বগুড়ায় দু’বেলা ভাতের বিনিময়ে পড়াতে চাওয়া সেই আলমগীর কবির (৩২) চাকরি পাচ্ছেন। জেলা পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে তাকে তার কার্যালয়ে ডেকে বগুড়ার স্বপ্ন আউটলেটে চাকরির আশ্বাস দেন। তবে তিনি কোন পদে চাকরি পাচ্ছেন তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
বুধবার বেলা ১২টার দিকে তাকে বগুড়া পুলিশ সুপার কার্যালয়ে ডাকা হয় আলমগীরকে।
পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী তার সঙ্গে দীর্ঘসময় কথা বলেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের জানান, বিজ্ঞাপনের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য তার সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। প্রয়োজন থাকায় তাকে বগুড়ায় স্বপ্ন সুপারশপের আউটলেটে চাকরির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তবে কোন পদে চাকরির হচ্ছে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তার যোগ্যতা অনুসারে চাকরি হবে।
পুলিশ সুপার বলেন, “তাকে বলা হয়েছে এ ধরনের বিজ্ঞাপন দেওয়া হীন মানসিকতার পরিচয়।”
এ প্রসঙ্গে আলমগীর কবির জানান, আর্থিক অনটনের কারণ তার তিনবেলা ঠিকমতো খাওয়া হচ্ছিল না। উপায় না দেখে তিনি বিজ্ঞাপনের আশ্রয় নেন।
আলমগীর কবির জানান, ফেসবুকে বিজ্ঞাপনের ছবি দিয়ে পোস্ট তিনি করেননি, এটি অন্য কারও কাজ। তার দাবি, তিনি কেবল টিউশনি পেতেই বিজ্ঞাপনটি প্রচার করেছেন। তার অন্য কোন উদ্দেশ্য ছিল না। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে অনেকে নেতিবাচকভাবে প্রচারণা চালিয়েছেন।
তবে স্থানীয়রা আলমগীর কবির সম্পর্কে ভিন্ন কথা বলছেন। টিউশনির বিজ্ঞাপন ভাইরাল হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে আলমগীরের দেওয়া বিভিন্ন সময়ের পোস্টের বেশ কিছু স্ক্রিনশটও ছড়িয়ে পড়েছে। যেগুলোর কোনোটিতে তিনি সিগারেট মুখে নিয়ে ছবি পোস্ট করেছেন, কোনোটিতে বিয়ারের ক্যান আবার কোনোটিতে নানান অঙ্গভঙ্গি করে কুরুচিপূর্ণ কথাও লিখেছেন।
আলমগীর অবশ্য দাবি করেছেন, তিনি ধূমপান করেন না। বন্ধুদের কাছ থেকে সিগারেট চেয়ে নিয়ে ছবিগুলো তুলেছেন, পোস্ট করেছেন মজা করে।
বগুড়া শহরের জহুরুলনগর এলাকার পারভেজসহ বেশ কয়েকজন জানান, আলমগীর কবির মূলত ভাইরাল হওয়ার জন্য ওই বিজ্ঞাপন দেন। তার তেমন অভাব নেই। একটি বাড়িতে বিনা পয়সায় থাকেন।
নিজের আইটি প্রতিষ্ঠানে আলমগীরকে চাকরির প্রস্তাব দেওয়া হলেও তিনি প্রত্যাখ্যান করেন বলেও জানান পারভেজ। অনেকের ধারণা, তার অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল।
এদিকে, আলমগীর নিজেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে অনার্স পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকারী হিসেবেও দাবি করেছেন। তবে সরকারি আজিজুল হক কলেজের সংশ্লিষ্ট বিষয়ের কর্তৃপক্ষ বলছেন, সারাদেশে নন, তিনি কেবল নিজের বিভাগেই প্রথম হয়েছেন।
বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী জানান, দীর্ঘদিন ধরে চাকরি না পাওয়ায় মানসিক হতাশা থেকে এমন বিজ্ঞাপনের কৌশল নিয়েছেন আলমগীর কবির।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আলমগীর কবিরের বাড়ি জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার শরাইল গ্রামে। তিনি বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। গত ১০ বছর তিনি কলেজ সংলগ্ন শহরের জহুরুলনগর এলাকায় বসবাস করেন। আগে মেসে থাকলেও গত পাঁচ বছর ধরে ঢাকায় থাকা এক ব্যক্তির চারতলা বাড়িতে থেকে সেটির দেখাশোনা করেন।
সম্প্রতি আলমগীর জহুরুলনগর ছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় “শুধুমাত্র দু’বেলা ভাতের বিনিময়ে পড়াতে চাই” লেখা পোস্টার সাঁটিয়ে দেন। এরপর সেটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। দেশের বিভিন্ন পত্রিকা ছাড়াও বিষয়টি নিয়ে বিদেশি গণমাধ্যমকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর বগুড়া পুলিশ তাকে খোঁজ শুরু করে।