সড়কের দুই লেন বন্ধ করে চলছে সংস্কার কাজ। সেইসঙ্গে ঈদে বাড়ি ফেরা যাত্রীর চাপ ও হাইওয়ে পুলিশে লোকবল সংকটসহ নানা কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার অংশে যানজটের শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
ঈদ উপলক্ষে সড়কে যানবহনের চাপ বাড়ার আগেই সড়কের সংস্কার কাজ শেষ না হলে ঈদযাত্রায় তীব্র যানজটের ভোগান্তিতে পড়ার আশঙ্কা করছেন যাত্রীরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার বারোপাড়া ও হাসানপুর এলাকায় ঢাকামুখী লেনের সংস্কার কাজ চলছে। এ কারণে চার লেনের মহাসড়কটির এক পাশে প্রায় দেড় থেকে দুই কিলোমিটারজুড়ে বন্ধ হয়ে আছে। ফলে দুই লেন দিয়ে চলছে চার লেনের গাড়ি। এমন অবস্থা চলতে থাকলে ঈদের আগে এই এলাকায় ভয়াবহ যানজট দেখা দেবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের চান্দিনার মাধাইয়া থেকে দাউদকান্দির শহিদনগর পর্যন্ত প্রায় ৪৫ কিলোমিটার এলাকায় সবচেয়ে বেশি যানজটের সৃষ্টি হয়। মাঝে মাঝে কুমিল্লার ক্যান্টনমেন্ট পর্যন্তও চলে যায় অপেক্ষমান গাড়ির সারি।
তিশা পরিবহনের চালক ইমরান হোসেন বলেন, “আমরা স্বাভাবিকভাবেই গাড়ি চালাই। মূলত যখন বিপরীত দিক থেকে ভিআইপিদের গাড়ি, মোটরসাইকেল বা অ্যাম্বুলেন্স এসে পড়লে তাদের জায়গা দিতে গিয়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। এছাড়া, থ্রিহুইলারের কারণেও গাড়ি ধীরে চালাতে হয়। আবার সড়ক দুর্ঘটনা হলেও যানজটের সৃষ্টি হয়।”
চান্দিনা এলাকার বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন ব্যবসায়িক কাজে সপ্তাহে অন্তত দুইবার ঢাকায় যাতায়াত করেন। তিনি বলেন, “সড়কের সংস্কার কাজ করার সময় একপাশ দিয়ে গাড়ি চলে আর অন্যপাশ বন্ধ থাকে। এতে করে, কিছুক্ষণ ঢাকামুখী আবার কিছুক্ষণ কুমিল্লামুখী গাড়ি পার হয়। আর লম্বা যানজটের সৃষ্টি হয়।”
এ বিষয়ে দাউদকান্দি হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহিরুল হক বলেন, “দাউদকান্দি পুরো এলাকাটিই যানজটপ্রবণ। এদিকে হুট করে উল্টো দিক থেকে কোনো গাড়ি ঢুকে গেলেই জট লেগে যায়। পুরো এলাকায় তাই আমাদের নজর রাখতে হয়। কিন্তু জনবল না থাকায় পুরো এলাকায় অল্পসংখ্যক লোক দিয়েই নজরদারি করা লাগে।”
তিনি আরও বলেন, “দুর্ঘটনা ঘটলেই বড় যানজট তৈরি হয়। আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার কাজ করতে করতে সময় বেশি লেগে যায়। এ সময়ের মধ্যেই যানজট ভয়াবহ আকার ধারণ করে। তাই জনবল বেশি থাকলে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দিতে পারতাম। আর যানজট তৈরির আগেই উদ্ধার কাজ শেষ করে ফেলতাম। এছাড়াও সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে।”
তিনি জানান, প্রতিদিন সংস্কার কাজের জন্য রাস্তার এক পাশের এক কিলোমিটার পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ থাকে। এ কারণে একপাশ একপাশ করে গাড়ি ছাড়তে হয়। তখনই বেশি জটলা হয়ে যায়।
ওসি জহিরুল হক আরও জানান, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে গত দুই বছর তেমন যানজট ছিল না। কিন্তু এ বছর যানবাহনের চাপ একটু বেশি। তাই পুলিশ আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে।
জহিরুল হক জানান, ইতোমধ্যে পুলিশ সুপারকে জনবল সংকটের কথা জানানো হয়েছে। এছাড়া, হাইওয়ে পুলিশের তিনটি টহল টিম দিন রাত মাঠে থাকবে। ঈদ উপলক্ষে বাড়ানো হয়েছে দুইটি কন্ট্রোল রুম। একটি গৌরিপুর এলাকায় আরেকটি বলদাখাল এলাকায়। গৌরিপুরের কন্ট্রোলরুমের কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে আর বলদাখালেরটি ২০ রমজানের পর কাজ শুরু করবে।
সড়ক ও জনপদ (সওজ) বিভাগের সঙ্গেও কথা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা বলেছি ২৫ রমজানেই যেন সংস্কার কাজ শেষ করা হয় এবং এই সময়টাতেও যেন একটি লেন পুরোপুরি বন্ধ না করে অন্তত একটি করে গাড়ি যাওয়ার জায়গা ছেড়ে দেয়।”
এ বিষয়ে বাস মালিক সমিতির কুমিল্লা জেলা সভাপতি তাজুল ইসলাম বলেন, “এখনও যাত্রীর চাপ বাড়েনি। স্কুল, কলেজ ও সরকারি অফিস আদালত বন্ধ ঘোষণা করলেই যাত্রীর চাপ বাড়বে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশের আর কোনো জায়গা নিয়ে চিন্তা না থাকলেও দাউদকান্দির শহিদনগর, ইলিয়টগঞ্জ, টোলপ্লাজা, গৌরিপুর এলাকা নিয়েই আমাদের দুশ্চিন্তা। এখানে এখন সংস্কার কাজ না করার অনুরোধ করা হয়েছে। আশা করছি কোনো দুর্ঘটনা না ঘটলে এবং হাইওয়ে পুলিশ ঠিকভাবে কাজ করলে আর যানজট হবে না।”