নাটোরের বীর মুক্তিযোদ্ধা নবীউর রহমান পিপলু

মাহাবুব খন্দকার
মাহাবুব খন্দকার - নাটোর প্রতিনিধি
12 মিনিটে পড়ুন
মুক্তিযোদ্ধা নবীউর রহমান পিপলু

একাত্তরে তাঁর লড়াই ছিল পাকসেনাদের বিরুদ্ধে। স্বাধীনতার ৫০ বছরেও লড়ছেন তিনি। তবে লড়াইটা এবার জীবনের সাথে। নাটোর শহরের আলাইপুর এলাকার বাসিন্দা নবীউর রহমান পিপলু। পেশায় একজন সাংবাদিক। একাত্তরে নাটোর হাসপাতালের তৎকালীন কর্মচারী রশিদুর রহমান এবং নূরুননেছা বেগমের দ্বিতীয় সন্তান তিনি।

জীবনের জন্য জীবন সায়াহ্নে এসেও যেন এক মুহূর্ত বিরাম নেই তাঁর। কাজ করেন বেসরকারী টিভি চ্যানেল একুশে টেলিভিশন ও জাতীয় দৈনিক সমকালের নাটোর প্রতিনিধি হিসেবে। সংবাদের খোঁজে নিরন্তর ছুটে চলা। জীবন-জীবিকার তাগিদে তার এখনও হার মানেননি অসহায় প্রকৃতির কাছে। দুটি গণমাধ্যমের সম্মানী ও মুক্তিযোদ্ধা ভাতায় চলছে তার সংসার।

একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাঁর যে তৃপ্তি, তার তুলনা হয়না অন্যকিছুর সাথে। মুক্তিযোদ্ধা নবীউর রহমান পিপলু স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ শুনে এবং পরিবরের সকলের উৎসাহে আমি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেই। দেশ স্বাধীন হওয়ার আগ মুহুর্ত পর্যন্ত যুদ্ধের মাঠেই ছিলাম। সারাদেশে তখন অসহযোগ আন্দোলনে উত্তাল।

পদ্মা, মেঘনা,যমুনা-তোমার আমার ঠিকানা শ্লোগানে মুখর সারাদেশ। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনে যুদ্ধে যেতে উদ্বুদ্ধ হই। আমার উৎসাহে বাবা-মা সহ পরিবারের সকলেই সম্মতি দেন। ২৫ মার্চ কালোরাতের পর নাটোরের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, ছাত্র, কৃষক, শ্রমিক, আদিবাসী জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকলেই পাকসেনাদের প্রতিরোধের প্রস্তুতি নেয়।

- বিজ্ঞাপন -

মুক্তিযোদ্ধারা নাটোরের ট্রেজারীর অস্ত্রাগার ভেঙ্গে অস্ত্র লুট করে। নবাব সিরাজ-উদ- দৌলা কলেজের তৎকালীন ছাত্রাবাসে (বর্তমান রাণী ভবানী মহিলা কলেজ চত্বর) মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। প্রশিক্ষক হিসেবে এগিয়ে আসেন সে সময়ে নাটোর মহকুমা খাদ্য কর্মকর্তা পাবনার ক্যাপ্টেন হাবিবুর রহমান।

তাকে সহায়তা করেন আনসার এবং পুলিশ সদস্যরা। কাঠের রাইফেল (ড্যামী) দিয়ে চলতে থাকে প্রশিক্ষণ। অন্যান্যদের সাথে ওই প্রশিক্ষণে অংশ নিই আমি। নবীউর রহমান পিপলু স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, পাকসেনাদের নাটোরে আসার সংবাদে গড়ে তোলা হয় প্রতিরোধ।

বিভিন্ন প্রবেশ পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরী করা হয়। তৎকালীন মিনার সিনেমা হলের মোড়ে (বর্তমানের ছায়বাণী সিনেমা হল) তেলের বড় বড় ড্রাম ও বাঁশ দিয়ে বেরিকেড তৈরী করা হয়। আর পার্শ্ববর্তী ভবনের ছাদে তীর-ধনুক সহ দেশী অস্ত্র নিয়ে পাহারারও ব্যবস্থা করা হয়।

