চাঞ্চল্যকর ও বহুল আলোচিত ঢাকাই সিনেমার নায়ক সোহেল চৌধুরীর হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি আশিষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) রাত ১০টা ৫০ মিনিটে তাকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঘটনাস্থলে অবস্থান করা র্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য ছিল। সেই তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বাসাটিতে অভিযান চালানো হয়। পরে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানানো হবে।’
র্যাব জানায়, আশীষ রায় চৌধুরী চিত্র নায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার ১ নম্বর আসামি। তিনি একাধিক বেসরকারি এয়ারলাইনসের ঊর্ধ্বতন পদে ছিলেন। সর্বশেষ তিনি জিএমজি এয়ারলাইনসের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) ছিলেন। গ্রেপ্তারের সময় আশিষ রায়ের বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ মাদক জব্দ করা হয় বলেও র্যাব জানিয়েছে।
এর আগে রাত ১০টা থেকেই আশিষকে গ্রেপ্তারের অভিযানে গুলশানের একটি বাড়ি ঘিরে রাখার কথা জানিয়েছিলেন র্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের সহকারী পরিচালক এএসপি আ ন ম ইমরান খান।
আদালত সূত্র জানায়, বনানীর ১৭ নম্বর রোডের আবেদীন টাওয়ারে ট্রাম্পস ক্লাবের নিচে ১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর সন্ত্রাসীদের গুলিতে মারা যান সোহেল চৌধুরী। ওই ঘটনায় সোহেল চৌধুরীর ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী বাদী হয়ে রাজধানীর গুলশান থানায় হত্যা মামলাটি করেন।
তদন্ত শেষে ১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার আবুল কাশেম ব্যাপারী এ মামলায় ৯ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেন।
২০০১ সালের ৩০ অক্টোবর ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের আদেশ দেন। দুই বছর পর মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য এ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। ওই সময় এক আসামি হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন।
হাইকোর্ট বিভাগের তৎকালীন বিচারপতি এমএ মতিন ও সৈয়দ রিফাত আহমদের বেঞ্চ ২০০৩ সালের ১৯ নভেম্বর ওই রিট আবেদনে প্রথমে তিন মাসের জন্য নিম্ন আদালতে মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত করেন। এর পর ২০০৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি রিটের রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মামলাটির নিম্ন আদালতের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়।
দীর্ঘ ১৯ বছর পর চলতি বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি স্থগিতাদেশ শেষে বিচারিক আদালতে নথি আসে। এরপর আদালত ২০ মার্চ এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ধার্য করেছিলেন। ২০ মার্চ ঢাকার দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনাল ২-এর বিচারক জাকির হোসেন ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই ওরফে আব্দুল আজিজসহ তিনজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত অন্য দুই আসামি হলেন- ট্রাম্পস ক্লাবের মালিক আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম ও সেলিম খান।
ওইদিন আদালতে আসামিদের উপস্থিতির জন্য ধার্য ছিল। আসামিরা উপস্থিত না হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে এ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালতে। এ মামলার আসামি শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমন ও আশিষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী শুরু থেকে পলাতক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি রয়েছে।
এ ছাড়া মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের জন্যও আজ দিন ধার্য ছিল। মামলার বাদী নিহতের ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী সাক্ষ্য দিতে আদালতে হাজির হননি।এদিন আসামি ফারুক আব্বাসী আদালতে হাজিরা দেন। এ ছাড়া আসামি আদনান সিদ্দিকী অসুস্থ থাকায় আদালতে হাজির না হওয়ায় সময়ের আবেদন করেন তার আইনজীবী মোহাম্মদ আব্দুল বাসেত রাখী। আদালত সময়ের আবেদন মঞ্জুর করেন।