পরপর দুই প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড় “আম্পান” ও “ইয়াস”-এর আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়ন। ভিটে-মাটি হারায় মানুষ, ভেসে যায় মাছের ঘের, সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েন অনেকেই। পুরোপুরি ভেঙে পড়ে এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা। প্রতাপনগর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে হাওলাদার বাড়ি ও দরগাহতলার আইট গ্রাম দুটি।
যাতায়াতের বহুল ব্যবহৃত রাস্তাটি ভেঙে পরিণত হয় খালে। চরম দুর্ভোগে পড়েন স্থানীয়রা। নৌকা পারাপারে প্রতিদিন অন্তত ২০ টাকা খরচ হতো শিক্ষার্থীদের। একটি মাত্র নৌকায় পার হতে হতো ৪০০ পরিবারের অন্তত দেড় হাজার মানুষকে।
স্থানীয়দের এই দুর্ভোগ লাঘবে সম্প্রতি এগিয়ে এসেছে চিকিৎসকদের পরিচালিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘‘ডু সামথিং ফাউন্ডেশন’’। সংগঠনটি দুর্গম প্রতাপনগরের হাজারো মানুষের যাতায়াতের কষ্ট দূর করতে নির্মাণ করে দিয়েছে একটি ভাসমান সেতু।
৫৬টি ড্রাম দিয়ে তৈরি ৩৫০ ফিট দৈর্ঘ্যের ভাসমান সেতুটির নির্মাণকাজ শেষে গত ২৮ মার্চ সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ শেষে ভাসমান সেতুটি পেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক সাইদুল ইসলাম বলেন, “যে জায়গায় সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে সেখানে আগে ছিল ৪০টি পরিবারের বসতভিটা, মসজিদ ও কবরস্থান। সব কিছু নদীতে বিলীন হয়ে তৈরি হয় গভীর খাল। যাতায়াতের পথ ছিল না। সেতুটি তৈরি হওয়ায় মানুষের খুব উপকার হচ্ছে।”
ডু সামথিং ফাউন্ডেশনের সভাপতি ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, “একজন রোগী যদি অসুস্থ হয়ে পড়ে তাহলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার মতো কোনো রাস্তা এখানে ছিল না। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের দৈনিক ২০ টাকা খরচ হতো নৌকায় পারাপারে। একটি মাত্র নৌকায় পার হতে হতো ৪০০ পরিবারকে। কী যে কষ্ট ছিল সেটা কেবল এই অঞ্চলের মানুষই অনুধাবন করতে পারত। মানুষের কষ্ট লাঘবে এই সেতুটি তৈরি হয়। ভাসমান সেতুটি বিছিন্ন দুটো গ্রামকে সংযুক্ত করেছে ইউনিয়নের সঙ্গে। এখন মানুষ নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারছে।”
তিনি আরও বলেন, “উপকূল অঞ্চলে জোয়ার-ভাটা হয়। এটি এমনভাবে নির্মিত যাতে পানির উচ্চতা বাড়লে সেতু উপরে ভেসে উঠবে। সব মিলিয়ে এটি মানুষের উপকারে আসবে বলে আমরা মনে করছি।”