আসন্ন রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতে এবং সাম্প্রতিক দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কথা মাথায় রেখে চিনি, ভোজ্যতেল ও ছোলার ওপর থেকে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) প্রত্যাহার করেছে সরকার।
সয়াবিন তেলের ক্ষেত্রে উৎপাদন পর্যায়ে ১৫% এবং খুচরা পর্যায়ে ৫% কর প্রত্যাহার করা হয়েছে, এই সিদ্ধান্ত ৩০ জুন পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে ভোজ্যতেলের দাম লিটার প্রতি ২৫ থেকে ৩০ টাকা কমবে।
সয়াবিন তেলের অন্যতম প্রধান আমদানিকারক সিটি গ্রুপের কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, “বর্তমানে বাজারে সয়াবিন তেলের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১৬৮ টাকা এবং ঘোষিত হারে ভ্যাট প্রত্যাহার করা হলে লিটার প্রতি প্রায় ৩০ টাকা দাম কমতে পারে।”
বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি ও সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির টানা দুই বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে আ হ ম মুস্তফা কামাল চিনি, ভোজ্যতেল ও ছোলার ওপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।
মন্ত্রী বলেন, “রমজান মাসে এসব পণ্যের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় আমদানির ওপর থেকে সাময়িক সময়ের জন্য ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়েছে।”
তিনি বলেন, “নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম যাতে সহনীয় পর্যায়ে রাখা যায় সেজন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
এর আগে, আসন্ন রমজান মাসে চিনির দাম স্থিতিশীল রাখতে হ্রাসকৃত আমদানি শুল্ক সুবিধা আরও আড়াই মাস বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
৬ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের এক আদেশে এই সুবিধা ১৫ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
উল্লেখ্য, চিনি আমদানিতে ৩০% নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ ছিল। গত বছরের অক্টোবর মাসে তা কমিয়ে ২০% করা হয়। এই শুল্ক ছাড়ের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছিল ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
বৃহস্পতিবার ব্রিফিংকালে মোস্তফা কামাল আরও বলেন, “সরকার সারাদেশের এক কোটি পরিবারকে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে পণ্য সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে।”
মানুষ যাতে কষ্ট না পায় সেজন্য এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “টিসিবিকে শক্তিশালী করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কারণ এটি মানুষের দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহ করে।”
তিনি বলেন, “মানুষ যাতে সহজে পণ্য পেতে পারে সেজন্য টিসিবির কার্যক্রম ইউনিয়ন পর্যায়ে সম্প্রসারিত করা হচ্ছে।”
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “স্থানীয় উৎপাদনের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় মূল্যবৃদ্ধির চাপ সামলাতে হচ্ছে।”
এখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, “যুদ্ধের কারণে পরিবহন খরচ বেড়েছে এবং সরবরাহকারীরা পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে পণ্যের দাম আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।”
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন,“আমরা যদি টিসিবির মাধ্যমে পণ্য মানুষের কাছে পৌঁছে দিই, তাহলে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। আগামী দিনে টিসিবি আরও কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।”
এর আগে, ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে গত ৬ ফেব্রুয়ারি সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটার ৮ টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ সময় খোলা সয়াবিনের দাম লিটার প্রতি ১৪৩ টাকা, বোতলজাত সয়াবিন প্রতি লিটার ১৬৮ টাকা এবং বোতলজাত সয়াবিনের পাঁচ লিটারের দাম ৭৯৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল।
খোলা পাম তেলের দাম নির্ধারণ করা হয় ১৩৩ টাকা।
তবে ব্যবসায়ীরা সেই সিদ্ধান্ত না মেনে বাড়তি দাম আদায় অব্যাহত রাখায় সরকারের ঘোষণা কাগজে-কলমেই রয়ে গেছে।
বুধবার ঢাকার বাজারে খোলা সয়াবিন তেল খুব কম দেখা যায়। এদিন প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৭৫ টাকায় বিক্রি হয়, যা সরকার নির্ধারিত ১৪৩ টাকা থেকে ২২% বেশি এবং পাঁচ লিটারের বোতল বিক্রি হয় ৮৩০ টাকায় সরকার নির্ধারিত ৭৯৫ টাকা থেকে ৪.৪% বেশি।