২৯ শে মার্চ পাক বাহিনীর একটি দল পাবনার জেলার ঈশ্বরদী ঘুরে নাটোরে আসছে এমন সংবাদ পান মুক্তিযোদ্ধারা। ঈশ্বরদী হয়ে রাজশাহী যাওয়ার পথে গোপালপুর রেলস্টেশনে বাধাপ্রাপ্ত হয় পাকবাহিনী। এসময় তারা লালপুর উপজেলার ময়না গ্রামের দিকে এগুতে থাকে।

খবর পেয়ে ঈশ্বরদীর ইপিআর বাহিনী এবং নাটোরের পুলিশ ও আনসার সদস্য সহ শত শত মুক্তিকামী মানুষ বন্দুক, রাইফেল সহ দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ময়না গ্রামে পাক সেনাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। দীর্ঘ যুদ্ধ শেষে ৩০ মার্চ পিছু হটে পাকসেনারা।

- বিজ্ঞাপন -

এই যুদ্ধে নাটোরের নীচাবাজার এলাকার মঙ্গলা সহ অন্তত ৪০ জন বাঙ্গালী শহীদ হন। তবে রাতের অন্ধকারে পালিয়ে গেলেও ওই রেজিমেন্টের কমান্ডার রেজা খানসহ ৯ পাক সেনা জনতার হাতে ধরা পড়লে তাদের পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ১৩ এপ্রিল পাকসেনারা নাটোরে প্রবেশ করে। তাদের ভারী অস্ত্রের মুখে পিছু হটতে বাধ্য হন মুক্তিযোদ্ধারা।

পশ্চিম দিনাজপুর জেলার বালুরঘাটের কামারপাড়া কুড়মাইলে পাবনার বেড়া এলাকার তৎকালীন এমসিএ অধ্যাপক আবু সাঈদ পরিচালিত মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে যোগ দিয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। এসময় তার সাথে পরিচয় হয় বগুড়া নট্রামসের প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল মান্নান।

ওই ক্যাম্পে মাঝে মাঝে হাজির হয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা দিতেন বাংলাদেশ চলচিত্রের শক্তিমান অভিনেতা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হাসান ইমাম, আনোয়ার হোসেন, চিত্র নায়ক জাফর ইকবাল এবং চিত্র নায়িকা কবরী। এরপর উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য ভারতের রায়গঞ্জ সেনা ক্যাম্প এবং পরবর্তীতে দার্জিলিং জেলার শিলিগুলির পানিঘাটা (বাগডোকরা) ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি।

- বিজ্ঞাপন -

এসব ক্যাম্পে গেরিলা, এ্যাডভান্স ও জেএলসি (জুনিয়র লিডার কোর্স) প্রশিক্ষণ দেয়া হত। প্রশিক্ষণ শেষে রায়গঞ্জের পতিরামপুর (গঙ্গারামপুর) এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে আসেন পিপলু। ওই সময় বাংলাদেশের প্রবাসী সরকারের মন্ত্রী এএইচ এম কামরুজ্জামান এই ক্যাম্প পরিদর্শনে এসে মুক্তিযোদ্ধাদের উৎসাহিত করেন।

মুক্তিযুদ্ধের ৭ নং সেক্টরের অধীন গঠিত তুফানি ব্যাটেলিয়ানের (ব্রেভো সেক্টর) সদস্য হিসেবে বালুরঘাটের সীমান্ত এলাকা অযোধ্যায় মাটির নীচে বাংকার করে ওই ক্যাম্পে তাদের নিয়ে যাওয়া হয়। তুফানি ব্যাটেলিয়নের কোম্পানী কমান্ডার ছিলেন ভারতীয় সেনা সদস্য মেজর মতিলাল চৌধুরী।

তার কমান্ডে মিত্র বাহিনীর সঙ্গে সেকসন কমান্ডার ছিলেন বগুড়ার এরুলিয়া গ্রামের জাকারিয়া তালুকদার। জাকারিয়ার নেতৃত্বে মিত্র বাহিনীর সাথে হিলি,পাঁচবিবি, জয়পুরহাট, রংপুরের গোবিন্দগঞ্জ হয়ে বগুড়া অঞ্চল এবং নওগাঁয় গেরিলা যুদ্ধে অংশ নেন’ নবীউর রহমান পিপলু।

