সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও সাবেক পরিদর্শক লিয়াকত আলীর মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছে আদালত। সোমবার (৩১ জানুয়ারি) এই রায় ঘোষণা করা হয়। তাদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ এবার সাত দিনের মধ্যে হাইকোর্টে পাঠানো হবে।
কক্সবাজারের সিনিয়র আইনজীবী ও সিনহা হত্যা মামলার আইনজীবী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর তথ্য জানান, কোনও ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হলে আদালতের নিয়ম অনুযায়ী মামলার রায় হওয়ার সাত দিনের মধ্যে সমস্ত নথি, কেস ডায়েরি, সাক্ষী-প্রমাণাদিসহ কাগজপত্র হাইকোর্টে পাঠানো হয়। এ সময় লালসালু কাপড়ে মুড়িয়ে কাগজপত্র হাইকোর্টে পাঠানো হয়ে থাকে। নিয়মানুযায়ী প্রদীপ ও লিয়াকতের মৃত্যুদণ্ডাদেশের কপিও সেভাবে হাইকোর্টে যাবে।
তিনি বলেন, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ফাঁসির আদেশ হাইকোর্টকে অবহিত করতে হয়। হাইকোর্টকে অবহিত না করা পর্যন্ত আদেশ কার্যকর হবে না। এছাড়া আসামিপক্ষ আপিল করতে পারে। মামলার রায়ে সন্তুষ্ট না হলে উচ্চ আদালতে যাওয়ার এখতিয়ার সবার রয়েছে।
সোমবার বিকালে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল আলোচিত সিনহা হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন।
রায়ে সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও সাবেক পরিদর্শক মো. লিয়াকত আলীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। মামলায় ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সাত জন মামলা থেকে খালাস পেয়েছে।
সিনহা হত্যা মামলায় সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও সাবেক পরিদর্শক মো. লিয়াকত আলীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। মামলায় ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সাত জন মামলা থেকে খালাস পেয়েছে।
যাবজ্জীবনপ্রাপ্তরা হলো—বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত উপ-পরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিত ও বরখাস্ত কনস্টেবল সাগর দেব, প্রদীপের দেহরক্ষী রুবেল শর্মা, পুলিশের সোর্স নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।
বেকসুর খালাস পাওয়া সাত জন হলো—এপিবিএনের বরখাস্ত উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. শাহজাহান, বরখাস্ত কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আবদুল্লাহ, বরখাস্ত সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) লিটন মিয়া, বরখাস্ত কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন ও আব্দুল্লাহ আল মামুন।
প্রদীপ কুমার দাশ ও লিয়াকত আলীকে কক্সবাজার জেলা কারাগারের কনডেম সেলে রাখা হয়েছে। তাদের জেল কোড অনুযায়ী সুবিধা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার জেল সুপার নেছার আলম।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়ার শামলাপুরে এপিবিএন চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি (টেকনাফে দুটি, রামুতে একটি) মামলা করেছিল।
সেনাবাহিনী থেকে অবসরে যাওয়া সিনহা ‘লেটস গো’ নামে একটি ভ্রমণ বিষয়ক ডকুমেন্টারি বানানোর জন্য সেসময় প্রায় একমাস ধরে কক্সবাজারের হিমছড়ি এলাকায় ছিলেন। ওই কাজে তার সঙ্গে ছিলেন স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের শিক্ষার্থী সাহেদুল ইসলাম সিফাত ও শিপা দেবনাথ।
তবে কক্সবাজারের পুলিশ সে-সময় বলেছিল, সিনহা তার পরিচয় দিয়ে ‘তল্লাশিতে বাধা দেন’। পরে ‘পিস্তল বের করলে’ চেক পোস্টে দায়িত্বরত পুলিশ তাকে গুলি করে। ঘটনার পাঁচ দিন পর অর্থাৎ ৫ আগস্ট কক্সবাজার আদালতে টেকনাফ থানার বহিষ্কৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস।
আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে র্যাবকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়। তদন্ত শেষে র্যাব ১৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। অভিযোগপত্রে সিনহা হত্যাকাণ্ডকে একটি ‘পরিকল্পিত ঘটনা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।