বরিশাল নগরের আছমত আলী খান (এ.কে) ইনস্টিটিউশনের সাময়িক বরখাস্ত হওয়া প্রধান শিক্ষক জসীম উদ্দিনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। রোববার বেলা ১১টায় বরিশাল রিপোটার্স ইউনিটির কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় । সংবাদ সম্মেলন লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিদ্যালয়ের ১৮ জন শিক্ষক-কর্মচারীর পক্ষে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আইরীন পারভীন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এ.কে ইনস্টিটিউশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আইরীন পারভীন বলেন, ‘দুর্নীতির দায়ে সাময়িকভাবে বরখাস্ত হওয়া প্রধান শিক্ষক এইচ.এম জসীম উদ্দিন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকার আত্মঘাতি অপপ্রচার চালাচ্ছেন। শিক্ষকদের বিভিন্নভাবে ভয়ভিতি দেখাচ্ছেন। শিক্ষকদের চরিত্র হরণের জন্য নানান রকম নাটক সাজাচ্ছেন।
এসময় তিনি বলেন, বলেন, সাবেক ম্যানেজিং কমিটির স্বাক্ষর জলিয়াতি, বিধি বহিঃর্ভুতভাবে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন, দুই মাসের ভাড়া মৌকুফ দেখিয়ে এক মাসের ভাড়া আত্মসাত, ভাড়া মৌকুফের প্রত্যায়নপত্র প্রদান, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি ও মার্চে নবম শ্রেণির অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের ১০ম শ্রেণিতে উত্তীর্ণের জন্য জামানত বাবদ ৭২ হাজার ৫শত টাকা আদায় করে আত্মসাত, স্টলের নাম পরিবর্তনের জন্য এক লক্ষ টাকা বিদ্যালয়ে প্রদানের নিয়ম থাকলেও তিনি ৩ নম্বর স্টলের নাম পরিবর্তন পূর্বক টাকা আত্মসাত করেন জসীম উদ্দিন।
এছাড়া ২০২০ সালের পহেলা জুলাই থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত বিধি বহিঃর্ভুতভাবে ভাউচার প্রধান করে অর্থ আত্মসাত করেন। কমিটির অনুমোদন ছাড়া করোনাকালিন সময়ে প্রণোদনা ভাতাবাবদ নিজে এবং আরও চারজন কর্মচারীকে এক লক্ষ ২ হাজার ৯০০ টাকা ভাতা প্রদান করেন। ঈদগাহ্ মাঠের ভাড়া বাবদ আদায়কৃত ৪৮ হাজার টাকা অবৈধভাবে আত্মসাত করেন। খেলার টুর্নামেন্ট দেখিয়ে ৩৩ হাজার টাকার ভাউচারের টাকা আত্মসাত করেন।
এসময় তিনি আরো বলেন, ২০০৯ সালে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদানের পর থেকেই কমিটির অনুমোদন নিয়ে অস্থায়ীভাবে বিদ্যালয়ের দুটি শ্রেণিকক্ষ দখল করে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। যেখানে অবৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ ব্যবহার করছেন। এসময় তারা বিদ্যালয়ের শ্রেণি কক্ষ দখল করে পরিবার নিয়ে বসবাস করা ওই শিক্ষকের কাছ থেকে শ্রেণি কক্ষ দখল মুক্ত করার দাবি জানান।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আইরীন পারভীন বলেন, ‘বরখাস্তকৃত প্রধান শিক্ষক জসীম উদ্দিন নিজের অপরাধ এবং দুর্নীতি ঢাকতে একেরপর এক নাটকিয়তার আশ্রয় নিচ্ছেন। তার মধ্যে সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বশির উদ্দিনকে শ্লীলতাহানীর মামলায় জড়িয়ে হয়রানি অন্যতম। জসীম উদ্দিন নিজের স্ত্রীকে দিয়ে সদ্য অবসরে যাওয়া ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা করিয়েছেন। তার এই কর্মকা-ের জন্য আমরা নারীদের পাশাপাশি পুরুষ সহকর্মীরাও ভিতন্তুষ্ট। আমরা আশংকা করছি তিনি ক্যাম্পাসে অবস্থান করা মানেই সকলের মধ্যে আতঙ্ক। আমাদের দাবি তার দখলে থাকা শ্রেণিকক্ষ দুটি দখলমুক্ত করা হোক। তাকে বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ ছেড়ে দেয়ার জন্য একাধিকবার নোটিশ করা হলেও কর্ণপাত করেননি তিনি। নান অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিত প্রধান শিক্ষক এইচ.