রাজধানী ঢাকার আদাবর থেকে ‘টিকটক আসক্ত’ নিখোঁজ তিন বোন যশোর শহর থেকে উদ্ধার হয়েছেন। রাতেই তাদেরকে ঢাকায় আনা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
শুক্রবার সন্ধ্যায় আদাবর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী শাহীদুজ্জামান এ তথ্য নিশ্চিত নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, উদ্ধারের পর নিখোঁজ তিন বোন যশোর কোতোয়ালি থানা পুলিশের হেফাজতে আছেন। রাতেই তাদের ঢাকায় আনা হবে। আগামীকাল শনিবার এ বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে ব্রিফিং করে গণমাধ্যমকে অবহিত করা হবে।
নিখোঁজ তিন বোনের মধ্যে বড় বোন রোকেয়া (১৮) একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী, মেজো বোন জয়নব আরা (১৭) ও ছোট বোন খাদিজা আরা (১৬)। মেজো বোন জয়নব ও ছোট বোন খাদিজা এবার একসঙ্গে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন। সামনে তাদের আরও দুটি পরীক্ষা। রাজধানীর খিলগাঁওয়ে এক খালার বাসায় দুই বোন আর বড় বোন আদাবর এলাকায় আরেক খালার বাসায় থাকতেন।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১ টার দিকে আদারবের শেখের টেকের খালার বাসা থেকে ওই তিন বোন নিখোঁজ হন বলে আদাবর থানায় জিডি করেন তাদের খালা। জিডিতে তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে তারা একসঙ্গে আদাবরের শেখের টেক এলাকার বাসা থেকে বের হয়ে যায়। এরপর আর বাসায় ফেরেনি তারা। বের হওয়ার সময় তারা কাপড়চোপড় ও পরীক্ষার প্রবেশপত্র সঙ্গে নিয়ে গেছেন।
নিখোঁজ তিন বোনের মা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ২০১৩ সালে মারা যাওয়ার পর থেকে তারা দুই খালার বাসায় বসবাস করতেন। তাদের বাবা অন্যত্র বিয়ে করে সংসার পেতেছেন। মেয়েদের সঙ্গে খুব একটা যোগাযোগও নেই বলে জানা গেছে।
নিখোঁজ তিন বোনের খালা বলেন, আমার বড় বোন ২০১৩ সালে মারা যাওয়ার পর মেয়ে তিনটি আমার এবং আরেক বোনের বাসায় থাকত। গত ১৫ নভেম্বর আদাবরের বাসা থেকে দুই বোন প্রথম পরীক্ষায় অংশ নেয়। আগামী ২২ নভেম্বর তাদের পরবর্তী পরীক্ষা আছে। কিন্তু তার আগেই কাউকে না বলেই তারা বাসা থেকে বের হয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে তাদের বাসায় রেখে মেয়েকে নিয়ে বের হয়ে যাই। রাস্তায় হঠাৎ মনে পড়ে, একটি ফাইল ছেড়ে এসেছি। মেয়েকে নিয়ে বাসায় ফিরে দেখি, দরজায় তালা লাগানো। সামনে থাকা ঝুড়িতে চাবি রাখা। এরপর দরজা খুলে দেখি তিন বোনের কেউই নেই। তাদের কাপড়চোপড়, বইপত্রসহ আসবাবপত্র কিছুই নেই।
তিন বোনের টিকটকে আসক্ত হওয়ার বিষয়টি জানিয়ে তাদের খালা বলেন, করোনার সময় তিন বোন টিকটক করত। বোধহয় টিকটকে আসক্ত হয়ে পড়েছিল। এর মাধ্যমেই কারও প্ররোচনায় তারা বাসা থেকে বের হয়ে যেতে পারে। যাওয়ার সময় তারা বই-খাতা, পরীক্ষার অ্যাডমিট কার্ড, রেজিস্ট্রেশন কার্ডহ সবকিছু নিয়ে গেছে। পরে দুপুরে গিয়ে ঘটনা খুলে বলে আদাবর থানায় একটি জিডি করেছি।
বোনের তিন মেয়েকে লালন-পালন করার পর এমনভাবে নিখোঁজ হওয়ায় আক্ষেপ করে তিনি বলেন, নিজের ছেলে মেয়ে, সংসার আছে তারপরও অনেক কষ্টে ওদের বড় করেছি। তাদের চাওয়া-পাওয়ায় কোনো ঘাটতি রাখিনি। এখন যেখানেই গিয়ে থাকুক, তারা যেন নিরাপদে ফিরে আসে এটাই আমাদের চাওয়া।
নিখোঁজ তিন বোনের বাবা যশোরে শিক্ষকতা করেন এমনটা জানিয়ে তাদের খালা বলেন, অনেকদিন ধরে আমাদের সঙ্গে তিন মেয়ের বাবার যোগাযোগ নেই। তিন মেয়ের সঙ্গেও তেমন যোগাযোগ ছিল না। তবে গোপনে যোগাযোগ থাকলেও থাকতে পারে।