প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নিতে নিজ নিজ গন্তব্যের দিকে ছুটছেন দেশের মানুষ। গত দুই বছর নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ-সংক্রান্ত নানা বিধিনিষেধের কারণে ঈদে বাড়ি ফেরা হয়নি অনেকের। এবার সেসব নিষেধাজ্ঞা না থাকায় মহামারীর আগের সময়ে ফিরেছে দেশের পথঘাট। আবারো দীর্ঘ যানজট, ফেরিঘাটে লম্বা লাইন, লঞ্চে উঠতে হুড়োহুড়ি, যাত্রীপূর্ণ ট্রেন, বাড়তি ভাড়ার অভিযোগ নিয়ে বাড়ির পথ ধরেছেন কর্মব্যস্ত মানুষ।
রাজধানী থেকে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলগামী মানুষের ঢল নেমেছে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরি ও লঞ্চঘাটে। যারা নৌযানে চেপে পদ্মা পাড়ি দিচ্ছেন, তাদের গুনতে হচ্ছে প্রায় দ্বিগুণ ভাড়া। কেবল নৌযান নয় স্থানীয়ভাবে চলাচল করে মাহিন্দ্রার মতো ছোট বাহনগুলোও ভাড়া বাড়িয়েছে কয়েক গুণ।
ঢাকা থেকে ফরিদপুরগামী যাত্রী কোহিনূর বেগম বলেন, অন্য সময় গাবতলী থেকে পাটুরিয়া ঘাটের ভাড়া নেয়া হয় ১৫০ টাকা। সেটি এখন দিতে হয়েছে ৩০০ টাকা। ঘাট পার হয়ে লোকাল বাসে ফরিদপুর যেতে ৭০ টাকার বদলে গুনতে হয়েছে ১৫০ টাকা। বাড়তি ভাড়া দিয়েও বাসের মধ্যে প্রচণ্ড গরমে দাঁড়িয়েও যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে।
অন্যদিকে যানবাহনের চাপে ফেরিঘাটে দীর্ঘ সারি তৈরি হয়েছে। দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক ধরে বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের সারি কয়েক কিলোমিটার ছাড়িয়ে যাচ্ছে। যদিও দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরিঘাটে এ মুহূর্তে ২১টি ফেরি চলাচল করছে বলে জানিয়েছেন বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) প্রফুল্ল চৌহান। তবে বেশি চাপের কারণে মাঝে মাঝেই দু-একটি ফেরি বিকল হয়ে যাচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। এগুলো মেরামত করে দ্রুত বহরে যুক্ত করে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করছেন বলেও জানান তিনি।
মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটেও ছিল বাড়িফেরা মানুষের চাপ। মূলত শুক্রবার সকাল থেকেই চাপ বাড়তে থাকে। গতকাল তা আরো বেড়ে যায়। ফেরি সংকটের কারণে এ পথে বিড়ম্বনায় পড়েন যাত্রীরা। ফেরিতে জায়গা না পেয়ে অনেক যাত্রীকে স্পিডবোটে পদ্মা পাড়ি দিতে দেখা গেছে। মানুষের ভোগান্তি লাঘবে শরীয়তপুরের জাজিরায় মাঝিরকান্দিতে নতুন আরেকটি ফেরিঘাট চালু করা হয়েছে। সব মিলিয়ে এ পথে চলছে ১০টি ফেরি। এ পথে যাত্রী পারাপার করছে ৮৫টি লঞ্চ ও ১৫০টির বেশি স্পিডবোট। তবে ফেরির অপেক্ষায় ঘাটে ছোট-বড় অসংখ্য যানবাহনকে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে লম্বা সময়। যেহেতু ঘাটে মোটরসাইকেলের চাপ বেশি, তাই এ বাহনের জন্য ঘাট নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করছেন বিআইডব্লিউটিসির শিমুলিয়া ঘাটসংশ্লিষ্টরা। এ ঘাট দিয়ে যাত্রীদের বাড়ি ফেরা নির্বিঘ্ন করতে ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি নৌপুলিশ, কোস্টগার্ড, থানা পুলিশ, আনসারসহ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা একযোগে কাজ করছেন।
অন্যদিকে এখন পর্যন্ত যানচলাচল স্বাভাবিক দেখা গেছে বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম মহাসড়কে। সেতুর টোল প্লাজা জানিয়েছে, সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় এ সেতু দিয়ে প্রায় ৪৩ হাজার যানবাহন পারাপার হয়েছে। মূলত সওজের সাসেসক-২ প্রকল্পের চলমান চার লেন সড়কের কয়েকটি স্থানে আন্ডারপাস, ফ্লাইওভার নির্মাণকাজের জন্য সয়দাবাদ-মুলিবাড়ি-নলকা সেতু হয়ে হাটিকুমরুল গোলচত্বর পর্যন্ত অংশে মহাসড়ক কিছুটা সংকুচিত হয়ে গেছে। ফলে এ অংশে পৌঁছলে যানবাহনগুলোকে বেশ চাপের মধ্যে পড়তে হচ্ছে। যানজট তৈরি না হলেও এ স্থানে গাড়িগুলো ধীরে চলছে। পুলিশ ও ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে যানচলাচল স্বাভাবিক রাখতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে সর্বোচ্চ পরিমাণ মোটরসাইকেল পারাপারের রেকর্ড হয়েছে। গতকাল দুপুর পর্যন্ত সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৭ হাজার ৯৫৯টি মোটরসাইকেল পার হয়েছে বলে জানিয়েছে সেতু কর্তৃপক্ষ, যা সেতুর ইতিহাসে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। কেবল মোটরসাইকেলের জন্য দুটি অস্থায়ী টোলবুথও চালু করা হয়েছে।