সাংবাদিককে হয়রানিমূলকভাবে মধ্যরাতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কারাদণ্ড দেওয়ার ঘটনায় কুড়িগ্রামের সাবেক জেলা প্রশাসক (ডিসি) সুলতানা পারভীনের সেই লঘুদণ্ডও বাতিল করে তাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে গত ২৩ নভেম্বর এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
এর আগে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গত ১০ আগস্ট সুলতানা পারভীনকে ২ বছরের জন্য বেতন বৃদ্ধি স্থগিতের লঘুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। তাকে ওএসডি করাও হয়েছিল।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) উপ সচিব মোছা. সুলতানা পারভীন কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক থাকার সময় বাংলাট্রিবিউন অনলাইন ভিত্তিক ওয়েব পোর্টালের সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে মধ্যরাতে ধরে নিয়ে গিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে ‘সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮’ এর বিধি ৩(খ) অনুযায়ী ‘অসদাচরণ’ এর অভিযোগে বিভাগীয় মামলা করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের গত বছরের ১৮ মার্চ তাকে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেয়।
এতে বলা হয়, অভিযুক্ত কর্মকর্তা সুলতানা পারভীন গত বছরের ২৫ জুন লিখিত জবাব দাখিল করে ব্যক্তিগত শুনানি চান। ওই বছরের ৯ আগস্ট অনুষ্ঠিত ব্যক্তিগত শুনানিতে তার দেওয়া মৌখিক বক্তব্য ও লিখিত জবাব সন্তোষজনক বিবেচিত না হওয়ায় ন্যায়বিচারের স্বার্থে বিভাগীয় মামলাটি তদন্ত করার জন্য তদন্ত বোর্ড গঠন করা হয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আলী কদরকে তদন্ত বোর্ডের আহ্বায়ক করা হয়।
বোর্ডের দাখিল করা তদন্ত প্রতিবেদনে মোছা. সুলতানা পারভীনের বিরুদ্ধে ‘সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮’ এর বিধি ৩(খ) অনুযায়ী আনীত ‘অসদাচরণ’র অভিযোগ প্রমাণিত হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, তদন্ত বোর্ডের প্রতিবেদন ও সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রাদি পর্যালোচনার পর সুলতানা পারভীনকে গুরুদণ্ড দেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এরপর তাকে ‘সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮’ এর বিধি ৭(৯) অনুযায়ী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় গত ৮ জুন তাকে দ্বিতীয় কারণ দর্শানোরর নোটিশ দেয়। সুলতানা পারভীন ২২ জুন লিখিতভাবে দ্বিতীয় কারণ দর্শানো জবাব দেন।
দাখিল করা জবাব ও তদন্ত প্রতিবেদনসহ অভিযোগের গুরুত্ব ও প্রাসঙ্গিক প্রশাসনিক বিষয়াদি বিবেচনা করে ‘সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮’ এর ৪(২) (খ) বিধি অনুসারে তাকে ২ বছরের জন্য বেতন বৃদ্ধি স্থগিত রাখার ‘লঘুদণ্ড’ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়।
পরে সুলতানা পারভীন লঘুদণ্ড মওকুফের জন্য গত ৬ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতির কাছে আপিল আবেদন করেন। আবেদন বিবেচনা করে আগের দেওয়া ‘২ বছরের জন্য বেতন বৃদ্ধি স্থগিত রাখা’র দণ্ড বাতিল করে রাষ্ট্রপতি তাকে অভিযোগের দায় হতে অব্যাহতি দেন বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়।
অব্যাহতির প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, লঘুদণ্ড দিয়ে জারি করা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের গত ১০ আগস্টের প্রজ্ঞাপনটি বাতিল করে সুলতানাকে অভিযোগের দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলো।