নতুন করে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে ইউরোপে। বিভিন্ন দেশে করোনার নতুন ঢেউয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিএইচও)। আগামী বছরের মার্চের মধ্যে ইউরোপে ৫ লাখের বেশি মানুষের করোনা সংক্রমণে মৃত্যু হতে পারে, এমন আশঙ্কাও রয়েছে। ফলে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের নীতিনির্ধারকরা আবারও কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করছেন। কিন্তু তা মানতে নারাজ সাধারণ মানুষ। খবর বিবিসি, আল-জাজিরা, ওয়াশিংটন পোস্ট-এর।
ইউরোপের বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপ করা হচ্ছে। আর এসব বিধিনিষেধের প্রতিবাদে সেখানকার অনেকে দেশে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। এর মধ্যে আংশিক লকডাউন ঘোষণার প্রতিবাদে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে নেদারল্যান্ডসে। রোববার রাস্তায় নেমে এসেছেন বেলজিয়ামের নাগরিকেরা। একই ধরনের বিক্ষোভ-প্রতিবাদ হচ্ছে অস্ট্রিয়া, ক্রোয়েশিয়া, ফ্রান্স ও ইতালিতেও।
ওয়াল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী, রোববার ২৪ ঘণ্টায় যুক্তরাজ্যে ৪০ হাজার ৪ জন, নেদারল্যান্ডসে ২০ হাজার ৯৬৬ জন, ফ্রান্সে ১৯ হাজার ৭৪৯ জন, ইতালিতে নয় হাজার ৭০৯ জন ও ক্রোয়েশিয়ায় চার হাজার ২০২ জনের করোনা শনাক্ত হয়।
করোনা বিধিনিষেধ বিরোধী বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে দেশে দেশে। এর মধ্যে কোথাও কোথাও বিক্ষোভ সমাবেশে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে।
নেদারল্যান্ডসে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ায় সম্প্রতি তিন সপ্তাহের লকডাউন ও বিধিনিষেধ জারি করে ডাচ সরকার। একই সঙ্গে জরুরি প্রয়োজনে ভ্যাকসিন পাস নিয়ে চলাফেরা বাধ্যতামূলক ও নববর্ষের অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে দেশটিতে। সরকারের এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাতে রাস্তায় নেমেছে সাধারণ মানুষও। ফলে পরিস্থিতি সামলাতে বেগ পেতে হচ্ছে দেশটির সরকারকে।
নেদারল্যান্ডসের রোটেরডাম শহরে স্থানীয় সময় ১৯ নভেম্বর, শুক্রবার কয়েকশ মানুষ বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বের হয়। এ মিছিলে পুলিশ বাধা দিলে সংঘর্ষ বেধে যায়। বিক্ষোভকারীরা পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং বেশ কয়েকটি স্থাপনায় হামলা চালায়। এসময় পুলিশের গুলিতে আহত হন ৭ জন। ঘটনাস্থল থেকে আটক করা হয় ২০ জনকে। শনিবারও (২০ নভেম্বর) বিক্ষোভে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান কয়েকশ মানুষ। পুলিশের সদস্যরা ঘোড়ার পিঠে চড়ে এসে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়ার চেষ্টা করলে হেগ শহরের রাস্তায় কিছু বাইসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা। পুলিশকে পটকাও ছুড়ে মানেন তারা। পরে শহরটিতে জরুরি আদেশ ঘোষণা করে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। প্রশাসনের কর্মকর্তারা টুইটারে জানান, শনিবারের সহিংসতায় পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হন। ঘটনাস্থল থেকে আটক করা হয় ৭ জনকে। এখনও আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে দেশটিতে।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্প্রতি ইউরোপে নতুন করে করোনার প্রকোপ বাড়তে শুরু করেছে। কোনো কোনো দেশে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছেছে। গত শনিবার যুক্তরাজ্য সরকারের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, শুধু ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে ৪০ হাজার ৯৪১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। সংক্রমণ বাড়ার এমন হার ইউরোপের বেশ কিছু দেশে। ফলে সেখানকার বিভিন্ন দেশে আরোপ করা হচ্ছে নতুন বিধিনিষেধ।
করোনা সংক্রমণ রোধে বেলজিয়ামেও মাস্ক ব্যবহারের বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। আগে থেকেই রেস্তোরাঁর মতো জায়গায় গেলে করোনা পাস লাগতো। এ ছাড়া ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত অধিকাংশ বেলজিয়ানিদের সপ্তাহে চার দিন বাসায় থেকে অফিসের কাজ করতে বলা হয়েছে। গত বুধবার নতুন করে এ ঘোষণা দেয় কর্তৃপক্ষ। দেশটিতে সব স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য করোনার টিকা বাধ্যতামূলক করার পরিকল্পনাও হাতে নিয়েছে সরকার। কিন্তু এসব বিধি নিষেধের তোয়াক্কা করছেন না সাধারণ মানুষ। রোববার (২১ নভেম্বর) করোনার বিধিনিষেধ আরোপের প্রতিবাদে রাজধানী ব্রাসেলসে হাজার হাজার মানুষ এক পদযাত্রায় অংশ নেয়। এসময় পুলিশ তাদের প্রতিহত করতে জলকামান ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। ঘটে সংঘর্ষের ঘটনাও। ঘটনাস্থল থেকে আটক করা হয়েছে বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে। জানা গেছে, ওই কর্মসূচিতে ৩৫ হাজার মানুষ অংশ নেয়।
ফ্রান্স শাসিত ক্যারিবিয়ান দ্বীপ গুয়াদেলুপে রোববার তৃতীয় দিনের মতো করোনা বিধিনিষেধ বিরোধী বিক্ষোভ অব্যাহত হয়েছে। ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, সেখানে দাঙ্গা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ জন্য ফ্রান্স কর্তৃপক্ষ বিদেশি এই এলাকায় বাড়তি পুলিশ পাঠাচ্ছে।
ফ্রান্স শাসিত ক্যারিবিয়ান দ্বীপ গুয়াদেলুপে করোনা বিধিনিষেধ বিরোধী বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। সেখানে দাঙ্গা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা ঘটছে।
ক্রোয়েশিয়ায় সরকারি কর্মীদের জন্য টিকা বাধ্যতামূলক করার প্রতিবাদে রাজধানী জাগরেবে বিক্ষোভ করেছেন হাজারো মানুষ। ইতালিতে কর্মস্থল ও গণপরিবহনে গ্রিন পাস সনদ ব্যবহারের নিয়ম জারি হওয়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভ হয়েছে।
অস্ট্রিয়ায় নতুন করে লকডাউন ঘোষণার পর রাজধানী ভিয়েনার রাস্তায় বিক্ষোভ করেছেন হাজারো মানুষ। সোমবার থেকে দেশটিতে ২০ দিনের লকডাউন কার্যকর করা হবে।