এই করোনা মহামারীতে আক্রান্তদের শ্বাসকষ্টজনিত কষ্ট লাঘব করার জন্য ভারত সরকার যে ভাবে রাজ্যবাসীর কাছে বাজি পোড়ানো বন্ধ করার আবেদন জানিয়ে অসুস্থদের পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে, তা শুধু প্রশংসারই যোগ্য নয়, মানবিকও বটে। কিন্তু শুধুমাত্র আবেদন-নিবেদন, নিষেধাজ্ঞা কিংবা ভয় দেখালেই আমজনতার এই বাজি পোড়ানো বন্ধ করা যাবে বলে আমার মনে হয় না।
বন্ধ করার জন্য সরকারকে এক্ষুনি কয়েকটি জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। আর সেই পদক্ষেপ নিলেই, শুধু কালীপুজো বা এই মরসুমে যে ক’টা পুজো বা উৎসবে বাজি পোড়ানো হয় বা হতে পারে বলে অনুমান করা যাচ্ছে, সেই বাজি পোড়ানো অবশ্যই একেবারে বন্ধ করা যাবে এবং বাজি পোড়ানোর সম্ভাব্য দিনগুলোতে তা হলে আর প্রশাসনের তরফ থেকে কোনও নজরদারীও চালাতে হবে না। আর এগুলো করার জন্য প্রথমেই যেটা করতে হবে সেটা হল, যেখানে যত বাজি ইতিমধ্যেই মজুত আছে, আড়তদারদের কাছ থেকে সেগুলো বাজেয়াপ্ত করতে হবে এবং যে সব জায়গায় বাজি তৈরি হয়, সেই কারখানাগুলোকে এক্ষুনি বন্ধ করে দিতে হবে। আর যাঁরা কাঁচামাল বিক্রি করেন অন্তত এই ক’টা দিন সেই সব জায়গাতে প্রশাসনের তরফ থেকে নজর রাখতে হবে। নজর রাখতে হবে, ভিন রাজ্য থেকে যাতে আমাদের এই রাজ্যে কোনও বাজি ঢুকতে না পারে। নজর রাখতে হবে, বাজির মূল ঘাঁটি পশ্চিমবঙ্গের বাউরিয়াতে যাতে কোনও বাজির চিহ্ন না থাকে।
আর এ সব করতে হলে প্রথমেই বরাদ্দ করতে হবে একটি আর্থিক প্যাকেজ। কারণ, যে সব শ্রমিক বাজি বানান, তাঁরা ক’টা টাকার জন্যেই বাজি বানান। যদি তাঁদের সেই টাকাটা হাতে তুলে দেওয়া যায়, তা হলে বাজি বানানো থেকে তাঁরা অবশ্যই বিরত থাকবেন বলে মনে হয়। সেই বিরত থাকাটাকে বাধ্যতামূলক করার জন্য তাঁদের যদি সতর্ক করে দেওয়া হয়— এর পরেও যদি তাঁরা বাজি বানান, তা হলে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ধরা পড়লে শুধু জেলই নয়, জরিমানাও লাগু করা হবে।
যাঁরা ছোটখাটো ব্যবসা করেন, যাঁরা ইতিমধ্যেই এই ব্যবসায় বেশ কিছু টাকা বিনিয়োগ করে ফেলেছেন, তাঁদেরও আর্থিক সহায়তা দেওয়ার পরিকল্পনা নিতে হবে। এর পরেও যদি কেউ বাজি ফাটান, তা হলে যে বহুতল বা পাড়ায় বাজি ফাটার শব্দ বা আলোর রোশনাই চোখে পড়বে, সেই বহুতল বা পাড়ার বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আগেই ঘোষণা করতে হবে।
কার্যকর করতে হবে, কেউ বাজি ফাটাচ্ছেন ধরা পড়লেই দলমত নির্বিশেষে তাঁকে যাতে তখনই গ্রেফতার করা হয় এবং তিনি যাতে বেল না পান তার বন্দোবস্ত করা। একই সঙ্গে জরিমানাও করা দরকার বিপুল অঙ্কের টাকা।
এই কর্মযজ্ঞে অবশ্যই শামিল করা যেতে পারে স্থানীয় ক্লাব, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং আমজনতাকে। কালীপুজোর অন্তত বেশ কয়েক দিন আগেই তাঁদের নিয়ে আলোচনা করতে পারে লোকাল থানাগুলোও। না হলে সরকারের তরফ থেকে যত বার বাজি ফাটানো বা পোড়ানোকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হবে, যেহেতু নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি মানুষের আগ্রহ চিরকালীন, তাই তাঁরা সেই বাজি দরকার হলে দ্বিগুণ, তিন গুণ, এমনকী দশগুণ দাম দিয়েও কিনবেন এবং নিজেকে কেউকেটা প্রমাণ করার জন্য তাঁরা বাজি পোড়াবেনই।
সুতরাং একমাত্র উপায় হল, আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করে, খুব সুষ্ঠ এবং সঠিক ভাবে এই পদক্ষেপগুলো নেওয়া। একমাত্র তা হলেই এই মরসুমে বাজি পোড়ানো বন্ধ করা যাবে।