৭১-সালের ৬ ডিসেম্বর ভারত সরকার বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। নবীউর রহমান পিপলু স্মৃতিচারণ করে আরো বলেন, ‘যুদ্ধের একদিনের কথা এখনও মনে পড়ে। অযোধ্যা ক্যাম্প থেকে রাত্রিতে ভারতীয় সেনা সদস্য সুবেদার দেলবর সিংয়ের নেতৃত্বে আমি সহ ২০/২৫ জনের মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল নওগাঁ সীমান্তের ফার্সিপাড়া-নওগাঁ রাস্তার ব্রীজ ধ্বংস করা সহ গেরিলা যুদ্ধে অংশ নিতে রওনা হই।

তীব্র শীতের রাতে রওনা হওয়ার পর পথে একটি নদী পড়ায় থামতে হয় সবাইকে। কমান্ডারের নির্দেশে বিবস্ত্র হয়ে নদী পার হতে বাধ্য হলাম। নদীটি পার হয়ে ফার্সিপাড়া ব্রীজের কাছাকাছি যেতেই আচমকা পাকসেনাদের আক্রমনের মুখে পড়ে ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ি।

যুদ্ধকালীন বিশেষ সাংকেতিক শব্দে একত্রিত হলেও কমান্ডারের নির্দেশ পাওয়া যাচ্ছিল না। বিক্ষিপ্তভাবে গোলাগুলি চলছিল। এক পর্যায়ে পাকসেনাদের আনুমানিক অবস্থান লক্ষ্য করে ৬ ইঞ্চি মর্টার সেল নিক্ষেপ করি। পিছু হটতে বাধ্য হয় পাকসেনারা। ফেলে যায় দুটি জিপ গাড়ী। গাড়ী দু’টিতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে ক্যাম্পে ফিরে যাই’।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে নবীউর রহমান পিপলু দাবী করেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় নাটোর ছিল পাকবাহিনীর ২ নং সামরিক হেড কোয়ার্টার। পাকসেনাদের প্রবল প্রতিরোধের কারনে মুক্তিযোদ্ধারা নাটোরে প্রবেশ করতে পারছিল না। এ কারনে পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন এলাকায় নাটোরের মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধে অংশ নেয়।

আর এই সুযোগে অসংখ্য মানুষকে নির্বিচারে আর নির্বিঘ্নে হত্যা করে পাকসেনারা। ১৩ এপ্রিল ব্যাপক গোলা বর্ষণ ও রকেট শেল নিক্ষেপ করে নাটোর শহরে প্রবেশ করে পাকসেনারা। তাদের ছোঁড়া রকেট শেল কাপুরিয়াপট্টি এলাকার রবি বসাকের বাড়িতে পড়লে তার স্ত্রীর দেহ ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যায়। শহরে প্রবেশের পর পাকসেনারা নির্বিচারে গুলি বর্ষণ করে।

এসময় অবাঙ্গালীদের সহায়তায় শহরে বাঙ্গালীদের বাড়ি ঘরে লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। তাদের নির্বিচার গুলি বর্ষণে আহতদের আর্ত চিৎকারে ডাঃ হেম চন্দ্রবসাক (যিনি বলাই ডাক্তার নামে পরিচিত ছিলেন) তাদের চিকিৎসার জন্য নাটোর সদর হাসপাতালে ছুটে গিয়েছিলেন।

কিন্তু হানাদার পাক বাহিনী তার সেই কর্তব্য পালন করার সুযোগ দেয়নি। ডাঃ হেম চন্দ্র বসাককে হাসপাতাল থেকে ধরে তৎকালীন নাটোর টাউন কমিটির কার্যালয়ে (বর্তমানে পৌরসভা কার্যালয়) গুলি করে হত্যা করা হয়। এসময় পাকসেনারা আরো হত্যা করে নাট্য ব্যক্তিত্ব শ্রী মন্মথ প্রামানিক, মুকুন্দ লাল চৌধুরী, ডাঃ রেবতী স্যানাল, জীবন কৃষ্ণ মানি, ভাদু, গোপাল, হারান সহ অনেককে।

