আবার আসিব ফিরে ধানসিড়ির তীরে — এই বাংলায়
হয়তো মানুষ নয় — হয়তো বা শঙ্খচিল শালিখের বেশে;
হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে
কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব এ কাঠাঁলছায়ায়;
হয়তো বা হাঁস হব — কিশোরীর — ঘুঙুর রহিবে লাল পায়,
সারা দিন কেটে যাবে কলমীর গন্ধ ভরা জলে ভেসে-ভেসে;
আবার আসিব আমি বাংলার নদী মাঠ ক্ষেত ভালোবেসে
জলাঙ্গীর ঢেউয়ে ভেজা বাংলার এ সবুজ করুণ ডাঙায়;
হয়তো দেখিবে চেয়ে সুদর্শন উড়িতেছে সন্ধ্যার বাতাসে;
হয়তো শুনিবে এক লক্ষ্মীপেচাঁ ডাকিতেছে শিমুলের ডালে;
হয়তো খইয়ের ধান ছড়াতেছে শিশু এক উঠানের ঘাসে;
রূপসা ঘোলা জলে হয়তো কিশোর এক শাদা ছেঁড়া পালে
ডিঙা রায় — রাঙা মেঘ সাঁতরায়ে অন্ধকারে আসিতেছে নীড়ে
দেখিবে ধবল বক: আমারেই পাবে তুমি ইহাদের ভিড়ে।
ইতিহাস-চেতনা মানুষকে প্রসারিত করে, জীবনানন্দকে দিয়েছিল দৃষ্টিভঙ্গির বিশালতা। কবি জীবনানন্দ দাশ বোধ হয় খুবই অল্প কিছু মানুষের একজন, যিনি তার কবিতার মাধ্যমে মানুষের জন্ম-মৃত্যু আর কর্মকাণ্ডকে মহাজাগতিক প্রেক্ষাপটে নিয়ে গিয়েছিলেন।
তিনি ‘দুজন’ কবিতায় লিখেছেন:
‘পৃথিবীর পুরনো পথের রেখা হয়ে যায় ক্ষয়,
প্রেম ধীরে মুছে যায়, নক্ষত্রেরও মরে যেতে হয়,…?’
বিখ্যাত জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানী কার্ল সাগান এ রকমই একটি কথা অন্যভাবে বলেছিলেন, ‘মানুষের মতোই নক্ষত্র ও গ্রহগুলোর জন্ম হয়, জীবনযাপন করে, আবার মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।’
একজন মানুষের জীবনকালের পরিমাপ হয় দশকের ভিত্তিতে; সূর্যের জীবনকালের ব্যাপ্তি এর চেয়ে ১০ কোটি গুণ বেশি। নক্ষত্রের তুলনায় আমরা হলাম প্রজাপতির মতো, দ্রুত ধাবমান, ক্ষণস্থায়ী।
জীবনানন্দ দাশের জন্ম ১৮৯৯ সালে বরিশাল জেলায়। বাবা সত্যানন্দ দাশ একজন স্কুলশিক্ষক, প্রবন্ধকার, ব্রহ্মবাদী নামে পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক। মা কুসুমকুমারী দাশ হাসির গান ও কবিতা লিখতেন।
তিনি জীবনের বেশিরভাগ সময় বিভিন্ন কলেজে ইংরেজির অধ্যাপনা করেছেন। ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির এজেন্ট হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি; এমনকি ব্যবসাও করেছেন।
জীবনধারণের নিত্যপ্রয়োজন বা চাকরিতে তার তেমন উৎসাহ না থাকলেও শুধু জীবিকার তাগিদে প্রাণান্তকরভাবে তা করে গেছেন। এ জন্য তিনি বারবার আক্ষেপ করতেন এই ভেবে- কী নিদারুণ সময়ের অপচয়, যদি এ সময়টাকে বাঁচানো যেত!
