখাস্ত হন।
নিপা আক্তার বলেন, “ছেলের সঙ্গে টিটিই অসদাচরণ করলে ফোন করে তা আমার ফুফাত বোন শাম্মীকে জানাই। টিটিইকে বদলি করে দিতে বলি। সঙ্গে সঙ্গে তিনি রেলের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তাকে ফোন করে ওই টিটিইকে বরখাস্ত করতে বলেন। এরপরই টিটিই বরখাস্ত হন।”
ইমরুল কায়েসের মা ইয়াসমিন আক্তার নিপা বলেন, “৫ মে রাতে টিকিট না পাওয়ায় নুরুল আলম নামের রেলওয়ের এক সহকারী বাণিজ্যিক কর্মকর্তাকে (এসিও) ফোন দেন শাম্মী আক্তার। রেলমন্ত্রীর স্ত্রীর পরিচয় পেয়ে স্টেশনমাস্টার টিকিট করতে হবে না বলে জানান। তিনি বলেছিলেন, আপনার আত্মীয়ের টিকিট করতে হবে না।’ সে কারণেই ইমরুল কায়েস টিকিট ছাড়া ট্রেনে ওঠেন। পরে তাদের সম্মান দেখিয়ে এসি কামরায় বসানো হয়।”
ইয়াসমিন আক্তার আরও বলেন, “ওরা (তিন যাত্রী) একটু আরামের জন্য এসি কামরায় বসেছিলেন। ট্রেন ছাড়লে টিটি এসে ছেলেদের সঙ্গে খারাপ আচরণ শুরু করেন। তিনি ছেলেকে ‘ট্রেন কি তোর বাপের’ বলে গালি দেন। রাত তিনটার দিকে ছেলে ফোন দিয়ে এসব জানালে তারা শাম্মীকে ফোন দেন। পরিচয় পাওয়ার পরও টিটিইর এই আচরণে শাম্মী রেগে গিয়ে রেলের পাকশী বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তাকে (ডিটিও) ফোন দিয়ে টিটিইকে বরখাস্ত করতে বলেন। পরে তিনি টিটিইকে বরখাস্ত করেন”
ঘটনাটি নিয়ে সমালোচনার মুখে আত্মীয় পরিচয় দিয়ে বিনা টিকেটে রেল ভ্রমণ করা ব্যক্তিদের চেনেন না বলে জানান রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম।
এ প্রসঙ্গে ইয়াসমিন আক্তার বলেন, “ঘটনার পর রেলমন্ত্রী আমাদের চেনে না বলায় কষ্ট পেয়েছিলাম। দুপুর একটার দিকে তিনি (রেলমন্ত্রী) নিজেই ফোন দিয়েছিলেন। তিনি বলেছেন, আপা, আমি যা বলেছি, এতে মন খারাপ করবেন না। জনগণ সবাই আমার কাছে সমান। তাই বলেছি। বিষয়টা আমি দেখছি।”
এদিকে, এ ঘটনায় পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় কার্যালয় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। পশ্চিমাঞ্চল রেলের পাকশী বিভাগীয় সহকারী পরিবহন কর্মকর্তা (এটিও) সাজেদুল ইসলামকে কমিটির প্রধান করা হয়েছে। আগামী সোমবার (৯ মে) তদন্ত কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। রবিবার সাময়িক বরখাস্ত হওয়া টিটিই শফিকুল ইসলামকে ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে পশ্চিমাঞ্চল রেলের পাকশী বিভাগীয় কার্যালয়ে ডাকা হয়।
রেলের একাধিক সূত্রে জানা যায়, গত ৫ মে ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন স্টেশন থেকে তিন যাত্রী বিনা টিকিটে খুলনা থেকে ঢাকাগামী আন্তঃনগর সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনে উঠেছিলেন। বিনা টিকিটে এসি কেবিনে ঢাকা যাওয়ার সময় কর্তব্যরত টিটিই শফিকুল ইসলাম তাদের টিকিট দেখতে চাইলে তারা রেলমন্ত্রীর আত্মীয় বলে নিজেদের পরিচয় দেন।
টিটিই শফিকুল ইসলাম বিষয়টি নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে পাকশী বিভাগীয় রেলের সহকারী বাণিজ্যিক কর্মকর্তা নুরুল আলমের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি সর্বনিম্ন ভাড়া নিয়ে এসি টিকিট না করিয়ে সাধারণ কোচের টিকিট কাটার পরামর্শ দেন।
এসিওর পরামর্শ অনুযায়ী টিটিই তাদের ৩৫০ টাকা জনপ্রতি হিসেবে ১০৫০ টাকা নিয়ে তিনটি সুলভ শ্রেণির নন-এসি কোচে সাধারণ আসনের টিকিট দেন। এ সময় ট্রেনে কর্তব্যরত অ্যাটেনডেন্টসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
ওই তিন ট্রেনযাত্রী তাৎক্ষণিকভাবে কোনো অভিযোগ না করলেও ঢাকায় পৌঁছে রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে টিটিই শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ করেন। সেই অভিযোগ পেয়ে পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে বাণিজ্যিক কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন সংশ্লিষ্ট টিটিইকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ দেন। টিটিই শফিকুল ইসলামকে মুঠোফোনে বিষয়টি জানানো হয়।
ডিসিও নাসির উদ্দিন বলেন, “বিনা টিকিটধারী ওই তিন ট্রেনযাত্রীর সঙ্গে কর্তব্যরত টিটিই অসদাচরণ করেছেন বলে রেলের মহাপরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে মুঠোফোনে অভিযোগ করা হয়। বিষয়টি আমাকেও জানানো হলে শফিকুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।”
সাময়িক বরখাস্ত টিটিই শফিকুল ইসলাম বলেন, “বরখাস্তের বিষয়টি আমি ট্রেনে ডিউটিরত অবস্থায় মোবাইল ফোনে জানতে পেরেছি। রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দেওয়ায় আমি তাদের প্রতি সম্মান দেখিয়ে এসিওর পরামর্শ মতো ব্যবস্থা নিই। তাদের সঙ্গে কোনোরকম অসদাচরণ করিনি।”