বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ছাত্রী ও ছাত্রীর স্বামীকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে ঘর বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। দুটি বাড়িতে ও একটি ক্লাবে এই হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
এই ঘটনায় বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়ক কিছু সময়ের জন্য অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১১ জানুয়ারি) রাত সড়ে ৮ টার দিকে এই ঘটনা ঘটে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, চরকাউয়া ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ড মেম্বার সাইদুল আলম লিটনের অনুসারী জাহিদ হোসেন জয় নামের এক যুবক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের প্রায়ই উত্যক্ত করতো। এর ধারাবাহিকতায় আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের এক ছাত্রী তার স্বামীকে নিয়ে ঘুরতে গেলে আটকে রেখে স্থানীয় যুবক জয়ের নেতৃত্বে লাঞ্ছিত ও মারধর করে। এ ঘটনা জানাজানি হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শেখ রাসেল পাঠাগার নামে একটি সংগঠনের কার্যালয় ভাংচুর করে। পরে ইউপি সদস্য লিটন ও তার অনুসারী জয়ের ঘর বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট এর অভিযোগ উঠেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রকিকুল ইসলাম ইয়ামিন জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশেই আনন্দ বাজার এলাকায় এক শিক্ষার্থী তার স্বামীকে নিয়ে ঘুরতে যায় এবং সেখানে খুনসুটি করছিল। এ সময় তাদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করে মেম্বার লিটনের অনুসারী জয়সহ কিছু লোকজন। এরপর ছাত্রীর স্বামীকে মারধর শুরু করে তারা। পরে ওই ছাত্রীকেও মারধর করা হয়। বিষয়টি ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীরা সেখানে গিয়ে তাদের উদ্ধার করে।
সৈকত নামে আরেক শিক্ষার্থী জানান, ম্যানেজমেন্ট বিভাগের এক ছাত্রী ও তার স্বামীর সঙ্গে এই ঘটনা ঘটেছে। আমরা তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছি। তবে কারা ঘর বাড়ি ভাঙচুর করেছে তা জানি না। আমরা লিটন ও জয়কে গ্রেপ্তারের জন্য ১২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছি। এই সময়ের মধ্যে তাদের গ্রেপ্তার করা না হলে বৃহৎ আন্দোলন করা হবে।
ইউপি সদস্য সাইদুল আলম লিটনের পিতা বৃদ্ধ আলতাফ হোসেন হাওলাদার বলেন, ‘কোনো কিছু বোঝার আগেই আমার ঘরে হামলা করছে, ভাঙচুর করছে। আমি বারবার কইছি বাঁচাও, কেউ কথা শোনেনি। আমি বুড়া মানুষ, আমার পিঠেও দুইটা ঘুষি দিয়েছে।’
লিটনের মা নুরজাহান বেগম ও ভাই ফারুক হোসেন বলেন, ‘অতর্কিত হামলা করা হইছে আমাদের ঘরে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে।’
জাহিদ হোসেন জয়ের মা জোৎসনা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে কিছুই জানে না। এর আগেও আমাগো ঘর ভাঙচুর হইছে। আমাকে একজনে ফোন দিয়ে বলছে আপনি ঘর থেকে বের হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা যাচ্ছে ঘর ভাঙতে। ২/৩শ পোলাপান এসে আমার ঘরের টিভি, ফ্রিজ, আলমিরা ভাঙছে। স্বর্ণ ও নগদ টাকা-পয়সা লুটপাট করে নিয়েছে। আমরা জিম্মি, এই সব পোলাপান পড়ালেখা করতে আসে না গুন্ডা হতে আসে বুঝি না। ‘
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর খোরশেদ আলম বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে ঘটনাস্থল ও সড়ক থেকে সরিয়ে আনা হয়েছে। লিটন মেম্বর জনপ্রতিনিধি সুলভ আচরণ করেনি। পরিস্থিতি বর্তমানে শান্ত। শিক্ষার্থীরা কিছু দাবি করেছে, সেগুলো আমরা দেখছি। ভাঙচুরের বিষয়ে আমি কিছু জানি না।’
বরিশাল বন্দর থানা পুলিশের ওসি মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘পুরো বিষয়টি আমরা জেনেছি। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে।