টিপকাণ্ডে অভিযুক্ত পুলিশ কনস্টেবল মো. নাজমুল তারেক বর্তমানে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) প্রটেকশন বিভাগে কর্মরত। ২০১১ সালে তিনি বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে কনস্টেবল পদে নিয়োগ পান। নাজমুল তারেকের চাকরি জীবনের এই ১১ বছরে তিনবার বাহিনী থেকে দণ্ডিত হয়েছিলেন। এর মধ্যে দুইবার গুরুদণ্ড ও একবার লঘুদণ্ড পেয়েছিলেন তিনি।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঘটনার তদন্ত চলমান রয়েছে। ঘটনাস্থলের একাধিক সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ ও অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদ, ভুক্তভোগীর বক্তব্যসহ বিভিন্ন বিষয় মাথায় রেখে চুল ছেড়া বিশ্লেষণের মধ্যদিয়ে তদন্ত কার্যক্রম চলছে। জিজ্ঞাসাবাদে নাজমুল তারেক ঘটনার যে বর্ণনা দিয়েছেন তার সঙ্গে সিসিটিভি ফুটেজ ও ভুক্তভোগী শিক্ষিকার অভিযোগের অমিল রয়েছে। সেগুলোও বিবেচনা করে পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত চলছে। তদন্তে কনস্টেবল নাজমুল তারেকের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণ হলে ডিএমপি তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে পারে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানান, ঘটনা বর্ণনায় কনস্টেবল নাজমুল তারেক উল্লেখ করেন, গত ২ এপ্রিল (শনিবার) রাজারবাগ পুলিশ লাইনে যাওয়ার উদ্দেশ্যে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে আগারগাঁওয়ের জনতা হাউজিংয়ের বাসা থেকে বের হন। তার স্ত্রী একজন অন্তঃসত্ত্বা, ওই দিন প্রচণ্ড যানজটের কারণে তিনি ফার্মগেট আনন্দ সিনেমা হলের সামনে দিয়ে মোটরসাইকেলে যোগে যাচ্ছিলেন। মোটরসাইকেলের পেছনে বসা তার স্ত্রীর পা ওই নারী শিক্ষিকার গায়ে লাগে। এতে তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়।
এদিকে অভিযোগকারী ও ভুক্তভোগী শিক্ষিকা ড. লতা সমাদ্দার বলেন, ঘটনার সময় অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য মোটরসাইকেলে একা বসা ছিলেন। তার সঙ্গে অন্য কেউ ছিলেন না। ওই দিন আমি সকালে ওই রাস্তা দিয়ে কলেজের যাওয়ার সময় হঠাৎ একজন বলে ‘টিপ পরছোস কেন’। তারপর বাজে গালি দেন আমাকে। আমি পাশে তাকিয়ে দেখি পোশাক পরা একজন পুলিশ সদস্য। আর তিনি আমার দিকে খারাপ ইঙ্গিতপূর্ণভাবে তাকিয়ে আছেন। তখন আমি প্রতিবার করলেও আশপাশের কেউ এগিয়ে আসেনি। হয়তো পুলিশ সদস্য বলে কেউ ভয়ে এগিয়ে আসেনি।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, কনস্টেবল নাজমুল তারেকের আগাওগাঁওয়ের জনতা হাউজিংয়ের বাসা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত একাধিক সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে দেখা হয়েছে। তবে ওইসব সিসিটিভি ফুটেজে তাকে মোটর সাইকেলে একাই দেখা গেছে। সঙ্গে তার স্ত্রী ছিলেন না। তবে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগ ও প্রটেকশন বিভাগের কর্মকর্তারা যৌথভাবে তদন্ত করে জানা গেছে, তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিকানা সঠিক রয়েছে।
এ বিষয়ে, জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেসন্স বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন বলেন, খুব গুরুত্বের সঙ্গে ঘটনার তদন্ত চলছে। অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যকে শনাক্ত করা হয়েছে। ঘটনাস্থল ও আশপাশের বিভিন্ন সিসিটিভি ক্যামেরা বিশ্লেষণ করে দেখা হচ্ছে। তদন্ত কার্যক্রমে কোনো গাফিলতির সুযোগ নেই। আশা করছি, শিগগিরই ঘটনা উন্মোচিত হবে।
প্রসঙ্গত, গত ২ এপ্রিল (শনিবার) সকালে রাজধানীর গ্রিন রোডের বাসা থেকে কলেজে যাওয়ার পথে কপালে টিপ পরায় পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে লাঞ্ছনার শিকার হওয়ার অভিযোগ করেন তেজগাঁও কলেজের শিক্ষিকা ড. লতা সমাদ্দার। তার দাবি, হেঁটে কলেজের দিকে যাওয়ার সময় হুট করে পাশ থেকে মধ্যবয়সী, লম্বা দাড়িওয়ালা একজন- ‘টিপ পরছোস কেন’ বলেই বাজে গালি দেন তাকে। ওই মধ্যবয়সী ব্যক্তির গায়ে পুলিশের পোশাক ছিল। এ সময় তিনি এ ঘটনার প্রতিবাদ জানালে ওই পুলিশ সদস্য তার পায়ের ওপর দিয়েই মোটরসাইকেল তুলে দেন। পরে এ ঘটনায় শেরেবাংলা নগর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন ভুক্তভোগী শিক্ষিকা।
এদিকে টিপকাণ্ড নিয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষিকার অভিযোগের প্রেক্ষিতে অভিযুক্ত পুলিশ কনস্টেবল নাজমুল তারেককে শনাক্ত করে তাকে সাময়িক বরখাস্ত (সাসপেন্ড) করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। ঘটনার তদন্তে দুই সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটিতে পুলিশ প্রটেকশন বিভাগের একজন অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) এবং তেজগাঁও বিভাগের একজন সহকারী কমিশনারকে (এসি) রাখা হয়েছে। তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, পুলিশ তদন্তে আন্তরিক, গাফিলতির সুযোগ নেই, এরই মধ্যে প্রমাণিত। তবে যিনি অভিযোগ করেছেন, তাকে প্রমাণ করতে হবে। আমাদের তদন্ত কমিটি কাজ করছে।
ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, কনস্টেবল নাজমুল তারেকের জন্ম ১৯৯১ সালে। এসএসসি পাসের পর তিনি ২০১১ সালে কনস্টেবল পদে নিয়োগ পান। আগে ঢাকার বাইরে তার পোস্টিং ছিল। গত ৮ মাস ধরে তিনি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) প্রটেকশন বিভাগে কর্মরত রয়েছেন।