পহেলা বৈশাখের টানা তিন দিনের সরকারি ছুটিতেও পর্যটক নেই কক্সবাজারে। সমুদ্র সৈকতের দুয়েকটি পয়েন্টে অল্প কয়েকজন স্থানীয়কে বিক্ষিপ্তভাবে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে। ছুটি থাকা স্বত্ত্বেও রমজান চলার কারণে এবার এমন অবস্থা দেখা দিয়েছে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।
তবে আসন্ন ঈদে বিপুলসংখ্যক পর্যটক আসতে পারে বলে ধারণা পর্যটন ব্যবসায়ীদের।
পর্যটন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ হোটেল, মোটেল, কটেজ ও রেস্টুরেন্টগুলো এক রকম অলস সময় কাটাচ্ছে। পর্যটন জোন কলাতলীর হোটেল, মোটেল এবং কটেজগুলোতেও নেই লোকজন। সৈকতের বিচ বাইক, ভ্রাম্যমাণ হকার, দোকানদার ও ফটোগ্রাফাররা এখন সাময়িক বেকার।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ৮ বছর ধরে বিচ বাইক চালিয়ে আসছেন জামাল উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘‘প্রতিবছর পহেলা বৈশাখ এলে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে লাখো পর্যটকের সমাগম হয়। কিন্তু, এই বছর তেমনটি হয়নি। এ কারণে আমরা খুব বেকায়দায়।’’
সৈকতের ফটোগ্রাফার শফিউল আলম বলেন, ‘‘পবিত্র রমজান মাস চলছে। এ কারণে সরকারি ছুটিতেও সমুদ্র সৈকতে পর্যটক নেই। কিছু সংখ্যক পর্যটক থাকলেও তারা কেউ ছবি তোলেন না। কারণ তাদের বেশিরভাগই স্থানীয়।’’
প্রতি বছর পহেলা বৈশাখে ফুল ও মালা বিক্রি করে ভালো আয় হয় আব্দুর রহিমের। তিনি বলেন, ‘‘এই বছর পহেলা বৈশাখে কোনো পর্যটক দেখা যায়নি। তবে অন্যান্য ব্যবসায়ীদের চাইতে আমার ব্যবসা কিছুটা ভালো।’’
প্রায় ফাঁকা সৈকতে দেখা মেলে ফাহিমা নামে এক পর্যটকের। মায়ের সঙ্গে কক্সবাজারে এসেছে ঢাকার ভিকারুন্নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির এই শিক্ষার্থী। তার কথায়, ‘‘শুনেছি প্রতি বছর পহেলা বৈশাখে ঘুড়ি উৎসব হয়। কিন্তু, এ বছর তেমনটি হয়নি। বৈশাখ উপলক্ষে নেই কোনো অনুষ্ঠান। এরপরও মায়ের সঙ্গে বেশ মজা করে ঘুরছি।’’
তিন দিন আগে কক্সবাজার ভ্রমণে এসেছেন চট্টগ্রামের সোহেল ও রাইসা দম্পতি। তারা জানান, ‘‘বৈশাখ উপলক্ষে কক্সবাজারে কোনো আয়োজন না থাকলে কী হয়েছে। মনোমুগ্ধকর সমুদ্র সৈকত তো রয়েছে। সত্যি বলতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত অনেক সুন্দর। তাই আমরা সুন্দর সময় কাটাচ্ছি।’’
শুধু তারাই নন। অল্পসংখ্যক যে পর্যটক এসেছেন তাদের অনেকেই বলেন, ‘‘পহেলা বৈশাখে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে নানা আয়োজনের কথা থাকলেও এবার কিছু নেই। তবে অতিরিক্ত ভিড় না থাকায় বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে ঘোরাফেরা করা যাচ্ছে।’’
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, “স্বাভাবিকভাবে রমজান মাসে পর্যটক তেমন থাকে না। এবার কিন্তু পর্যটকশূন্যতা বেশি দেখা যাচ্ছে। সব ধরনের হোটেল মোটেল ও গেস্ট হাউসে বুকিং শূন্যের কোটায়। তবে পর্যটন মৌসুম শেষ হলেও ঈদে বেশ পর্যটক আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তখন হয়তো কয়েকদিন ব্যবসা ভালো হবে।”
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, “পবিত্র রমজান মাস। হয়তো এবারের পহেলা বৈশাখে পর্যটক আসেনি। সমুদ্র সৈকত ছাড়াও বিভিন্ন বিনোদন স্পটগুলো অনেকটা ফাঁকা। তাই আমাদের ওপর চাপও কম।”