নাটোর শহরের মল্লিকহাটি এলাকার বাসিন্দা রুলিনা খাতুনের বাড়িতে রোপণকৃত রাতের রানী হিসেবে পরিচিত ‘নাইট কুইন’ গাছে এক জোড়া ফুল ফুটেছে। দুর্লভ প্রজাতির এই ফুল রোপণের ১০ বছর পর ফুটেছে। মিষ্টি মনোহারিণী সুবাস, দুধসাদা রঙ, স্নিগ্ধ ও পবিত্র পাপড়ি আর সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবেই পরিচিত এই এক জোড়া ‘নাইট কুইন।’
রোববার রাতে ডানা মেলে ফোটার পর সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়ে সারা এলাকায়। এই নাইট কুইন ফোটার খবরে প্রতিবেশী অনেকেই ছুটে আসেন রুলিয়া খাতুনের বাড়িতে। বাড়ির অদুরের সজনদের কেউ কেউ আসেন নাইট কুইন ফুল দেখতে। এক সাথে দু’টি ফুল ও ফুলের অপরূপ সৌন্দর্য দেখে অনেকেই বিমোহিত হন।
রোপণকৃত গাছে একজোড়া নাইট কুইন’ ফোটার পর আনন্দে উদ্বেলিত হন নাটোর কালেক্টরেট অফিসের কর্মচারী আব্দুল ওয়াহেদের মেয়ে রুলিনা খাতুনসহ পরিবারের সকলেই। পরিবারের সবাই মিলে রাত জেগে উপভোগ করেছেন। ফুলের মিষ্টি গন্ধের সাদ নিয়েছেন সবাই।
রুলিনা খাতুন বলেন, প্রায় ১০ বছর আগে এক সজনের বাড়ি থেকে নাইট কুইন গাছের ডাল এনে বাড়িতে রোপণ করেছিলেন তিনি। দীর্ঘ কয়েক বছর নিয়মিত নিবিড় পরিচর্যা করেছেন। ক’মাস আগে কলি এলেও তা ফোটার আগে ঝড়ে পড়ে।
দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে ফুল ফোটার মহুর্ত সময় রাত ১১ টা থেকে ১২ টা পর্যন্ত গাছের দিকে দৃষ্টি দিয়ে বসে থেকেছি। কিন্তু এবার আর ‘রাতের রানী’ হতাশ করেননি তাকে। অবশেষে ১০ বছর অপেক্ষার পর রোববার রাতে গাছে একজোড়া ফুটেছে। বিকেল থেকেই গাছে দুটি কলি অদ্ভুত সুন্দররূপে সাজে।
রাত ১১ টার দিকে ডানা মেলে নিজের সৌন্দর্যে স্বমহিমায় প্রকাশিত হয় নাইট কুইন। এর অদ্ভুত মিষ্টি সুবাস ছড়িয়ে পড়তে থাকে। ফুলের গন্ধে গোটা বাড়ি সুবাসিত হয়ে যায়। খবর পেয়ে আত্মীয় সজন সহ প্রতিবেশীরা আসেন ফুল দেখতে।
দূর এলাকা থেকে আসা রুলিনা খাতুনের নিকটাত্মীয় সোহেল রানা বলেন, রাতে শোনামাত্রই তিনি এই নাইট কুইন দেখতে এসেছেন। ফুলটি দেখে অনেক ভালো লেগেছে তার। রুলিনার প্রতিবেশী সিমি বেগম ও জেহাদ বলেন, তারা নাইট কুইনের নাম শুনেছেন। বাস্তবে কখনও দেখেননি। এবার স্বচক্ষে নাইট কুইনের অপরূপ সৌন্দর্য দেখে বিমোহিত হয়েছেন তারা।
জানা যায়, বিরল ক্যাকটাস জাতীয় এ ফুলটির বৈশিষ্ট্য অন্যান্য ফুলের তুলনায় একটু আলাদা। বহু আরাধ্য ও অপেক্ষার পর দেখা দেয় বলেই হয়তো নাইট কুইনকে সৌভাগ্যের প্রতীকও বলা হয়। তবে সৌভাগ্য আর কাহিনী ছাপিয়ে ফুলটির অপার সৌন্দর্যই একে ‘রানী’ উপাধি দিয়েছে।
পাথরকুচির মতো পাতা থেকেই এ ফুলগাছের জন্ম হয়। আবার পাতা থেকেই প্রস্ফুটিত হয় ফুলের গুটি। নাইট কুইনের বৈজ্ঞানিক নাম পেনিওসিরাস গ্রেজ্জি। ফুলটির আদি নিবাস আমেরিকার দক্ষিণাঞ্চালে এবং মেক্সিকোতে। দেখতে অনেকটা পদ্মফুলের মতো, সাদা রং ও মিষ্টি গন্ধ যুক্ত।
বছরের মাত্র একদিনে এবং মধ্যরাতে পূর্ণ বিকশিত হয়। আর শেষরাতেই জীবনাবসান ঘটে। ১৫ দিন পর গুটি থেকে কলি হয়। যে রাতে ফুলটি ফুটবে, সেই বিকেল থেকেই কলিটি অদ্ভুত সুন্দর রূপে সাজে। যেন বুজে থাকা পদ্মফুল।
ধীরে ধীরে অন্ধকার যখন চারপাশকে ঘিরে ধরে, ঠিক তখনই নিজের সৌন্দর্যে স্বমহিমায় প্রকাশিত হয় নাইট কুইন। এর সুবাসে তীব্রতা না থাকলেও অদ্ভুত মিষ্টি এক মোহ আছে, যা পুষ্পপ্রেমীদের সবসময়ই টানে। সারা দুনিয়ায় নাইট কুইন নিয়ে নানা কাহিনী আছে।