যে আকাশের কথা
যে আকাশের কথা বলো তুমি,
আমি তার উপর দিয়ে উড়ে যেতে গিয়ে
শীতার্ত বরফের দুনিয়া দেখেছি।
তুমি তো বলেই ছিলে যে, শীতকাল ভালো লাগে।
আমি শীতার্ত পাখির দেশে তোমাকে চেয়েছি বলে
বারবার পরাজিত হয়েছি।
অথচ শীতরাত্রির নিদ্রার কথা তুমি যাওনি ভুলে!
তোমাকে ভালোবাসি। স্বপ্ন নাই কোনো তোমাকে ছাড়া।
তুমি প্রেমমাত্র। রাধা ও লীলা।
আমার একেলা জীবন দিয়েছি পাড় করে
নিঃসঙ্গ পাতার ওড়ার সমাহারে।
তুমি প্রেমমাত্র। লীলা ও প্রতিমা!
আমার কিছু নাই
আমার কিছু নাই যা তোমাকে দিব —
বেদনা ছাড়া। জগতের সকলে শুধায় —
লতাগুল্ম, পোকামাকড়, হাওর-সায়র-নদী-বিল
খিলখিল হেসে মিলিয়ে গেল যে —
তনুমধ্যা, সে কে
কাকে ভালোবেসে আসে সকাশে —
মানুষের মন
বেদনায় নেচে নেচে গায়
মায়ার মতন
অতল ঘুমের নিশ্চুপতায়
হারিয়ে যায় —
কোথা তবে যায় কয়লার ট্রেন
কোথা যায় প্রাণ, সমুদ্র সফেন —
হারায় অশেষে
কোন পরানের টানে
জগতের কোন অভিমানে —
খিলখিল হাসে
আমারে নেয় না সে
কাকে ভালোবাসে —
আমার কিছু নাই বেদনা ছাড়া
যা তোমাকে দিব, ভালোবাসাহারা।
আয়নার দিকে
আয়নার দিকে তাকিয়ে
তুমি যে সম্পর্ক রচনা করো
ছায়ার সাথে
সে-ও
একগাল হাসি নিয়ে
তাচ্ছিল্যে
দাঁড়িয়ে থাকে
দূরে!
সম্পর্ক
সম্পর্ক বিষাদের নাম।
বিষাদে তোমার হাসি চকচক করে।
হাসি উড়ায়ে তুমি চলে যাও দূরে।
সম্পর্কের দূরত্বের সমান
লাল ঠোঁট
নীল টিপ
সোনার অহংকার
তোমাকে উপহাস করে।
উপহাস
রিপুর সনাতন ভাইবোন
তোমাকে জড়িয়ে ধরে
উদাসীন গল্পের কথা বলে।
আমাদের গল্পগুলো কবিতার মতো
নীল;
তোমার ঠোঁটের মতো খয়েরি;
রিপুর তাড়নার সমান
লাল।
লালে লালে সম্পর্ক
উজাল।
কোনো দিক নাই
কোনো দিক নাই।
এদিকে আসো।
যেদিকে মন চায়।
এই দিকে আসো।
যে দিক তোমার দিকে
চেয়ে আছে
নিষ্পলক।
অরুণাভ।
ভালোবাসো দিক।
কেননা,দিকের ভালোবাসা
তোমার অন্তরের চেয়েও
অধিক।
তুমি আসো। এদিকে।
যে দিকে বুক পাতা আছে।
মনের দিকে।
ভালোবাসো।
প্রেম জারি রাখ।
উচাটন।
তোমার দিকে চেয়ে আছে।
মন।
আসো।
দিগ্বিদিক ভালোবাসো।
প্রত্যূষে আসিও
প্রত্যূষে আসিও।
কাছে না বসিও
থাক না দূরে
ক্ষণকাল
আমাদের সকাল
শুরু হলে সূর্য হাসে
বাঁকা
আর আঁকাবাঁকা
জীবন
জীবনের দ্বার
যত না উদার
আমাদের মন
রাখিও যতন করে
আদরে-
অনাদর মনে না দিও ঠাঁই
সকলি সাঁই বরাবর
রাখিও-
জপিও নাম তার
সকল প্রশংসা যার
নামে-
ধারণ করে আছে
তারে করিও বরণ
স্মরণ করো নাম
অনামে যে করে বাস অন্তরে
ধারণ করিয়া তারে
জারণ-বিজারণে
করিও যাপন–
আসিও প্রতূষে
অবশেষে–
একা গাছ জল পেয়ে
হাসিতে–
ছড়িয়ে দিল সকল
বাতাস
আমাদের বেঁচে থাকার
উজ্জ্বল শ্বাসপ্রশ্বাস।
তোমার দিকে
তোমার দিকে তাকালে
বিপন্ন বোধ করে তালগাছ।
যেদিকে হেলে আছ
বাতাস সে দিকে বিপজ্জনক।
ভাবছি, আগুনে ঝাঁপ দিয়ে
বাতাস মাখিয়ে গায়ে
শূন্যতার দিকে ওড়ে যাব।
তোমার মুখের রঙের মতন
বিপন্ন আর কিছু নাই।
দিকশূন্য হেলে আছে তালগাছ।
বেদনা ছাড়া
বেদনা ছাড়া কোনো স্বতন্ত্র মুখ নাই।
আয়না দেখলেই তার ভাঙ্গা টুকরার
বেদনের কথা মনে পড়ে।
মৃত্যূ এমনই, অনস্থিত্বের দিকে
মানুষের দুর্নিবার আকাঙ্ক্ষা।
মানুষ বেঁচে থাকে অতীতে
না-ভাষায়
অশব্দ দুনিয়ার বৈভবে।
কান্নার নাম তাই ঝরাপাতা
মানুষের কলিজার ভেতরে সে হাহাকার করে উড়ে।
জীবনের ওড়ার কালে
কোনো মুখ মনে পড়ে না!