পাকসেনা ও তাদের বাঙ্গালী দালালদের মদদে নাটোরের ছাতনী, দত্তপাড়া, ফুলবাগান, লালপুর থানার গোপালপুরে নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল, বড়াইগ্রামে বনপাড়ার রোমান ক্যাথলিক মিশন, গুরুদাসপুরের নারীবাড়ি, সিংড়ার হাতিয়নদহ গ্রাম সহ বিভিন্ন গ্রামে গণহত্যা চালানো হয়।

এসব গণহত্যার মধ্যে ৪ জুন ছাতনীর গণহত্যা ছিল একটি ভয়াল, বিভিষিকাময়, এবং হৃদয় বিদারক ঘটনা । এখানে প্রায় চারশ, ঘুমন্ত মানুষকে ধরে নিয়ে গিয়ে ছাতনী স্লুইস গেটের কাছে গুলি ও জবাই করে হত্যা করা হয়। এদিকে ময়নাযুদ্ধের প্রতিশোধ নিতে পাকসেনারা ৫ মে লালপুরের গোপালপুরে নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলে চালায় গণহত্যা চালায়।

মিলের তৎকালীন প্রশাসক আনোয়ারুল আজিম সহ প্রায় অর্ধশত কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গুলি ও বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়। ৯ মে সিংড়ার হাতিয়নদহ গ্রামের ১৫ জনকে গুলি করে হত্যা করে পাকবাহিনী। ১৭ এপ্রিল গুরুদাসপুরের নাড়িবাড়ি এলাকার ১৭ বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করা হয়।

সদর উপজেলার ফুলবাগান এলাকার তৎকালীন সিও অফিস (বর্তমানের উপজেলা পরিষদ) এলাকায় পাকসেনাদের ২ নং সামরিক হেডকোয়াটার স্থাপন করা হয়। নটোরের মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষক ক্যাপ্টেন(অবঃ) হাবিবুর রহমান সহ ৪০ জনকে হত্যা করে পাকসেনারা এই হেডকোয়ার্টারের সামনে একত্রে মাটিচাপা দেয়।

নাটোরের যে সকল বীর মুক্তিযুদ্ধা দেশমাতৃকাকে উদ্ধার করতে গিয়ে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম তৎকালীন ছাত্র নেতা শহীদ মজিবর রহমান রেজা, গোলাম রব্বানী রঞ্জু, আব্দুর রহমান খান সেলিম চৌধুরী ও আমিরুল ইসলাম বাবুল। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর সময় রেজা ছিলেন ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক, বাবুল প্রচার সম্পাদক এবং রঞ্জু ও সেলিম ছিলেন সক্রিয় কর্মী।

ভারতে প্রশিক্ষণ নিয়ে রেজা ও রঞ্জু গুরুদাসপুরের মশিন্দা এলাকায় প্রবেশ করেন। কিন্তু স্থানীয় দালাল- রাজাকারদের সহায়তায় রেজা ও রঞ্জুকে ধরে পাকসেনারা চাঁচকৈড় বাজারে নির্মম নির্যাতনের পর হত্যা করে। এই কালো দিনটি ছিল ১ সেপ্টেম্বর। অপরদিকে পাকসেনারা নাটোরে প্রবেশের পর বাবুল ও তার বাবা ট্রাফিক পুলিশ আব্দুর রশীদ খানকে ধরে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। সেই যাওয়ায় তাদের শেষ যাওয়া। আজও তারা ফিরে আসেনি। পিতা পুত্রের লাশও পাওয়া যায়নি।

