ছোট্টবেলা থেকে পরিচয়, তবে প্রেমের সম্পর্ক পাঁচ বছরের। এর পরিণয় ঘটে বুধবার রাতে। বরিশালের ঐতিহ্যবাহী শঙ্করমঠ চত্বরে হিন্দু রীতিতে বিয়ে হয় সুব্রত ও ফাল্গুনীর।
বর পটুয়াখালীর গলাচিপার সুব্রত মিত্র বেসরকারি সংস্থা কোডেক-এর মাঠ কর্মকর্তা। আর কনে ফাল্গুনী সাহা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মানবসম্পদ বিভাগে কাজ করেন।
তবে সব কিছু ছাপিয়ে এই বিয়ের অন্যতম আকর্ষণ ছিল গভীর প্রেম। তাই তো আয়োজনে আমন্ত্রণ ছাড়াই উপস্থিতি ছিল বহু মানুষের।
আরো পড়ুন
ছোটবেলায় এক দুর্ঘটনায় কনে ফাল্গুনীর দুই হাতই বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সব কিছু জেনেই তার সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান সুব্রত। সামাজিক সব প্রতিবন্ধকতাকে পাশ কাটিয়ে প্রেমিকাকে জীবনসঙ্গী করে নিয়েছেন তিনি।
ফাল্গুনী সাহা বলেন, ‘২০০২ সালে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে হাত দুটি কেটে ফেলতে হয়। তবে নিজেকে কখনও দুর্বল ভাবিনি। স্কুল-কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স শেষ করি। তারপর শুরু চাকরিজীবন।
‘আমাদের সমাজব্যবস্থা সম্পর্কে আপনারা সবাই অবগত। দৃষ্টিভঙ্গী আর মানসিকতা ঠিক থাকলে প্রতিবন্ধকতা কোনো বিষয় নয়। আমাদের বিয়েটা দৃষ্টিভঙ্গী বদলানোর উদাহরণ হয়ে থাকবে। সবার আন্তরিকতা আর ভালোবাসায় এ পর্যন্ত পৌঁছতে পেরেছি।’
ফাল্গুনী আরও বলেন, ‘স্কুলজীবন থেকে কর্মজীবন… আমার হাত না থাকার বিষয়টি কেউ কোনোদিন বুঝতে দেননি। আসলে একেকজনের মানসিকতা একেক রকম। যার পক্ষে এমন মেয়েকে বিয়ে করা সম্ভব না, তার দূরে থাকাই ভালো। কারও ওপর কোনো কিছু চাপিয়ে দেয়া ঠিক না।’
সুব্রত মিত্র বলেন, ‘ফাল্গুনীকে আমি ছোটবেলা থেকে চিনি। ও যখন ভার্সিটিতে পড়ত, তখন ওর সঙ্গে আমার ফেসবুকে কথা হতো। একটা সময় বুঝতে পারি ও পড়াশোনায় অনেক ভালো করছে। তবে কোনো সম্পর্কে জড়ানোর মানসিকতা ছিল না। আমার কাছে ওর হাত না থাকাটা কোনো সমস্যা মনে হয়নি। একটা মানুষের হাত না থাকায় সে বিয়ে করতে পারবে না!
‘আমি ওকে স্বপ্ন দেখাই, ওকে ভালোবাসতে শেখাই। বিয়ে করার সিদ্ধান্ত জানাই। অবশেষে আমরা বিয়েও করেছি। আমাদের জন্য আশীর্বাদ করবেন।’
সুব্রত মিত্রর ছোট বোন শ্রাবন্তী বলেন, ‘আর পাঁচটা বিয়ে যেমন হয়, এখানেও তেমনিভাবে বিয়ে হয়েছে। অনেকেই বলতে পারে স্বাবলম্বী একটা ছেলে কেন দুই হাত ছাড়া একটি মেয়েকে বিয়ে করছে? আমি বলব, সবার মানসিকতা আমার ভাইয়ের মতো হওয়া উচিত। এটা উদাহরণ হয়ে থাকে।’
গুগল নিউজ
