সিলেট নগরীর রায়নগরের বাড়িতে বাবা-মায়ের কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। রবিবার (১ মে) দুপুর আড়াইটার দিকে তাকে সেখানে সমাহিত করা হয়।
এর আগে বেলা ২টায় সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে বিশাল নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার আগে পরিবারের পক্ষ থেকে দেওয়া বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এমপি বলেন, তার বড় ভাই আবুল মাল আবদুল মুহিত সারাজীবন মানুষের সেবা করে গেছেন।এ সময়ে তিনি কাউকে দুঃখ দিয়ে থাকলে সবার কাছে ছোটভাই হিসেবে ক্ষমা চান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আবুল মাল আবদুল মুহিত ভাই ছিলেন জাতির সম্পদ, একজন ভিশনারি লিডার। তার মতো সততা, আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে যাতে আমরা মানুষের মঙ্গল করতে পারি-সেই কামনা করি।”
মন্ত্রী বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার বড় ভাইকে কাজ করার সুযোগ দিয়েছিলেন। এজন্য তার প্রতিও আমরা কৃতজ্ঞ। আমাদের স্বপ্ন হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা। একটি উন্নত, সমৃদ্ধশালী, অসমাম্প্রয়িক দেশ গঠন আমাদের লক্ষ্য। যেখানে সকল লোকের অন্ন বস্ত্র বাসস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়-সেই লক্ষ্যে কাজ করছি।”
এছাড়াও জানাজার আগে, পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান এমপি, পরিবেশ ও বনমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন এমপি, সংসদ সদস্য হাফিজ আহমদ মজুমদার, আব্দুল মজিদ খান, মুহিবুর রহমান মানিক, মোকাব্বির খান ও হাবিবু রহমান হাবিব, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ বক্তব্য রাখেন।
এর আগে দুপুর ১২টা থেকে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষের মুহিতের লাশবাহী কফিনে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান।
শনিবার (৩০ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকায় গুলশান আজাদ মসজিদে প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত হয় তার ২য় জানাজা। দুপুর ১২টায় তার লাশ সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে নেওয়া হয়। এরপর দাফনের জন্য লাশ সিলেটে আনা হয়।
শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টা ৫৬ মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল বর্ষীয়ান এ অর্থনীতিবিদ। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর।
ভাষা সংগ্রামী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ছিলেন খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিক, লেখক ও পরিবেশ কর্মী। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
১৯৫৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে মাস্টার্স করার পর অক্সফোর্ড ও হার্ভার্ডে উচ্চশিক্ষা নেন মুহিত। ১৯৫৬ সালে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে যোগ দেওয়ার পর তখনকার পাকিস্তান এবং পরে স্বাধীন বাংলাদেশে সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে তিনি দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তান দূতাবাসে কর্মরত থাকার সময় তিনি বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন এবং পরে প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে জনমত গঠন করেন। এ কারণে তাকে ২০১৬ সালে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা “স্বাধীনতা পদক” প্রদান করা হয়।