নাটোরের বাগাতিপাড়া মহিলা মাদ্রাসা থেকে এবার দাখিলে পরীক্ষার্থী ছিল ১৫ জন; কিন্তু মহামারীর মধ্যে সবার বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর কেউ পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। গত ১৪ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া পরীক্ষায় নিজের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কেউ অংশ না নেওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন মাদ্রাসার তত্ত্বাবধায়ক আব্দুর রউফ।
তিনি বলেন, “করোনাভাইরাস সব শেষ করে ফেলেছে। করোনাকালীন ছুটিতে মেয়েরা অলস সময় কাটাচ্ছিল। এর মধ্যে ওই ১৫ ছাত্রীর বিয়ে হয়ে যায়। এ পরিস্থিতিতে পরিবারের অনাগ্রহের কারণে তারা কেউ দাখিল পরীক্ষায় অংশ নেয়নি।”
প্রতিবছর বাগাতিপাড়া মহিলা মাদ্রাসা থেকে ৯-১০ জন করে দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। বেশিরভাগ উত্তীর্ণও হচ্ছে।
কিন্তু এবার ব্যতিক্রম ঘটল। আর সেকথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন আব্দুর রউফ; জানান, ওই ১৫ জনের মধ্যে তার নিজের মেয়েও রয়েছেন।
তিনি জানান, অন্য ছাত্রীদের মনোবল বাড়াতে নিজের মেয়েকেও এখানে ভর্তি করেছিলেন। কষ্টের কামাইয়ের টাকা দিয়ে তার ফরমও ফিলআপ করেছিলেন। তার মেয়ের সঙ্গে আরও ১৪ জন মেয়ে দাখিল পরীক্ষার জন্য ফরম ফিলআপ করে।
ফরম পূরণের পরপরই করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে মাদ্রাসা বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় রউফের মেয়েও নিজের পছন্দে বিয়ে করে স্বামীর সংসারে চলে যায়।
অন্য মেয়েদের খবর জানা ছিল না তার। সম্প্রতি মাদ্রাসা খোলার পর যোগাযোগ করে বাকি সব ছাত্রীদের বিয়ে হয়ে গেছে বলে জানতে পারেন।
রউফ বলেন, তবুও আশা ছিল তারা পরীক্ষায় অংশ নেবে। এ কারণে তিনি পরীক্ষা কেন্দ্রের প্রবেশপত্র সংগ্রহ করে ছাত্রীদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে পৌঁছে দিয়েছেন। কিন্তু ১৪ নভেম্বর দাখিল পরীক্ষা শুরুর দিন মাদ্রাসার একজন ছাত্রীও পরীক্ষা দিতে যায়নি।
মাদ্রাসা তত্ত্বাবধায়কের কাছ থেকে ওই পরীক্ষার্থীদের খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তাদের বেশিরভাগই বাবার বাড়িতে নেই। চলে গেছে স্বামীর বাড়িতে।
ফোন নম্বর সংগ্রহ করে কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়। তারা জানায়, বিয়ের পর আর পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার আগ্রহ নেই তাদের।
বাল্যবিয়ের শিকার এসব ছাত্রীদের কেউ নিজের ইচ্ছাতেই পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। আবার কেউ বা পরিবারের সদস্যদের আপত্তিতে পরীক্ষায় বসতে পারেনি।
বাগাতিপাড়া মহিলা মাদ্রাসার এক অভিভাবক বলেন, তার মেয়ে পড়ালেখায় তেমন ভালো ছিল না। ভালো পাত্র পাওয়ায় তিনি মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন। স্বামী ও তার পরিবারের কেউ পরীক্ষা দেওয়াতে আগ্রহী ছিলেন না।
বারইপাড়া গ্রামের এক পরীক্ষার্থী জানায়, মহামারীর ছুটির শুরুতেই তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর একদিনের জন্যও মাদ্রাসায় যাওয়া হয়নি। বাড়িতে পড়ালেখার পরিবেশ নাই। তাই তার পক্ষে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া সম্ভব হয়নি।
বাগাতিপাড়া মহিলা মাদ্রাসার ১৫ পরীক্ষার্থীর এবার দাখিল পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল উপজেলার পেড়াবাড়িয়া দাখিল মাদ্রাসা পরীক্ষা কেন্দ্রে।
কেন্দ্রের সচিব ইব্রাহিম হোসাইন জানান, তার কেন্দ্রে পাঁচটি মাদ্রাসার ৯৮ জন ছাত্রীর পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রথম দিন থেকেই বাগাতিপাড়া মহিলা মাদ্রাসার ১৫ পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত রয়েছে। এখন অন্য চারটি মাদ্রাসার ৮৩ জন ছাত্রী এ কেন্দ্রে পরীক্ষা দিচ্ছে।
শনিবার সকালে বাগাতিপাড়া মহিলা মাদ্রাসায় গিয়ে দেখা যায়, চারদিকে ধানক্ষেতের মধ্যে আগাছায় ঘেরা মাদ্রাসাটির ঢেউটিনের তিনটা ঘর দাঁড়িয়ে আছে। শ্রেণীকক্ষে ছাত্রীদের আনাগোনা নেই।
তত্ত্বাবধায়ক রউফ জানান, চেষ্টা করেও মাদ্রাসাটি সরকারি মঞ্জুরীভুক্ত করতে পারেননি। ফলে পরিচালনা করতে বেগ পেতে হচ্ছে। বছরের পর বছর শিক্ষকরা বিনা বেতনে প্রতিষ্ঠানে থাকতে চান না। তবুও মঞ্জুরী হওয়ার আশায় বিনা বেতনে ছাত্রীদের পড়ালেখা করানো হচ্ছে। (সূত্র বিডি নিউজ)