কেবল ভাঙ্গা আয়নার টুকরা
খানিক ঝলসে ওঠে
হারিয়ে যায়।
তবুও আলোর ঝিলিক মানুষের
আমৃত্যু সাধন।
থমকে আছে
থমকে আছে মন। অযথাই।
যথামাত্র শীত নামে। তুমিও আড়াল হও।
লুকানো মায়ার বেদনা আছে।
তোমাকে দেখার বাসনা হয়।
অদেখা বাসনা বেদনার।
যে গাছে বহুদিন পাখি আসে না
মন খারাপ হয় তার।
সে চায় পাখি আসুক। কিচিরমিচির করুক।
ঠোঁটে ঠোঁট রেখে হাসুক।
মানুষ পাখিদের আত্মীয়। গাছেদের আত্মীয়।
শীত পড়েছে বেশ
শীত পড়েছে বেশ।
তুমি শীতকাতর
শীতার্ত শহরে একা থাক।
কুয়াশা থেকে যে প্রকারে
মুখ থেকে ধু্ঁয়া আসে
বাতাসে ভাসে
উত্তাপ ছড়ায়—
আমি তোমার মুখের স্বাতন্ত্রের দিকে
চেয়ে চেয়ে ভাবি জল
জলের উতরোল—
তুমি শীতকালে রংপুর যাও
শীতের রং কুয়াশা
তোমার মুখাবয়বে খেলা করছে
শীতপ্রেমের উত্তাপ।
দুনিয়ার জাগ্রত ফুল
দুনিয়ার জাগ্রত ফুল
কী ভুল কী ভুল
নিদ্রা তোমার
অনাঘ্রাতা—
ঘুমপাড়ানি মাসীপিসি
কোথায় লুকায়
নিদ্রা কিনা ঘুমের ভ্রাতা!
ভ্রাতা কিংবা ভগ্নি না হোক
একই কথা
চোখের ভাষায় দেখছি তাদের
একইরকম গুপ্ত গাঁথা!
হতেই পারে ঘুম না এলে
এলোমেলো ভাবনাসকল
ভবে না হোক ভাবের তলে
বসত করে অনন্যলোক!
তাই বলে কী ঘুম যাবে না
অনিদ সকাল
রাত্রি যখন নিদ্রাহারা ভাবছি বসে
তোমার আকাল।
ভালোবাসা এমনি রে
রাত্রিদিনে হরহামেশা এমনি জ্বালায়
জ্বালার তবে শান্তি আছে
আগুন পোহায় প্রাণের কালায়!
নাও
নাও
যতটুকু পার
তার ভাগটুকু দাও
আগুনের সমস্ত শিখার সমান
কার মন পুড়ে
কে কারে কতটুকু জোরে
আগুনেরে কোলে লয়ে যান!
সকলি আলো
আপনার জমকালো রূপ
যতেক স্বরূপ আজ
পথে পথে কাঙাল
রাত্রি পোহায়ে গেলে
যত ভাব ও ভাণ সব গোলমাল
নাই হয়ে যায়
নাই হয় আমার অন্তরকাল!
তখনো সকাল
তখনও হয়নি ভোর
এত ঘনঘোর আকাশ
চারদিক ঘিরে আছে
চারপাশ
যত হাঁসফাঁস মনে
কার উৎপীড়ণে মন
অকারণ মন খারাপ হয়
কার লাগি কত কথা সয়
যত অবক্ষয়
এই প্রাণ
যতেক মহান তারা থাক
কালাকাল
যত জঞ্জাল মনে আছে
তার সবটুকু হৃদয়ের কাছে রেখে
হারিয়ে যাওয়া ভালো
তোমার কালো কালো রূপ
নিশ্চেতনার আলো
খেয়েছে আমারে
খেয়েছে তোমার ভাগ
আমাদের যত প্রেম ভেসে যায়
কার প্ররোচনায়
এত এত সংরাগ!