মেসি-ডি মারিয়ার গোলে ঘরের মাঠে ‘শেষ’ উৎসব করল আর্জেন্টিনা
বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের শেষ হোম ম্যাচ। বিশ্বকাপের আগে আর্জেন্টিনার মাটিতে আর লিওনেল মেসিদের খেলা না হওয়ার পাল্লাটাই ভারি। ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে ম্যাচের আগে এমন কথাই হচ্ছিল বেশি। সেটাই যদি শেষমেশ সত্যি হয়ে যায় তাহলে ঘরের মাঠে ‘শেষ’টা নেহায়েত মন্দ হয়নি লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনার। মেসি আলো কেড়েছেন, শেষে করেছেন গোল। এর আগে পরে গোল পেয়েছেন নিকলাস গনজালেস, আনহেল ডি মারিয়ারাও। দলগত নৈপুণ্যে ঘরের মাঠে রীতিমতো উৎসবই করেছে আলবিসেলেস্তেরা। ভেনেজুয়েলাকে উড়িয়ে দিয়েছে ৩-০ গোলে।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কারণে দলের প্রধান স্ট্রাইকার লাওতারো মার্টিনেজ ছিলেন না আজকের ম্যাচে। এদিকে চার ম্যাচে নিষিদ্ধ হওয়ার কারণে ছিলেন না এমিলিয়ানো মার্টিনেজ, ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো, এমিলিয়ানো বুয়েন্দিয়া ও জিওভানি লো চেলসোরাও। ফলে শুরুর একাদশে আসে বেশ কিছু পরিবর্তন। গোলমুখে এদিন ছিলেন ফ্রাঙ্কো আরমানি। রক্ষণে নিকলাস অটামেন্ডির সঙ্গে জুটি বেধেছেন হেরমান পেজ্জেলা, ফুলব্যাক হিসেবে ছিলেন নাহুয়েল মলিনা ও নিকলাস টালিয়াফিকো। মাঝমাঠে লো চেলসোর জায়গায় এদিন এসেছেন অ্যালেক্সিস ম্যাক এলিস্টার, সাথে লিয়ান্দ্রো পারেদেস ও রড্রিগো ডি পল তো ছিলেনই।
লাওতারো না থাকায় সবচেয়ে বড় পরিবর্তন এসেছে দলের আক্রমণভাগে। লিওনেল মেসির সঙ্গে এদিন আক্রমণভাগে নামেন হোয়াকিন কোররেয়া ও নিকলাস গনজালেস। তবে মেসিকে শুরুর একাদশে সেন্টার ফরোয়ার্ড হিসেবে দেখালেও ম্যাচ গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তিনি খানিকটা নিচে নেমে এসে গড়ে দিয়েছিলেন অনেক আক্রমণ। ফলে কাগজে কলমে ৪-৩-৩ ছকে দেখালেও ম্যাচ গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তা রূপ নিয়েছিল ৪-৩-১-২, বা ৪-৪-২ ছকে।
আর্জেন্টিনা শুরু থেকেই খেলেছে আক্রমণাত্মক ফুটবল। শুরু থেকেই আলো ছড়িয়েছেন মেসি। প্রথমার্ধে বেশ কিছু আক্রমণ গড়ে দিয়েছিলেন। প্রতি ছোঁয়ায় যেন জানান দিচ্ছিলেন, ফুরিয়ে যাইনি। তার ‘সিগনেচার মুভ’ বডি ফেইন্ট, জাদুকরি ড্রিবলের দেখাও লা বম্বোনেরার দর্শকরা পাচ্ছিলেন শুরু থেকে।
৩০ মিনিটে নিজে গোল করার সুযোগ সৃষ্টি করেছিলেন। তবে সে যাত্রায় সফল হননি। তবে মিনিট পাঁচেক পর আর্জেন্টিনার প্রথম গোলটা গড়ে দিয়েছেন তিনিই। ম্যাচের ৩৫ মিনিটে মেসির গড়ে দেওয়া এক আক্রমণে বক্সের বাইরে বল পেয়েছিলেন নিকলাস গনজালেস, তবে বল শেষমেশ আয়ত্বে নিতে পারেননি, বল কেড়ে নেয় ভেনেজুয়েলা। মাঝ মাঠ থেকে ম্যাক অ্যালিস্টারের কল্যাণে বলটা একটু পরেই দখলে নেয় আর্জেন্টিনা, এরপর বলটা যায় উইংয়ে থাকা রড্রিগো ডি পলের কাছে। তার ক্রসে পা ছুঁইয়েই আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে দেন নিকলাস গনজালেস। সেই গোলে এগিয়ে থেকেই প্রথমার্ধ শেষ করে আর্জেন্টিনা।
বিরতির পর আক্রমণের ধার আরও বাড়াতে হোয়াকিন কোররেয়াকে তুলে কোচ লিওনেল স্ক্যালোনি মাঠে আনেন আনহেল কোররেয়াকে। এর কিছু পর ম্যাক অ্যালিস্টার জায়গা করে দেন বদলি হিসেবে মাঠে নামা আনহেল ডি মারিয়াকে। সেই ডি মারিয়ার কল্যাণেই আর্জেন্টিনা পেল দ্বিতীয় গোলের দেখা। ম্যাচের ৭৯ মিনিটে ডি পলের উঁচু করে বাড়ানো বলে রাইট উইং থেকে আক্রমণে উঠে আসেন ডি মারিয়া। তাকে থামাতে গোলরক্ষকও বেরিয়ে এসেছিলেন গোললাইন ছেড়ে। তবে লাভ হয়নি, তার মাথার ওপর দিয়ে লব করে আর্জেন্টিনার ব্যবধান দ্বিগুণ করেন আর্জেন্টিনার কোপা আমেরিকা জয়ের নায়ক।
বিশ্বকাপের আগে ‘শেষ’ হোম ম্যাচে লিওনেল মেসি শুরু থেকেই আলো ছড়িয়েছেন। গোলের সুযোগ গড়েছেন। তবে গোলটা না পেলে যেন উপলক্ষটা একটু ফিকেই রয়ে যেত তার জন্য। মেসি সে আক্ষেপটা ঘোচান ম্যাচের ৮২ মিনিটে। বক্সের ভেতরে ডান প্রান্তে থাকা ডি মারিয়ার লব করা পাসটা ফাঁকায় পেয়ে যান মেসি। দীর্ঘদিনের অনভ্যস্ততায় সে পাসটায় পা ছোঁয়াতে পারেননি ঠিকঠাক, তবে গোলটা ঠিকই পেয়ে যান আর্জেন্টিনা অধিনায়ক। তাতে তিন গোলে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। এরপর সেই ব্যবধান ধরে রেখেই শেষ করে ম্যাচটা।
এই জয়ের ফলে ১৬ ম্যাচে ৩৮ পয়েন্ট নিয়ে কনমেবল অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের দ্বিতীয় অবস্থানে রইল আর্জেন্টিনা। আর ১৭ ম্যাচে ১০ পয়েন্ট নিয়ে বিদায় অনেক আগেই নিশ্চিত ছিল ভেনেজুয়েলার। এই হারে তাদের বাস্তবতায় হেরফের হচ্ছে না একটুও।
চলতি মাসে নিজেদের শেষ ম্যাচে মেসির আর্জেন্টিনা নামবে আগামী ৩০ মার্চ। সেই ম্যাচে ইকুয়েডরের আতিথ্য নেবেন লিওনেল মেসিরা।