মিয়ানমার সেনাবাহিনী বেসামরিক মানুষ খুন করেছে, মানব ঢাল হিসেবেও তাদের ব্যবহার করা হয়েছে। পূর্বাঞ্চলীয় কারেন্নি রাজ্যে সেনাবাহিনীর এসব ধারাবাহিক সহিংসতা যুদ্ধাপরাধ বলে গণ্য করা যেতে পারে বলে জানিয়েছে প্রখ্যাত মানবাধিকার গ্রুপ ফোর্টিফাই রাইটস। মঙ্গলবার মিয়ানমারভিত্তিক মানবাধিকার গ্রুপটির নতুন এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে।
মানবাধিকার গ্রুপটি বলেছে তারা কারেন্নি রাজ্যের চার্চ, আবাসিক বাড়ি, বাস্তুচ্যুত মানুষের শিবির এবং অন্যান্য বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলার তথ্য সংগ্রহ করেছে। ২০২১ সালের মে মাস থেকে শুরু করে ২০২২ সালের জানুয়ারির মধ্যে এসব হামলা হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে অন্তত ৬১ বেসামরিককে হত্যা করা হয়েছে।
দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ান সদস্যদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকের আগে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ফোর্টিফাই রাইটস। মিয়ানমারে গণতন্ত্র ফেরাতে গত বছরের এপ্রিলে আসিয়ানের সঙ্গে পাঁচ দফা সম্মতিতে রাজি হয় সেনাবাহিনী। তবে ওই দফাগুলো বাস্তবায়নে অগ্রগতি না হওয়ার মধ্যে কম্বোডিয়ায় বৈঠকের প্রস্তুতি নিচ্ছে আসিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা।
ফোর্টিফাই রাইটস বলছে, মিয়ানমারের ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞায় আসিয়ানের সমর্থন দেওয়ার এখনই সময়। ফোর্টিফাই রাইটস এর আঞ্চলিক পরিচালক ইসমাইল ওলফ বলেন, ‘বিশ্ব বাজারে উৎপাদিত অস্ত্র দিয়ে মানুষ খুন করছে মিয়ানমার জান্তা আর সেটা অবশ্যই থামাতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘বেসামরিক মানুষের ওপর আক্রমণ চালানোর আগে মিয়ানমার জান্তাকে দ্বিতীয়বার ভাবতে বাধ্য করতে স্পষ্ট এবং সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ প্রয়োজন। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে অবশ্যই মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা জরুরিভাবে আরোপ করতে হবে আর আসিয়ানের জন্য কৌশলগত ও দায়িত্ববান অবস্থান হবে এতে সমর্থন দেওয়া।’
ফোর্টিফাই রাইটস এর প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করা হয়েছে ৩১ জন প্রত্যক্ষদর্শী এবং বেঁচে যাওয়া মানুষের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে। এছাড়া যাচাই করা ছবি ও ভিডিও প্রমাণ বিশ্লেষণ করেছে তারা।
ওই প্রতিবেদনে এইচপ্রসু টাউনিশিপে বড়দিনের আগের সন্ধ্যায় এক হত্যাকাণ্ডের নতুন বিস্তারিত তথ্য জানানো হয়েছে। ওই ঘটনায় শিশু এবং সেভ দ্য চিলড্রেনের দুই কর্মীসহ অন্তত ৪০ বেসামরিক নিহত হয়। নিহতদের ময়না তদন্ত পরিচালনাকারী এক চিকিৎসক বলেছেন, কয়েকটি মরদেহ এমনভাবে পুড়ে যায় যে সেগুলোর ময়না তদন্ত করা যায়নি। তবে তাদের দলটি পাঁচ নারীর মরদেহ শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। এদের মধ্যে এক মেয়ের বয়স ছিল ১৫ বছর।
ওই চিকিৎসক ফোর্টিফাই রাইটসকে বলেন, ‘কয়েক জনের মুখ কাপড়ে বাধা ছিল, সেকারণে আমরা নিশ্চিত ছিলাম এসব মানুষের শ্বাসরোধ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, প্রায় সবকটি মাথার খুলি ভাঙা ছিল আর এতো বাজেভাবে ভাঙা যে… আমরা যথেষ্ট প্রমাণ সংগ্রহ করতে পেরেছি তাদের জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছে।’
সূত্র: আল জাজিরা