ইউক্রেনে রুশ বাহিনী অভিযানকে ‘সন্ত্রাসবাদী’ কর্মকাণ্ড বলে অভিযোগ করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদোমির জেলেনস্কি। যেসব কৌশল তারা অনুসরণ করছে, তার সঙ্গে আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের সাদৃশ্য আছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
শুক্রবার মধ্যরাতের পর এক ফেসবুক পোস্টে জেলেনস্কি বলেন, ‘রুশ আগ্রাসনকারীরা ইউক্রেনে যা যা করছে, তার সঙ্গে একমাত্র ইসলামিক স্টেটের সন্ত্রাসীদেরই তুলনা করা চলে।’
এই দিন ইউক্রেনের উপকূলীয় শহর মারিউপোলের মেয়রকে রুশ সেনারা জিম্মি করেছে বলে প্রচারিত হয়েছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে। এছাড়া শুক্রবার শহরটিতে যে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়েছিল, তা ও রুশ সেনারা মানেনি বলে অভিযোগ উঠেছে।
তবে তা সত্ত্বেও মারিওপোল থেকে ৭ হাজারেরও বেশি বেসামিরক মানুষকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে উল্লেখ করে জেলেনস্কি বলেন, ‘আমরা শুক্রবার ৭ হাজার ১৪৪ জনকে উদ্ধার করতে পেরেছি।’
রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয় মূলত পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটোকে ঘিরেই। ২০০৮ সালে কিয়েভ এই আবেদন করার পর থেকেই সম্পর্ক খারাপ হতে থাকে দু’দেশের মধ্যে।
এর মধ্যে ন্যাটো ইউক্রেনকে পূর্ণ সদস্যপদ না দিলেও ‘সহযোগী দেশ’ হিসেবে মনোনীত করার পর দ্বন্দ্বের তীব্রতা আরও বাড়ে। ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য আবেদন প্রত্যাহারে ইউক্রেনের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে গত দুই মাস রাশিয়া-ইউক্রেন সীমান্তে প্রায় দুই লাখ সেনা মোতায়েন রেখেছিল মস্কো।
কিন্তু এই কৌশল কোনো কাজে আসেনি। উপরন্তু এই দু’মাসের প্রায় প্রতিদিনই যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা অভিযোগ করে গেছে— যে কোনো সময় ইউক্রেনে হামলা চালাতে পারে রুশ বাহিনী।
অবশেষে গত ২২ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দুই ভূখণ্ড দনেতস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় রাশিয়া; এবং তার দু’দিন পর, ২৪ তারিখ ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
শনিবার অষ্টাদশতম দিনে পৌঁছেছে এই অভিযান। প্রাণ বাঁচাতে ইতোমধ্যে ইউক্রেন থেকে পালিয়ে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র পোল্যান্ড ও রোমানিয়ায় প্রায় ২০ লাখ ইউক্রেনীয় আশ্রয় নিয়েছেন। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে ইউক্রেনে সাড়ে সাড়ে ৪ শ’র বেশি বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন, তাদের মধ্যে আছে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিশুও।
শুক্রবারের ফেসবুক পোস্টে রাশিয়ার মায়েদের প্রতিও অনুরোধ জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। এ সম্পর্কে পোস্টে তিনি বলেন, ‘আপনাদের সন্তানকে বিদেশে যুদ্ধ করতে পাঠাবেন না। নিশ্চিত হোন, আপনার সন্তান কোথায়, এবং যদি আপনার মনে বিন্দুমাত্র সন্দেহ হয় যে তাকে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পাঠানো হয়েছে, সঙ্গে সঙ্গে তৎপর হোন।’