সুন্দরবনের আত্মসমর্পণকৃত দস্যুদের পুনর্বাসন উপলক্ষে থাকার ঘর, মুদি দোকান, নৌকা ও জালসহ গবাদিপশু হস্তান্তর করা হয়েছে। সুন্দরবন দস্যুমুক্ত তৃতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সোমবার (১ নভেস্বর) দুপুর ১২টায় বাগেরহাটের রামপাল উপজেলা মাঠ চত্ত্বরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, এমপি আনুষ্ঠানিকভাবে এসব পুনর্বাসন উপহার বিতরণ করেন।
র্যাবের মহাপরিচালক অতিরিক্ত আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি, খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. সামসুল হক টুকু এমপি, সদস্য পীর ফজলার রহমান, খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ সালাউদ্দিন, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য গ্লোরিয়া ঝর্না সরকার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিন, বাংলাদেশ পুলিশের মহা-পরিদর্শক, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ, র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) কর্নেল কে এম আজাদ।
অনুষ্ঠানের প্রথম অধ্যায়ে ১০২টি ঘর, ৯০টি মুদি দোকান (মালামালসহ), ১২টি জাল ও মাছ ধরার নৌকা, আটটি ইঞ্জিন চালিত নৌকা এবং ২২৮টি গবাদিপশু (বাছুরসহ) দেওয়া হয় স্বাভাবিক জীবনে ফেরা দস্যুদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবন। এরসঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে রয়েছে বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষের জীবন-জীবিকা। জীবিকা নির্বাহের ক্ষেত্রে ২০১৮ সালের আগে তাদের বড় আতঙ্ক ছিল দস্যুদের উৎপাত। একই বছর র্যাবের কাছে সর্বমোট ৩২টি দস্যু বাহিনীর ৩২৮ জন আত্মসমর্পণ করেন। এসময় ৪৬২টি অস্ত্র, ২২ হাজার ৫০৪ রাউন্ড গোলাবারুদ জমা দেয় দস্যুরা।
আত্মসমর্পণকৃত বনদস্যুর কয়েক জনের সাথে কথা বলে জানা জায় তারা অন্ধকার জীবন থেকে বাঁচতে সাভাবিক জীবনে ফিরে নতুন জীবন পেয়েছেন। তারা সরকার ও সাংবাদিক মহোসিন উল হাকিম এর প্রতি কৃতঞ্জতা জানিয়ে বলেন, আমরা এখন জীবনে নয় বরং নতুন করে আরো একবার জন্ম নিলাম মনে হয়। জলে কুমির, উপরে বাঘ তারপর র্যাবের পাহারাদার অনিশ্চিত একটা জীবনে পরিণত হয়। সব ভুল বুঝতে পেরে সাভাবিক জীবনে ফিরেছি ঠিকই কিন্তু সরকার তথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দেওয়া প্রতিশ্রুতি আমাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি করে দিবেন। কিন্তু আত্মসমর্পণের তিন বছর পার হলেও আমাদের মাললা গুলো নিষ্পত্তি না হওয়ায় সরকারের দেওয়া টাকা ও বিভিন্ন সহায়তা মাসে তিন চার বার আদালতে হাজির হয়ে আইনজীবীদের দিতে দিতে নিঃস্ব হয়ে যাই বলেও দাবী করেন কয়েকজম বনদস্যু।
২০১৮ সালের ১ নভেম্বর সুন্দরবনকে ‘দস্যুমুক্ত সুন্দরবন’ ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই হিসেবে আজ ‘দস্যুমুক্ত সুন্দরবন’র তৃতীয় বর্ষপূর্তি। প্রধানমন্ত্রীর প্রজ্ঞা, দিকনির্দেশনা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধান ও র্যাবের কর্মতৎপরতায় দস্যুমুক্ত হয় সুন্দরবন। এ সাফল্য অর্জনে র্যাব পেয়েছে দেশবাসীর আকুণ্ঠ সমর্থন ও ভালোবাসা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আত্মসমর্পণকৃত বনদস্যুদরা আজ তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছে এবং স্ত্রী, সন্তান নিয়ে মাথা উঁচু করে বাঁছতে পারছে। এখন আর কেউ তাদের পরিবারকে বলেনা তুই বনদস্যুর সন্তান বা স্ত্রী। সরকারের পক্ষ থেকে হত্যা ও ধর্ষণের মামলা ছাড়া বাকি দায়েরকৃত মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আমরা কাজ করছি। বনদস্যুদের উদ্দেশ্য করে আরো বলেন, আপনারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দূর্বল মনে করেন তাহলে ভুল করবেন। আমরা সবসময়ই আপনাদের মনিটরিং করছি এবং কানে মাঝে মাঝে শুনি আপনারা আবারো ভিন্ন পথে অগ্রসর হতে চাচ্ছেন, তাহলে ভুল করবেন। আমরা আপনাদের যেমন সাভাবিক জীবনে স্বাচ্ছন্দে ফিরাতে সহায়তা করেছি তেমনি অপরাধের দিকে আবারো ফিরলে আমরা কঠোর হাতে আইনের আওতায় এনে শাস্তি দিবো।