বরিশাল মহাশ্মশানে চলছে উপমহাদেশের বৃহত্তম দীপাবলি উৎসব। বুধবার (৩ নভেম্বর) সন্ধ্যা থেকে মহাশ্মশান প্রাঙ্গণে এর আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।
মহাশ্মশানে স্বজনদের আত্মার শান্তি কামনায় প্রতিবছরের ন্যায় এবারও জমায়েত হয়েছেন পূজা অর্চনার জন্য।
স্বজনরা মনে করেন প্রয়াতদের সমাধিতে পূজা অর্চনা করলে তাদের আত্মা শান্তি পায়।
এ সময় স্বজনদের সমাধিতে কেউ মোমবাতি, প্রদীপ প্রজ্বলন করেন, আবার কেউ কেউ মৃত ব্যক্তির পছন্দের খাবার দিয়ে নৈবেদ্য সাজিয়ে স্মরণ এবং আত্মার শান্তি কামনা করেন।
এদিকে মৃত ব্যক্তিদের স্বজনরা যারা দেশে থাকেন না।
সেসব মৃত ব্যক্তিদের সমাধিগুলোকে কমিটির পক্ষ থেকে হলুদ রঙ দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে। পাশাপাশি সমাধিগুলোতে শ্মশান কমিটির উদ্যোগে দিপাবলি উৎসবের দিন সন্ধ্যায় মোমবাতি, ধূপকাঠি ও প্রদীপ প্রজ্বলন করা হয়।
যদিও সনাতন ধর্মাবলম্বীরা ছাড়াও শশ্মানে অনেকেই দিপাবলির আয়োজন দেখতে আসেন।
এদিকে প্রতিবছর ভারত, নেপাল থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে স্বজনদের সমাধিতে প্রদীপ ও মোমবাতি প্রজ্বলনের জন্য স্বজনরা এলেও এবারও করোনা মহামারির কারণে তা কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তবে দুর্গাপূজার সময় কুমিল্লার ঘটনার কারণে দেশের বাইরে থেকে পুণ্যার্থীরা আসেননি বলে জানিয়েছে আয়োজকরা।
শ্মশান কমিটির নেতারা জানান, প্রায় ২০০ বছরের পুরানো নগরী কাউনিয়াতে ৫ একর ৫৯ শতক জমিতে এ মহাশ্মশানের অবস্থান। যেখানে ৬৫ হাজারের বেশি কাঁচা ও পাকা সমাধি রয়েছে। প্রায় দুইশ বছর ধরে চলা এই উৎসবে সমাধিগুলোতে মোমবাতি প্রজ্বলন করা হয়।
বরিশাল মহাশ্মশান রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক তমাল মালাকার বলেন, শশ্মানের সার্বিক নিরাপত্তায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি নিজস্ব ভলান্টিয়ারও নিয়োজিত রয়েছে। তবে করোনার কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই সব কিছু করা হচ্ছে।
শ্মশানের পুরোহিত বাসুদেব চ্যাটার্জী বলেন, সকালে শুরু হওয়া ভূত চর্তুদশী তিথি স্থায়ীত্ব হবে বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) সকাল পর্যন্ত।
মহাশ্মশান রক্ষা কমিটির সভাপতি মানিক মুখার্জী বলেন, বুধবার (৩ নভেম্বর) সন্ধ্যা থেকে মহাশ্মশান প্রাঙ্গণে উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী দিপাবলি উৎসব শুরু হয়েছে। যা চলবে বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) সকাল পর্যন্ত।
অপরদিকে ধর্মীয় এই অনুষ্ঠান নির্বিঘ্নে করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার মো. জাকির হোসেন মজুমদার।
তিনি বলেন, নিরাপত্তার চাদরে ঢেকেছে পুরো মহাশ্মশান এলাকা।
প্রসঙ্গত, কবি জীবনানন্দ দাশের বাবা সত্যামনন্দ দাশগুপ্ত, পিতামহ সর্বানন্দ দাশগুপ্ত, ব্রিটিশবিরোধী নেতা বিপ্লবী দেবেন ঘোষ, মনোরমা বসু মাসিমাসহ বহু খ্যাতিমান মানুষের সমাধি রয়েছে এ মহাশ্মশানে।