দেশের অন্যতম স্থাপত্যের নিদর্শন জাতীয় সংসদ ভবন ও মুসলিম ধর্মের উপাসনালয় মসজিদগুলোতে শুটিংয়ের জন্য উন্মুক্ত করার দাবি করেছেন নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তিনি মনে করেন, এতে করে দেশের ভাবমূর্তি ও ধর্মীয় সৌন্দর্য ফুটে উঠবে।
ফেসবুকে সাম্প্রতিক এক স্ট্যাটাসে ফারুকী এর পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। উদাহরণ হিসেবে সামনে আনেন অস্ট্রেলিয়ার সিডনি শহরের অপেরা হাউজ আর হারবার ব্রিজ।
এই নির্মাতা বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়া বললে আমাদের চোখে কোন ইমেজ ভাসে? সিডনি অপেরা হাউজ আর হারবার ব্রিজ। কখনও নরমাল টাইমের ছবি, কখনও ভাসে থার্টিফার্স্ট সেলিব্রেশনের আলোকসজ্জার ছবি। সাথে সাথে আমাদের মনের মধ্যে একটা আর্কিটেকচারালি রিচ ফুর্তিবাজ দেশের পারসেপশন তৈরি হয়। আদতে এই জায়গাটা সিডনির খুব ছোট একটা অংশ। বৃহৎ সিডনি মূলত শান্ত শীতল এক কান্ট্রিসাইড। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া ভাবলে আপনার মাথায় অলস-শান্ত-শীতল কোনও জায়গা মনে না হয়ে আর্কিটেকচারালি রিচ ফুর্তির জায়গা যে মনে হয়, এটা ইমেজের ম্যাজিক। সারা দুনিয়ার পত্রিকায় এবং আপনার নিউজফিডে এতো এতো বার অপেরা হাউস আর হারবার ব্রিজের ছবি ছাপা হয়েছে এবং হচ্ছে যে আপনার মাথায় এটা গেঁথে যাচ্ছে। এখন একবার ভাবেন, অস্ট্রেলিয়া সরকার যদি আইন করে এই সব জায়গায় ছবি তোলা যাবে না বা শুটিং করা যাবে না, তাহলে কিন্তু আর এই ইমেজটা আপনার মাথায় গাঁথতো না।’
নিজ দেশ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘আমাদের একটা সংসদ ভবন আছে। যেটা সারা পৃথিবীতে একটা আইকনিক স্ট্রাকচার হিসাবে আমরা হাজির করতে পারতাম। কিন্তু আপনি সেখানে শুট করতে পারবেন না কারণ সেটা কেপিআই জোন। বিশেষ অনুমতি নিয়ে শুট করা সম্ভব যেটা অনেকের পক্ষেই পাওয়া কঠিন। তাই বলি, আপনি আপনার দেশের সেরা জায়গাগুলোতে যদি শুট না করতে দেন, তাহলে তো আপনার আফসোস করা উচিত না যে, ‘তোমরা বাংলাদেশকে প্রপারলি দেখাও না’।’’
নির্মাতা কথা বলেন, ধর্মীয় উপাসনালয়গুলো নিয়েও। বিশেষ করে মসজিদগুলোতে শুটিংয়ের অনুমতি চান। তার ভাষ্য, ‘‘আরেকটা কথা মাঝে মধ্যে শুনি। হিন্দু বা খ্রিষ্ট ধর্মের অনুষ্ঠানগুলা বাইরের ফিল্ম মেকাররা এতো সুন্দর করে তুলে ধরে, আমাদের ফিল্ম মেকাররা মুসলমানদের রিচুয়ালগুলাকে সেভাবে তুলে ধরে না। কথা সঠিক। কিন্তু যারা এই কথাগুলা বলে তাদেরকে আমি জিজ্ঞেস করি ‘আমার একটা দৃশ্যের জন্য বায়তুল মোকাররম মসজিদের ভেতরে শুট করা দরকার যেখানে দেখা যাবে হাজার হাজার লোক একসাথে জুমা আদায় করছে। একটু জোগাড় করে দিতে পারবেন?’ সাথে সাথে দেখি উনারা আমতা আমতা করতে থাকেন। আপনি মসজিদে শুট করতে দেবেন না, কিন্তু চাইবেন আপনার ধর্মের সুন্দর রিচুয়ালগুলা মানুষ জানুক, সেটা কীভাবে হবে?’’
‘ডুব’খ্যাত এই নির্মাতা আরও বলেন, ‘আপনার প্রার্থনার সুন্দর এবং পবিত্র জায়গার ছবি তুলে প্রচারের মাধ্যমে সেটার সৌন্দর্য কমে না, পবিত্রতাও কমে না। বরং অনেকের কাছে সে সৌন্দর্য পৌঁছানোর একটা রাস্তা হয়। সংসদ ভবন বা এইরকম বিশেষ স্থাপনার ছবি তুলে প্রচারের মাধ্যমে এর নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় না। আজকাল গুগল ম্যাপেই সব টার্গেট দেখা যায়। শুটিংয়ের ফুটেজ থেকে ছবি নিয়ে নিরাপত্তার প্রতি হুমকি তৈরি করতে হয় না।’’
আর এগুলো সুষ্ঠুভাবে করার জন্য ফিল্ম কমিশন গঠনের প্রস্তাবও রাখেন আলোচিত-সমালোচিত এই নির্মাতা। বলেন, ‘একটা ফিল্ম কমিশন গঠন করেন যেখানে লোকেশন সার্ভিস ডেস্ক থাকবে। যার যেখানে শুট করা প্রয়োজন সেটা উল্লেখ করে ঐ কমিশনে আবেদন করবে। সাথে নির্ধারিত ফি-ও জমা দিবে। এবং তিন কার্য দিবসের মধ্যে তাদের অনুমতি দিয়ে দেওয়া হবে। সাথে ধরিয়ে দিতে পারেন লোকেশন স্পেসিফিক নিয়ম কানুন। ব্যস, সব কিছু সুন্দর একটা সিস্টেমে চলে আসলো। সারা পৃথিবীতেই এই ফিল্ম কমিশন এবং লোকেশন সার্ভিস ডেস্ক আছে। দয়া করে আমাদের এখানেও এটা চালু করুন।’
সম্প্রতি বাবা হয়েছেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। স্ত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশার কোলজুড়ে ৫ জানুয়ারি ইলহাম নুসরাত ফারুকী এসেছে। তাদের বর্তমান ব্যস্ততা সন্তানকে ঘিরে।