বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন ইফতার মাহফিল হবে, এই নিয়ে তুমুল উত্তেজনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। কড়া বিবৃতি প্রকাশ কর্তৃপক্ষের।
রমজান মাসে ইফতার মাহফিল নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিতর্ক দানা বেঁধেছে। তারই মধ্যে তুমুল উত্তেজনা বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএইচইউ)। একদল ছাত্রের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকায় ক্যাম্পাসের ভেতর ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছিল, যেখানে স্বয়ং উপাচার্য যোগ দিয়েছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় কেন এ কাজ করবে তা নিয়ে সরব হয় তারা। উপাচার্যের কুশপুতুল পোড়ানোর পাশাপাশি উপাচার্যের বাড়ি ঘেরাও করে হনুমান চালিশা পড়ে তারা।
বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও একাংশের মানুষ আলোচনা শুরু করে। তাদের পোস্টে একাধিক সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক কথাও উঠে আসে।
ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি বিবৃতি প্রকাশ করেন। তাতে স্পষ্ট লেখা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় ওই মাহফিলের আয়োজন করেনি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু শিক্ষক ও ছাত্র তাতে যোগ দিয়েছিলেন। এটাই বহু যুগ ধরে বিএইচইউ-এর সংস্কৃতি। ভবিষ্যতেও এই সংস্কৃতি ধরে রাখা হবে। সাম্প্রদায়িকতার ঊর্ধ্বে উঠে সকলের উৎসবে যোগ দিতে হবে।
এখানেই শেষ নয়, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের বিবৃতিতে স্পষ্ট করে দেয়, প্রতিবাদীরা যে অভিযোগ করছে, তাতে একাধিক ভুয়া তথ্য আছে।
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ওই ভুয়া তথ্য প্রচার করে আসলে সাম্প্রদায়িক উস্কানি ছড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে।
ঘটনার সূত্রপাত বিএইচইউ-এর মহিলা মহাবিদ্যালয় উইংয়ে। সেখানেই ইফতারের আয়োজন করা হয়েছিল। অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ বহু শিক্ষক এবং ছাত্রছাত্রীরা যোগ দিয়েছিলেন। তারপরেই প্রতিবাদে নেমে পড়ে হিন্দুত্ববাদী ছাত্র সংগঠনের একাংশের ছাত্ররা। উপাচার্যের বাড়ির বাইরে হনুমান চালিশা পড়তে শুরু করে তারা। উপাচার্যের কুশপুতুলও দাহ করা হয়।
এ বছর ইফতার নিয়ে দুইরকম ছবি সামনে আসছে। একদিকে চিরাচরিত সংস্কৃতি মেনে হিন্দু-মুসলিম একসঙ্গে আনন্দ করছেন- এমন চিত্র যেমন আছে, তেমনই মুসলিম অনুষ্ঠানে হিন্দুরা কেন যোগ দেবেন, এই প্রশ্নও তোলা হচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা পোস্ট ঘুরছে। তাতে হালাল মাংস, ঝটকা মাংস নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। অমুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের ইফতারে যোগ দেওয়া নিয়ে কটাক্ষ করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা বিভাগের এক ছাত্র এ প্রসঙ্গে বলেছেন, “বিএইচইউয়ের অসাম্প্রদায়িক ভাবমূর্তি আমরা নষ্ট হতে দেব না। হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির কোনো জায়গা নেই এখানে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রোক্টর ভুবন চন্দ কাপড়ি বলেছেন, “এটাই বিশ্ববিদ্যালয়ের রীতি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই পার্টির আয়োজন করেনি। কিন্তু বরাবরই তারা এই অনুষ্ঠানে যোগ দেন। অতীতে দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও এতে অংশ নিয়েছেন। এই ঐতিহ্য বন্ধ করা হবে না।”