১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে নেভাল কমান্ডো অপারেশন এক্স এর সত্যি ঘটনা নিয়ে লেখা হয়েছিল ‘অপারেশন এক্স’। সেই বইয়ের বাংলা সংস্করণের মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে।
ভারতীয় হাইকমিশন, ঢাকার পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলা সংস্করণের প্রকাশ এবং প্রকাশনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। গত সোমবার (৮ নভেম্বর) বইটির মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা নিয়ে লিখিত অসাধারণ এই বইটির বাংলা সংস্করণের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন-মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী।
বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী বলেন, ‘অপারেশন এক্স শুধু গল্প নয়, এটি বাংলাদেশ ও ভারতের জন্য মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং দলিল। ভারত ও বাংলাদেশ এখন যেমন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলছে, মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের জনগণ ও ভারতীয় সৈন্য বাংলাদেশের পাশে ছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বের কারণেই আজ আমরা গর্ব করতে পারছি।’
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন-এই বীরত্বপূর্ণ অভিযানে অংশ নেওয়া ভারতীয় ও বাংলাদেশি প্রবীণ সৈন্যরা এবং সহলেখক সন্দীপ উন্নিথান।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন-কমান্ডার ভি কে রাইজাদা, লে কমান্ডার জালাল উদ্দিন, কমান্ডো হুমায়ূন কবীর ও শাহাদাত হোসেন প্রমুখ।
অপারেশন এক্স ছিল ‘অপারেশন জ্যাকপট’-এর অংশ, যার অধীনে মুক্তিবাহিনীর গোপন প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র সরবরাহ করা হয়। সামগ্রিকভাবে ১৯৭১ সালের আগস্ট থেকে নভেম্বরের মধ্যে কমান্ডোরা এক লাখ টন শত্রু নৌযান ডুবিয়ে অক্ষম করে দেয় এবং পূর্ব পাকিস্তানের বন্দরগুলি সম্পূর্ণরূপে অবরুদ্ধ করে। প্রকৃতপক্ষে, এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে বিশ্বে পরিচালিত বৃহত্তম গোপন অভিযান। ৪৮ বছর ধরে অপ্রকাশিত থাকা এই গল্পটি প্রথম ইংরেজিতে প্রকাশিত হয় ২০১৯ সালে।
ক্যাপ্টেন এম এন আর সামন্তের ব্যক্তিগত নোট এবং অপারেশনে অংশগ্রহণকারী ভারতীয় নৌ সেনাদের ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার আলোকে সংকলিত হয়েছে। প্রখ্যাত লেখক ও সাংবাদিক সন্দীপ উন্নিথান একটি পাঠযোগ্য, উত্তেজনাপূর্ণ গতিময় ভাষায় বইটি সহলিখন করেছেন। এটি বাংলায় অনুবাদ করেছেন যশোদা জীবন দেবনাথ।
মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় নৌবাহিনী এবং মুক্তিবাহিনীর যৌথ নৌ-কমান্ডো অভিযানের ঘটনাবলী নিয়ে অপারেশন এক্স বইটি লিখেছেন ক্যাপ্টেন এম এন আর সামন্ত ও সন্দীপ উন্নিথান। অপারেশনটির পরিকল্পনা করেছিলেন তৎকালীন ভারতীয় নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল এসএম নন্দা ও ক্যাপ্টেন (পরবর্তী সময়ে ভাইস অ্যাডমিরাল) মিহির কে রায়। যাকে বাস্তবে রূপদান করেছিলেন ক্যাপ্টেন এমএনআর সামন্ত। ৪৫০ জনেরও বেশি নৌ-কমান্ডোকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল এবং পূর্ব পাকিস্তানে অনুপ্রবেশ করানো হয়েছিল যাতে নৌযান, জেটি এবং সামুদ্রিক অবকাঠামো ধ্বংস করে পাকিস্তানি সামরিক ও খাদ্য সরবরাহ লাইনগুলিকে ব্যাহত করে দেওয়া হয়। যাতে পাকিস্তানি বাহিনী নিজেদের জন্য পুনরায় রসদ যোগান দিতে না পারে।
ফলে, শেষ পর্যন্ত ১৩ দিনের মধ্যেই তাদের দ্রুত আত্মসমর্পণ করতে হয়। কমান্ডো অপারেশনের পাশাপাশি, বইটিতে গানবোট পদ্মা এবং পলাশ দ্বারা মংলা বন্দরে অভিযানের কথাও বলা হয়েছে। ভারতীয় নৌবাহিনীর দেওয়া গানবোট দু’টিতে ভারত ও বাংলাদেশ উভয় দেশের নাবিক ছিল।