প্রচার বিমুখ হওয়ার কারণে জীবত অবস্থায় তার সাহিত্য প্রতিভা খুব বেশি মানুষের কাছে পৌছ নি। এছাড়া ব্যক্তিগত জীবনে তাকে প্রায়ই চরম আর্থিক দারিদ্রতার মুখোমুখি হতে হয়েছিল। দিল্লীর এক কলেজে অধ্যপক হিসেবে যোগ দিলেও মাত্র চারমাস তার চাকুরি টিকে। বিয়ের পর একপর্যায়ে প্রায় পাচ বছর চাকুরী বিহীন অবস্থায় ছিলেন। কিছুদিন এক বীমা কোম্পানির এজেন্ট হিসেবে চাকুরী করেছেন, মাঝে ছোট ভাই এর কাছ থেকে ধার করে ব্যবসা করে তাতেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।প্রায় পুরোটা জীবন তাকে জীবিকার জন্য সংগ্রাম করতে হয়েছে। তার জীবদ্দশায় ৭টি কাব্যগ্রন্থ বেরিয়েছে। মৃত্যুর পর আরও অজস্র কবিতার সঙ্গে গল্প-উপন্যাসও প্রকাশিত হয়েছে, এখনও হচ্ছে, যেগুলো দীর্ঘদিন অপ্রকাশিত ছিল। বাংলা, ইংরেজিতে কিছু প্রবন্ধ এবং সমালোচনাও তিনি লিখেছেন। ব্যক্তিজীবনে তিনি ছিলেন নিঃসঙ্গ, লাজুক, স্বল্পবাক ও আত্মমগ্ন মানুষ।
এ প্রসঙ্গে বুদ্ধদেব বসু লিখেছেন, ‘জীবনানন্দের স্বভাবে দুরতিক্রম্য দূরত্ব ছিল…যে-অতিলৌকিক আবহাওয়া তার কবিতায়, তা-ই যেন মানুষটিকেও ঘিরে থাকতো সবসময়…তার ব্যবধান অতিক্রম করতে ব্যক্তিগত জীবনে আমি পারিনি, সমকালীন অন্য কোন সাহিত্যিকও নয়।’ (‘জীবনানন্দ দাশ’, ‘কবিতা’, পৌষ ১৩৬১)। জীবনানন্দ বলতেন, ‘কবিতা ও জীবন এক জিনিসেরই দুই রকম উৎসারণ।’
জীবনানন্দ দাশের প্রথম কাব্যগ্রন্থ বের হয় ১৯২৭ সালে ‘ঝরা পালক’; এর পর ‘ধূসর পাণ্ডুলিপি’ (১৯৩৬); ‘বনলতা সেন’ তার তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ। তার মৃত্যুর পর বের হয় রূপসী বাংলা (১৯৫৭) ও বেলা অবেলা কালবেলা (১৯৬১)।
বাংলা কাব্যসাহিত্যে এ রকম একটি নতুন ধারা হঠাৎ তিনি তৈরি করতে সমর্থ হননি বরং ক্রমাগতভাবে তা অর্জন করেছেন। তার গভীরতর উপলব্ধিকে তিনি অনবরত শব্দ, ভাষার প্রয়োগে এমন এক স্তরে উঠিয়ে এনেছেন, যার ফলে কবিতার শরীর থেকে বিকীর্ণ মহাজাগতিক ব্যাপ্তি আমরা অনুভব করি।
তিনি বলেছেন, ‘আমি জানি কবিতা, এমনকি যাকে মরমি কবিতা বলা হয়…কিছুই মানবজীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতাহীন কোন শূন্যের জিনিস নয়, তবে অভিজ্ঞতার বহুলতা আছে।’ জীবনানন্দ দাশের কবিতাগুলো যেন ইতিহাসের বিশাল-বিশাল সময়ের বাঁককে ধারণ করে আছে মহাজাগতিক স্বপ্নকে নিয়ে।
১৯৫৪ সালের ১৪ অক্টোবর সন্ধ্যায় দক্ষিণ কলকাতার দেশপ্রিয় পার্কের কাছে রাসবিহারী এভিনিউয়ে ট্রাম দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হওয়ার ঠিক আগের দিন ১৩ অক্টোবর কলকাতা রেডিওতে জীবনানন্দ দাশ জীবনের শেষ কবিতাটি পড়েছিলেন ‘মহাজিজ্ঞাসা’। এই দুর্ঘটনার ঠিক ৮ দিনের মাথায় ২২ অক্টোবর রাত ১১টা ৩৫ মিনিটে তিনি মারা যান। তখন তার বয়স মাত্র ৫৫ বছর।
অনেকে তার এই মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলতে পছন্দ করেন। এ প্রসঙ্গে তার মৃত্যুচিন্তাতাড়িত কিংবা বিপন্ন বিস্ময়মাখা পঙক্তিমালার দোহাই মানেন। কিন্তু হাসপাতালের বিছানায় তার শেষ দিনগুলির যে বিবরণ ভূমেন্দ্র গুহ এবং অন্যরা জানান, তাতে এই উপসংহারে পৌঁছানো কঠিন যে, জীবনানন্দ মরতে চেয়েছিলেন কিংবা তার মৃত্যুটি নিছক দুর্ঘটনা নয়, বরং আত্মহত্যা।
