অজয় হোম (২ মে, ১৯১৩ — ৩০ অক্টোবর, ১৯৯২) একজন বাঙালি পক্ষীবিদ, প্রকৃতিবিদ ও বিজ্ঞান লেখক।
প্রারম্ভিক জীবন
অজয় হোমের জন্ম ১৯১৩ সালে কলকাতায়। পিতার নাম গগন চন্দ্র হোম। দাদা অমল হোম রবীন্দ্রনাথের স্নেহধন্য ও ক্যালকাটা মিউনিসিপ্যাল গেজেটের সম্পাদক ছিলেন। অজয় ছোটো থেকেই পশু-পাখির প্রতি অনুরাগী ও কৌতূহলী ছিলেন তিনি। বিদ্যাসাগর কলেজ থেকে তিনি বিজ্ঞানে স্নাতক হন।
অবদান
অজয় হোম সুদীর্ঘ চল্লিশ বছর ধরে পাখিদের নিয়ে গবেষণা করেছেন। আসাম, পশ্চিমবঙ্গ ও সুন্দরবন অঞ্চলের বন্যপ্রকৃতি ও পাখির ওপর চর্চ্চা করেছেন তিনি। শুধুমাত্র পাখি নয়, অরণ্যপ্রকৃতি ও স্থানীয় উপজাতি সম্প্রদায়ের জীবন ও সমাজ সম্পর্কে তাঁর দীর্ঘ গবেষণা ছিল। সিনেমাপত্রিকা ছায়াপথ ও বন্যপ্রাণী ও বনজ সম্পদের সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে সম্পূর্ণ নিজের উদ্যোগে প্রকাশ করতেন প্রকৃতি জ্ঞান নামে একটি পত্রিকা। তিনি বার্ডম্যান অফ বেঙ্গল নামে খ্যাত ছিলেন। বাংলা ভাষায় পাখিদের প্রজাতিগত শ্রেণী বিভাজন, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য তিনি বর্ণনা করেছেন তাঁর লেখায়। বাংলায় বিজ্ঞানসচেতনতা প্রসারে তাঁর অবদানের জন্য ১৯৮৭ সালে সায়েন্স এডুকেশন অফ বেঙ্গল তাঁকে বিশেষ সম্মানে ভূষিত করে। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে অজয় হোম পেয়েছেন অর্চনা পুরস্কার। এছাড়াও গায়ক কৃষ্ণচন্দ্র দে’র ভাই প্রভাস দে’র সঙ্গে শুরু করেছিলেন একতারা নামে একটি সঙ্গীতায়ন। আজকাল ও কিশোর জ্ঞান বিজ্ঞান পত্রিকায় নিয়মিত তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর ঘনিষ্ঠতা ছিল কালিদাস নাগ, প্রেমেন্দ্র মিত্র, লীলা মজুমদারের মতো দিকপাল সাহিত্যিকদের সাথে। রাশিবিজ্ঞানী প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশের অনুরোধে তিনি ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইন্সটিটিউটের লাইব্রেরির প্রধান লাইব্রেরিয়ানের পদে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত কাজ করেছেন। তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ বাংলার পাখি’র প্রচ্ছদ এঁকেছিলেন সত্যজিৎ রায়। বাংলার পাখি ও চেনা অচেনা পাখি এই দুটি গ্রন্থের জন্য অজয় হোমকে ১৯৯৬ সালে রবীন্দ্র পুরস্কার (মরণোত্তর) ভূষিত করা হয়। তাঁর অন্য দুটি গ্রন্থ হল বিচিত্র জীব জন্তু ও মরণ ঘুম।