অর্থপাচার (মানি লন্ডারিংয়ের) মামলায় গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা দুই ভাই এনামুল হক ভূঁইয়া ওরফে এনু ও রূপন ভূঁইয়াসহ সব আসামির ৭ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সোমবার (২৫ এপ্রিল) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ইকবাল হোসেন এই রায় দেন।
৬ এপ্রিল এই মামলার রায় ঘোষণার কথা থাকলেও বিচারক ছুটিতে থাকায় ভারপ্রাপ্ত বিচারক মনির কামাল রায়ের তারিখ পিছিয়ে ২৫ এপ্রিল দিন ধার্য করেন। সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারী সাইফুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও মানি লন্ডারিংয়ের ১২টি মামলার মধ্যে এটিই প্রথম রায়। এই মামলায় ১৬ মার্চ রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়।
মামলার অপর আসামিরা হলেন-মেরাজুল হক ভূঁইয়া শিপলু, রশিদুল হক ভূঁইয়া, সহিদুল হক ভূঁইয়া, জয় গোপাল সরকার, পাভেল রহমান, তুহিন মুন্সি, আবুল কালাম আজাদ, নবীর হোসেন শিকদার ও সাইফুল ইসলাম। আসামিদের মধ্যে শিপলু, রশিদুল, সহিদুল ও পাভেল মামলার শুরু থেকে পলাতক রয়েছেন। তুহিন জামিনে আছেন। অপর ৬ আসামি কারাগারে।
জানা যায়, ২০১৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানে ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের ক্যাসিনো খেলা পরিচালনাকারী এনুর কর্মচারী আবুল কালাম আজাদের বাসায় ক্যাসিনো থেকে উপার্জিত টাকা উদ্ধারের জন্য ওয়ারীর লালমোহন সাহা স্ট্রিটের বাড়ি ঘেরাও করে র্যাব। ৪র্থ তলার বাড়ির দ্বিতীয় তলা থেকে দুই কোটি টাকা উদ্ধার করে তারা।
এ ঘটনায় র্যাব-৩ এর পুলিশ পরিদর্শক (শহর ও যান) জিয়াউল হাসান ২৫ নভেম্বর ওয়ারী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় অভিযোগ করা হয়, এনু ও রূপন দীর্ঘদিন ক্যাসিনো পরিচালনার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করে আসছেন। ক্যাসিনো বিরোধী অভিযান পরিচালিত হলে তারা তাদের অপকর্ম আড়াল করার জন্য অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ গোপন করার জন্য কালামের বাসায় রেখেছিলেন।
আসামিরা জেনে-বুঝে অবৈধ প্রক্রিয়ায় উপার্জিত অর্থ আড়াল করার জন্য গোপনে কালামের কাছে রাখেন। কালাম তা গ্রহণ করে নিজের কাছে রাখেন। যা মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের অপরাধ।
মামলাটি তদন্ত করে ২০২০ সালের ২১ জুলাই ১১ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন সিআইডি পুলিশের পরিদর্শক মোহাম্মদ ছাদেক আলী। ২০২১ সালের ৫ জানুয়ারি আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করেন আদালত। মামলাটির বিচার চলাকালে আদালত ২০ জন সাক্ষীর মধ্যে ১০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন।
২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি এনু ও রূপনকে গ্রেফতার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত সংস্থা সিআইডি। গ্রেফতারের পর সিআইডি জানায়, দুই ভাইয়ের মোট ২২ জায়গায় জমি ও বাড়ি আছে। যার অধিকাংশই পুরান ঢাকা কেন্দ্রিক। এছাড়া সারা দেশে ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় ৯১টি অ্যাকাউন্টে তাদের মোট ১৯ কোটি টাকা জমা রয়েছে। দুই ভাইয়ের ব্যক্তিগত পাঁচটি গাড়িও আছে।