রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ইউক্রেনের ক্ষয়ক্ষতির অন্ত নেই। দেশটির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহর প্রায় রুশ সেনাদের দখলে। বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে ঠাঁই বেসামরিকরাও লাগাতার হামলার শিকার হচ্ছেন। এমনকি ইউক্রেনের বিভিন্ন সামরিক ও জ্বালানি ঘাঁটিতেও হামলা চলছে। অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহর মারিওপোলের সড়কে এখন মৃতদেহের ছড়াছড়ি।
শনিবার ইউক্রেনে প্রথমবারের মতো হাইপারসনিক ক্ষ্যাপণাস্ত্র হামলা চালানোর পর আবারো এই হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রক দাবি করেছে, তারা ইউক্রেনকে কৃষ্ণ ও কাস্পিয়ান সাগরে জাহাজ থেকে ক্রুজ মিসাইল এবং ক্রিমিয়ান আকাশসীমা থেকে হাইপারসনিক মিসাইল দিয়ে আক্রমণ করেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, মস্কো ইউক্রেনের সামরিক সম্পদ লক্ষ্য করে ক্রুজ এবং হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করার মাধ্যমে তাদের সামরিক আক্রমণকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মেজর জেনারেল ইগর কোনাশেনকভ রবিবার বলেছেন, কিনঝাল (ড্যাগার) হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রটি মাইকোলাইভের কৃষ্ণ সাগর বন্দরের কাছে কোস্তিয়ানতিনিভকায় ইউক্রেনের জ্বালানী ডিপোতে আঘাত করেছে। যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত ইউক্রেনীয় সাঁজোয়া যান মেরামত করার জন্যে কৃষ্ণ সাগরের জল কাজে লাগিয়ে তৈরি নিঝিন প্ল্যান্ট উদ্দেশ্য করে কালিবর ক্রুজ মিসাইলগুলি ছুঁড়া হয়েছিল। শব্দের ১০ গুণ গতিতে ২ হাজার কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে সক্ষম এই কিনজল ক্ষ্যাপণাস্ত্র হামলা টানা দুাইদিন করা হয়েছিল।
কোনাশেনকভ অরো বলেছেন, আকাশ-চালিত আরেকটি ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণ উত্তর জাইটোমির অঞ্চলের ওভরুচের একটি স্থাপনায় আঘাত হানে যেখানে বিদেশী যোদ্ধা এবং ইউক্রেনীয় বিশেষ বাহিনী ছিল। এর আগে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী জানিয়েছিলো, পশ্চিম ইউক্রেনের কার্পাথিয়ান পর্বতমালার ডিলিয়াটিনে একটি গোলাবারুদ ডিপো ধ্বংস করার জন্য যুদ্ধে কিনজল প্রথমবার ব্যবহার করা হয়েছিল।
কামিকাজ ড্রোন
রাশিয়া তার উন্নত অস্ত্রের জন্য বরাবরই খুব গর্ব করে। ভøাদিমির পুতিন ডিসেম্বরে বলেছিলেন, রাশিয়া হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের বিশ্বব্যাপী নেতৃত্ব দেয়ার পর্যায়ে আছে। রাশিয়ার এসব অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্রের গতি, চালচলন এবং উচ্চতা ট্র্যাক করা এবং আটকানো খুবই কঠিন। রাশিয়া ২০১৬ সালে সিরিয়ায় সামরিক অভিযানের সময় প্রথম হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছিল৷ তবে এই অত্যাধুনিক কিনঝাল ক্ষেপণাস্ত্রগুলি ২০১৬ সালে সিরিয়ায় ব্যবহৃত ক্ষেপণাস্ত্রের চেয়েও উন্নততর।
এর গতি এবং আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে অতিক্রম করার ক্ষমতার কারণে পুতিন কিনঝাল ক্ষেপণাস্ত্রকে একটি আদর্শ অস্ত্র বলে অভিহিত করে বলেন, ‘এটি পারমাণবিক ওয়ারহেড বহন করতে সক্ষম একটি ক্ষেপণাস্ত্র এবং পশ্চিমা বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দ্বারা একে সহজেই ট্র্যাক করতে পারবে না। এটি একটি অপ্রতিরোধ্য ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র।
কংগ্রেসের একটি রিপোর্ট অনুসারে, ২০০০-এর দশকের গোড়ার দিকে তার প্রচলিত প্রম্পট গ্লোবাল স্ট্রাইক প্রোগ্রামের অংশ হিসাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সক্রিয়ভাবে হাইপারসনিক অস্ত্রের বিকাশের জন্য চেষ্টা করছে যা কমপক্ষে শব্দের চেয়ে ৫ গুণ গতিতে উড়ে।