এম জসীম উদ্দিনকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। এমনকি তার বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। যা বর্তমানে পিবিআইতে তদন্তাধিন আছে।
এ প্রসঙ্গে একে ইনস্টিটিউশনের ম্যানেজিং কমিটির বর্তমান সভাপতি হাসান মাহমুদ বাবু বলেন, ‘স্কুল পরিচালনায় আমাদের একটি পরিপত্র আছে। সেই পরিপত্র অনুযায়ী আমরা বিদ্যালয়টি পরিচালনা করে আসছি। পরিপত্র অনুযায়ী নিয়োগ কার্যক্রম ছাড়া সকল কার্যক্রম সম্পাদিত করতে পারবে এডহক কমিটি। পরিপত্রের নিয়মগুলো মেনেই আমরা প্রধান শিক্ষককে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। তিনি মামলা করেছেন। আমরা আদালতে মামলাটি খারিজের জন্য আবেদন করেছি।
তিনি বলেন, প্রধান শিক্ষক দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে শ্রেণিকক্ষ দখল করে বসবাস করছেন। এটা নিয়ে ইতোপূর্বে শিক্ষকদের তেমন আপত্তি ছিলো না। তবে সম্প্রতি সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে মামলা করায় বিষয়টি অন্য শিক্ষকদের গায়ে লেগেছে। এ কারণেই তারা এখন বরখাস্তকৃত প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে শ্রেণি কক্ষ মুক্ত করতে চাচ্ছেন। আমরা পারতাম তাকে টেনে হেচড়ে শ্রেণি কক্ষ থেকে বের করে দিতে। কিন্তু তিনি একজন শিক্ষক, তার সাথে এমন আচারণ আমরা করতে চাই না। আমরা আইনিভাবেই মোকাবেলা করবো।
অভিযোগ প্রসঙ্গে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া প্রধান শিক্ষক এইচ.এম জসীম উদ্দিন বলেন, ‘নিয়ম বহিঃর্ভুতভাবে এডহক কমিটি দিয়ে আমাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এই ঘটনায় আমি এডহক কমিটির সভাপতি হাসান মাহমুদ বাবুসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করি। মামলাটি এখনো তদান্তাধিন আছে।
তিনি বলেন, ২০২১ সালের ১৭ ডিসেম্বর ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দায়িত্বভার গ্রহণ করলেও তা নিয়মতান্ত্রিকভাবে হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী তাকে আমি বিদ্যালয়ের যাবতীয় হিসাব-নিকাশসহ দলিলপত্রাদী বুঝিয়ে দিবো। কিন্তু সেটা না করেই তাকে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেয়া হয়। পরবর্তীতে হাসান মাহমুদ বাবুর মেয়াদ শেষ হলে তার সহধর্মীণি লুৎফুন্নাহারকে সভাপতি করে এডহক কমিটি গঠন করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী কোন এডহক কমিটি একজন প্রধান শিক্ষককে বহিস্কার করতে পারে না। আর ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা করার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘মামলাটি বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানায় তদান্তাধিন রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আছমত আলী খান (এ.কে) ইনস্টিটিউশনের শিক্ষক মো. জিয়াউল হক ফারুক, কাঞ্চন আলী, রতন কুমার মজুমদার, ইসরাত জাহান শিলভী, আচমা আক্তার, মো. মামুন হাওলাদার, আইরীন জাহান সালমা, তরিকুল ইসলাম, রোকসানা কনক প্রমুখ।