ঢাকার মতিঝিলের আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপুকে হত্যার জন্য পরিকল্পনাকারীরা দেড় মাস আগে সুমন সিকদার ওরফে মুসার সঙ্গে যোগাযোগ করে। শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের ঘনিষ্ট মুসা যোগাযোগ করে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ফ্রিডম মানিকের ঘনিষ্ট শামীমের সঙ্গে। মুসার নেতৃত্বে মতিঝিলের রূপালী ক্লাবে তাদের বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে ছিলেন শামীম, দামাল এবং মোল্লা মানিক।
গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, রূপালী ক্লাবের বৈঠকে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী টিপুকে হত্যায় কিলার নির্বাচনের দায়িত্ব পড়ে শামীমের ওপর। শামীম শুটার আকাশের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আকাশের প্রেমের বিয়ে নিয়ে জটিলতা তৈরি হলে দুই পরিবারকে এক করতে সহযোগিতা করেন শামীম। বিয়ের পর আকাশের সঙ্গে তার পরিবারের যোগাযোগ ছিল না। বিশেষ করে আকাশ নানা অপকর্মে জড়ানোর পরে তাকে বাড়ি ছাড়া করেন স্কুলশিক্ষক বাবা। আকাশের এই বিষয়গুলো জানতেন শামীম।
গোয়েন্দা পুলিশের সূত্রটি বলছে, টিপুকে খুনের জন্য কিলার নির্বাচনের দায়িত্ব পেয়ে শামীম আকাশকে বাছাই করে। আকাশের বিরুদ্ধে বাসাবোর শরীফ হত্যা মামলাসহ চারটি মামলা রয়েছে। এসব মামলা নিয়ে তিনি হতাশাগ্রস্ত ছিলেন। শামীম আকাশকে কিলিং মিশন ভালো ভাবে শেষ করতে পারলে মামলাগুলো থেকে তাকে অব্যাহতির বিষয়ে আশ্বাস দেয়৷
সেই অনুযায়ী, টিপুকে হত্যার দুইদিন আগে শামীম আকাশকে নিয়ে আদালতে যান। তারা একজন আইনজীবীর সঙ্গে আকাশের মামলাগুলোর বিষয়ে আলাপ করেন। ওই আইনজীবী তাদের ধারনা দেন, চারটি মামলা শেষ করতে পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকা লাগবে। তখন শামীম আকাশকে বলেন, কিলিং মিশন শেষ করতে পারলে তাকে এই টাকা দেওয়া হবে।
গোয়েন্দা পুলিশের ওই সূত্রটি জানায়, আওয়ামীলীগ নেতা টিপু হত্যায় অস্ত্র এবং মটরসাইকেলের জোগাড় করে দেন মুসা। তবে যারা মোটরসাইকেল এবং অস্ত্র দিয়েছিল তাদেরকে চিনত না শামীম এবং আকাশ। টিপুকে হত্যার দুই থেকে তিনদিন আগে শামীম ও আকাশ রেকি করে। রেকিতে মোটরসাইকেল চালাতো শামীম আর পিস্তল নিয়ে নিয়ে পেছনে বসতো আকাশ।
গত ২৪ মার্চ রাত সাড়ে দশটার দিকে শাহজাহানপুরের আমতলা এলাকায় মতিঝিল আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপুকে গুলিতে হত্যা করা হয়। সেসময় সামিয়া আফরান প্রীতি নামে এক কলেজছাত্রীও গুলিতে নিহত হন।
চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের পরদিন টিপুর স্ত্রী ডিএসসিসির সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফারহানা ইসলাম ডলি শাহজাহানপুর থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেন। হত্যার চার থেকে পাঁচদিন আগে ফোনে টিপুকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছিল বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন তার স্ত্রী।
এই মামলায় গোয়েন্দা পুলিশ গত ২৭ মার্চ বগুড়া থেকে মাসুম মোহাম্মাদ আকাশকে গ্রেপ্তারের কথা জানায়। সোমবার তার সাত দিনের রিমান্ড শেষ হয়েছে। আগামীকাল মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) তাকে আদালতে তোলা হবে। আকাশ স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হলে তাকে দিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়া হবে বলে জানা গেছে। আকাশ ছাড়া কমলাপুর থেকে আরকানউল্লাহ দামালকেও গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। দামালও গোয়েন্দা পুলিশের রিমান্ডে রয়েছে।
এদিকে আকাশ ও দামাল ছাড়াও টিপু হত্যাকাণ্ডে আরও চারজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। গোয়েন্দা পুলিশের রিমান্ডে থাকা এই চার জন হলেন- মোহাম্মদ ওমর ফারুক, নাসির উদ্দিন ওরফে কিলার নাসির, সালেহ শিকদার ওরফে শুটার সালেহ ও মোরশেদুল আলম ওরফে কাইল্লা পলাশ।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভাষ্য মতে, ২০১৩ সালে মতিঝিল এজিবি কলোনিতে খুন হয় রিজভী হাসান বাবু ওরফে বোচা বাবু। এই বাবু হত্যা মামলায় তার বাবা আবুল কালামকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করতেন টিপু। এতে আসামিদের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম হয়। এছাড়া মতিঝিল এলাকার চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, স্কুল-কলেজের ভর্তি বাণিজ্য, বাজার নিয়ন্ত্রণ, আধিপত্য বিস্তার নিয়েও টিপুর সঙ্গে তাদের দ্বন্দ্ব-সংঘাত চলে আসছিল। এসব কারণে টিপুকে পথের কাঁটা মনে করত তাকে হত্যার পরিকল্পনাকারীরা।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মামলার তদন্ত চলছে। আমরা আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করে কিছু তথ্য পেয়েছি। এসব তথ্য যাচাই বাছাই করে দেখা হচ্ছে।’