উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে হাওরাঞ্চলের নদ-নদীর পানি বাড়ছে। ঢাকার আশপাশেও নদ-নদীর পানি বাড়ছে। একাধিক বিলে পানি ঢুকতে শুরু করায় ডুবে গেছে অনেক ক্ষেতের ফসল। বাকি যা আছে, তা-ও পানিতে ডুবে যাওয়ার আশঙ্কায় আছেন কৃষকরা।
তবে পানি বাড়লেও ঢাকার আশপাশে বন্যা পরিস্থিতি অবনতির শঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে হাওরাঞ্চল বেষ্টিত এলাকায় নদ-নদীর পানি বাড়ছে। এ কারণে ঢাকার আশপাশের নদ-নদীর পানিও বাড়ছে। সামনের কিছুদিন পানি বাড়া-কমার মধ্যে থাকবে। আরো কিছুদিন পর পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যাবে। তবে আপাতত বড় ধরনের পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কা নেই। ’
গতকাল বন্যার পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সিলেট জেলার নদ-নদীর পানি কমছে। অন্যদিকে সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা ও হবিগঞ্জ জেলার নদ-নদীর পানি বাড়ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টা সিলেটের নদ-নদীর পানি কমতে থাকবে এবং বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। একই সময় সুনামগঞ্জের নদ-নদীর পানি ধীরগতিতে বাড়তে পারে এবং কিছু পয়েন্টে পানি বিপদসীমার কাছাকাছি অবস্থান করতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় নেত্রোকোনার প্রধান প্রধান নদ-নদীর পানি ধীরগতিতে বাড়লেও বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি হতে পারে।
বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর ও ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের গাণিতিক মডেলের তথ্যানুযায়ী, আগামী তিন দিন দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তত্সংলগ্ন ভারতের আসাম, মেঘাচল ও অরুণাচল প্রদেশে ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই।
গতকাল সন্ধ্যা ৬টা থেকে আগামী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গা এবং কিশোরগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাসহ রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ প্রবল বিজলি চমকানোসহ বৃষ্টি বা বজ্র বৃষ্টি হতে পারে।
ঢাকার পাশেই গাজীপুরের তুরাগ নদে পানি বাড়ছে। প্রতিদিন নতুন নতুন নিচু এলাকা প্লাবিত হয়ে ডুবছে জমির বোরো ধান। গতকালও মহানগরীর ইসলামপুর, কড্ডা, বাসন, লাঠিভাঙা, ইটাহাটা, কাঁঠালিয়াপাড়া, মজলিশপুর ধঞ্জয়খালী, ইসরকান্দি, পলাসোনা এলাকার কৃষককে কাঁচা ও আধা পাকা ধান কাটতে দেখা গেছে। বালু নদের শাখা ও চালাই নদী দিয়ে জেলার সবচেয়ে বড় বেলাই বিলে পানি ঢুকতে শুরু করায় হাজারো কৃষক ফসলডুবির আতঙ্কে নির্ঘুম রাত পার করছেন।
ইসলামপুর এলাকার এক কৃষক জানান, ছয় বিঘা জমিতে বোরো চাষ করেছিলেন। পাঁচ বিঘা জমির ধান ইতিমধ্যে ডুবে গেছে। বিলের মধ্যে থাকায় একমুঠো ধানও রক্ষা করতে পারেননি। বাকি এক বিঘাও ডুবুডুবু করছে। যেভাবে পানি বাড়ছে, তাতে সোমবার সকালে ওই জমির ধানও ডুবে যাবে। অথচ আর সাত দিন পর ধান কাটার কথা ছিল।
ইছরকান্দির কৃষক বেলাল হোসেন বলেন, ৩৫ বছর ধরে চাষাবাদ করছেন। এভাবে ফসল ডুবতে আগে দেখেননি। এক দিনে তিন-চার ফুট পানি বাড়ছে। অনেকে গরুর খাদ্য হিসেবে কাঁচা ধান কেটে নিচ্ছেন। ফসল ডুবে অনেক কৃষক এখন নিঃস্ব।
বেলাইপারের এক কৃষক জানান, ধারদেনা করে আড়াই বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছিলেন। ধান দিয়ে সারা বছরের খাবার, সংসার খরচ, গরুর খাবার হয়। কিন্তু বিলে পানি ওঠায় কপাল পুড়েছে তাঁর। থোড়সমান পানি উঠে গেছে। হয়তো রাত পোহালে তলিয়ে যাবে ফসল।
ফসলডুবির আশঙ্কায় কেশরিতা, বন্দান, বাড়িয়া, আমুনা, জামুনাসহ বহু এলাকার কৃষকের চিন্তায় দিন কাটছে।