একাত্তরে ডিসেম্বরের প্রথম দিকের এক দুপুরে সেলিম চৌধুরীরা নওগাঁর পত্নিতলায় ক্যাম্পে ভাত খেতে বসেছিলেন। হঠাৎ পাকিস্তানি বাহিনী আক্রমণ করে। সেলিম চৌধুরী ভাতের লোকমা ফেলে হাতে তুলে নেন লাইট মেশিন গান। শুরু হয় সম্মুখ যুদ্ধ। এই সম্মুখ যুদ্ধেই নিভে যায় তার জীবন প্রদীপ। তার লাশ নিয়ে নওগাঁ শহর ঘোরানো হলেও মৃতদেহটা পরে আর পাওয়া যায়নি।

১ এপ্রিল দলছুট পাকসেনাদের একটি ছোট দল বনবেলঘরিয়া এলাকায় অবাঙ্গালীদের পাড়ায় অশ্রয় নিলে মুক্তিযোদ্ধাসহ জনতার প্রতিরোধের মুখে পড়ে। বাঙ্গালী জনতা ও মুক্তিযোদ্ধারা পাকসেনাদের ধরে এনে হত্যা করে। সেই সাথে তাদের আশ্রয় দেয়ার অপরাধে অবাঙ্গালীদের বাড়ি ঘরে অগ্নিসংযোগ করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় অনেক বন্ধু যোদ্ধা আর সহযোদ্ধাকে হাড়িয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা নবীউর রহমান পিপলু। তাদের স্মৃতি আজও তাকে কাঁদায়। এদের মধ্যে নাটোরের তিন বীর শহীদ রেজা, রঞ্জু বাবুল আর সেলিমের নাম অগ্রগণ্য।

নবীউর রহমান পিপলুর পরিবারের ১১ ভাইবোনের মধ্যে এখন পিপলুরা বেঁচে আছেন ১০ জন। বাবাকে হারিয়েছেন ১৯৮৯ সালে। মাকে হাড়িয়েছেন ২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারী। নবীউর রহমান পিপলু ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘বাবা নিজেও ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা।

ভারতে থাকার সময়ে তিনি জলঙ্গির চিকিৎসালয়ে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন। যে বাবা নিজে মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, যে বাবা আমাকে যুদ্ধে যেতে উৎসাহী করেছেন, সেই বাবার নাম আজও তালিকাভুক্তি হয়নি। এটিই আমার সবচেয়ে বড় কষ্ট।’

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকাসহ দেশের অধিকাংশ এলাকা হানাদার মুক্ত হলেও নাটোরের মানুষ বিজয়ের স্বাদ পায় ২১ ডিসেম্বর। পাকসেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার নওয়াব আহমেদ আশরাফ ও মিত্রবাহিনীর ১৬৫ মাউনটে ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার রঘুবীর সিং পান্নুর কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে অস্ত্র সমর্পন করেন।

এসময় পাকিস্তানি বাহিনীর ১৫১ অফিসার, ১৯৮ জন জেসিও, ৫৫০০ সেনা, ১৮৫৬ জন আধাসামরিক বাহিনীর সদস্য এবং ৯ টি ট্যাংক, ২৫ টি কামান ও ১০ হাজার ৭৭৩ টি ছোট অস্ত্র সহ আত্মসমর্পণ করে। এরপর নাটোরের সর্বস্তরের মানুষ বিজয়ের আনন্দে ঘর থেকে বের হয়ে আসে। জয়বাংলা ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে শহরের রাস্তাঘাট। উল্লাস আর আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে নাচতে নাচতে রাস্তায় মিছিল করতে থাকে।

উপভোগ করতে থাকে মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের স্বাদ। কিন্তু তখনও ভারতীয় সৈনিকের পোশাক পড়ে প্রিয়জনদের খোঁজ করতে থাকে সাহসী মুক্তিযোদ্ধা নবীউর রহমান পিপলু। আজও বার বারই মনে পড়ে সেই প্রিয় মুখগুলো যারা দেশমাতৃকাকে উদ্ধার করতে যেয়ে শহীদ হয়েছেন। চিরতরে হাড়িয়ে গেছেন নাটোরের বুক থেকে। একাকী করে গেছেন গর্বিত মুক্তিযোদ্ধা পিপলুকে।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
নাটোর প্রতিনিধি
সাংবাদিক এবং লেখক
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!