সুশান্ত ঘোষ: বরিশাল নগরীর কীর্তনখোলা তীরের রসুলপুর চর এখন শহীদ মিনার নগরী। দুই কিলোমিটার ব্যাসের চরের অধিকাংশ জায়গা জুড়ে শোভা পাচ্ছে শিশুদের তৈরি ৩০টি শহীদ মিনার।
চরে প্রায় দুই হাজার মানুষের বাস এবং এখানে শিশুদের সংখ্যা প্রায় তিনশ। এসব শিশুরা মিলে এখানে এবার ৩০টি শহীদ মিনার বানিয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শিশুদের বানানো শহীদ মিনারগুলো ফুলেল শ্রদ্ধায় ভরে আছে।
গত সাত বছর ধরে চরের শিশুরা শহীদ মিনার গড়ে তুলে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আসছে।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট বরিশাল জেলা ও মহানগরের আয়োজনে এখানে শহীদ মিনার বনানোর প্রতিযোগিতা শিশুদের মধ্যে তৈরি করেছে এক ধরনের আমেজ।
চরের কিশোর রেজোয়ান জানায়, ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে প্রতিবছর এই আয়োজন করা হয়, এতে চরের সব শিশুরা অংশ নিয়ে থাকে।
চরের শিশু মৌমিতা (১২) বলে, ‘এখানকার সব শিশুরা মা-বাবার কাছ থেকে ৫-১০ টাকা চেয়ে এই সব শহীদ মিনার নির্মাণ করে। আমিও খুব ছোটবেলা থেকে এসব করছি।’
চরের আরেক শিশু সুমাইয়া (১১) জানায়, এখানের তিনশ শিশু শহীদ মিনার বানানোর সঙ্গে যুক্ত। এবার ৩০টি শহীদ মিনার বানানো হয়েছে। এর মধ্যে ১০টি কলা গাছের। বাকি ২০টি কাঠ, বাঁশ, কাগজ ও রং দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। শহীদ মিনারের সামনে আলপনাও দিয়েছে কেউ কেউ।
শহীদ মিনার নির্মাণ প্রতিযোগিতার অন্যতম উদ্যোক্তা ডা. মণীষা চক্রবর্তী জানান, শিশুদের ভাষার প্রতি সচেতন করতেই এই প্রতিযোগিতা শুরু। আমরা দেখেছি এই আয়োজনের কারণে এখানকার ছেলে-মেয়েদের মধ্যে অনেক সচেতনতা তৈরি হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এখানে অধিকাংশ শিশুদের পরিবার নিম্ন আয়ের। শহীদ মিনার নির্মাণ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে তারা আত্ম তৃপ্তি পায়। এখানে সরকারি চকবাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও শিশুরা তাদের বানানো শহীদ মিনারেই স্বজনদের নিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করছে।’
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর শাহ সাজেদা জানান, এটি একটি অনন্য আয়োজন। এর মাধ্যমে শিশুদের মাঝে ভাষা নিয়ে বোধ তৈরি হচ্ছে।
কবি দীপংকর চক্রবর্তী জানান, শিশুদের সচেতনতা বাড়াতে এ ধরনের আয়োজন ভূমিকা রাখবে।