জীবনানন্দ যে রাতে মারা যান, সেদিন রাত ১০টায় অর্থাৎ মৃত্যুর এক ঘণ্টা ৩৫ মিনিট আগে গণেশ এভিনিউয়ের ফ্ল্যাটে সঞ্জয় ভট্টাচার্য—জীবনানন্দের দুর্ঘটনা পর থেকে যিনি মেঝেতে মাদুর পেতে বসেছিলেন অনেকটা প্রার্থনার ভঙ্গিতে—জীবনানন্দের প্রয়াণ মুহূর্ত কল্পনা করে তিনি লিখলেন, ‘একটি জাহাজ ছেড়ে গেলো।’ এখানে জাহাজ তো জীবন, জীবনানন্দ দাশ। সঞ্জয়ের ভাষায়—
‘দুদিনের কাঠ শ্যাওলার ছোঁওয়াটুকু
জেটির মাটিতে গাঁথা মুখ,
লোহার আড়ালে গায়ে সবুজের গন্ধে জোড়া পাখা।’
অর্থাৎ দুদিনের জন্য পৃথিবীতে এসেছিলেন। জেটিতে নোঙর করেছিলেন। এবং চলে গেলেন। জেটিতে কাঠ শ্যাওলার ছোঁয়া। কাঠ কয়লা মানে তো তার সৃষ্টিকর্ম। কথা হচ্ছে, সঞ্জয় কি জানতেন যে, জাহাজটি আজ রাতেই ছেড়ে যাবে? সঞ্জয়ের ভাষায়, ‘প্রত্যেকটি মৃত্যুর সঙ্গে আমরা মৃত্যুর কাছাকাছি যাই।’
কলকাতা রেডিওতে জীবনের শেষবার পঠিত ‘মহাজিজ্ঞাসা’ কবিতাটি জীবনের গুঢ় দর্শনে পূর্ণ। যে শূন্যতা, যে মায়া, যে বিপন্ন বিস্ময়ের কথা ঘুরেফিরে এসেছে তার কবিতায়—সেই শূন্যেরই বয়ান এই ‘মহাজিজ্ঞাসা’। তিনি কি জানতেন, সময় ফুরিয়ে এসেছে?…
‘শূন্যকে শূন্যের হাতে ছেড়ে দিয়ে শেষে
কোথায় সে চলে গেল তবে।
কিছু শীত কিছু বায়ু আবছা কিছু আলোর আঘাতে
ক্ষয় পেয়ে চারিদিকে শূন্যের হাতে
নীল নিখিলের কেন্দ্রভার
দান করে অন্তহীন শূন্যতাময় রূপ বুঝি;
ইতিহাস অবিরল শূন্যের গ্রাস।’
মৃত্যুর ব্যাকরণকে তিনি সরলরৈখিক মানতেন না। এ প্রসঙ্গে ভূমেন্দ্রর বলা একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করা যায়। জীবনানন্দকে একবার বাসে করে বাড়িতে পৌঁছে দেয়ার সময় একটি মেয়ের আত্মহত্যার গল্প শোনাচ্ছিলেন। জীবনানন্দ তখন তাকে বললেন, ‘মেয়েটি আত্মহত্যা করলো কেন, তোমরা কারণ খোঁজ করেছ? খোঁজ করলে দেখতে, লোকে যা বলবে, পুলিশে যা বলবে, পোস্টমর্টেম রিপোর্টে যা বলবে, তার কারণটা হয়তো অনেক বেশি আবছা’।
এই আবছা মানেই বিপন্ন বিস্ময়; ব্যাখ্যাতীত কোনো মানসিক পরিস্থিতি—যার দ্বারা প্ররোচিত কিংবা অনুপ্রাণিত হয়ে সুখের সংসারে আরামের বিছানা ছেড়েও ফাল্গুনের রাতের আঁধারে একগাছা দড়ি হাতে একজন মানুষ একা একা অশ্বত্থের ডালে গিয়ে ঝুলে পড়ে। এই বিপন্ন বিস্ময় মানুষকে অন্যমনস্ক করে।
যে কারণে হয়তো অতি ধীরগতির একটি ট্রাম যখন ঘণ্টা বাজাতে বাজাতে আসে, সেই শব্দ তার কানে পৌঁছে না। শরীর আটকে যায় ট্রামের ক্যাচারে। সেই বিপন্ন বিস্ময় কিংবা ব্যাখ্যাতীত মানসিক পরিস্থিতির যে ‘মহাজিজ্ঞাসা’—মৃত্যুর ৯ দিন তথা দুর্ঘটনার আগের দিন সন্ধ্যায় তিনি পড়লেন—
‘ছিলাম কোথায় যেন নীলিমার নিচে
সৃষ্টির মনের কথা সেইখানে আবছায়া কবে
প্রথম রচিত হতে চেয়েছিল যেন।
সে ভার বহন করে চলে আজ কাল অনন্ত সময়।’
আরেকটু এগিয়ে গিয়ে পড়লেন—
‘নিরন্তর বহমান সময়ের থেকে খসে গিয়ে
সময়ের জালে আমি জড়িয়ে পড়েছি;
যত দূর যেতে চাই এই পটভূমি ছেড়ে দিয়ে—
চিহ্নিত সাগর ছেড়ে অন্য এক সমুদ্রের পানে
ইতিহাস ছেড়ে দিয়ে ইতিহাসহীনতার দিকে।’
বস্তুত মানুষ সবাই নিরন্তর বহমান সময়ের থেকে খসে গিয়ে সময়ের জালে জড়িয়ে পড়ে। এটা একটা মায়া, কুহক, বিভ্রান্তি; অবিরল শূন্যের গ্রাস। তারপরও ২২ অক্টোবর এলেই আমাদের মনের ভেতরে সেই পুরনো বিভ্রান্তিটি খচখচ করে ওঠে—জীবনানন্দ কি তবে আত্মহত্যাই করেছিলেন, নাকি মৃত্যুকে তিনি আলিঙ্গন করেছেন অথবা ভেবেছিলেন যে, জীবনের লেনদেন ঘুচেই যেহেতু গেছে, সুতরাং অন্ধকারে চিরকাঙ্ক্ষিত মানুষের মুখোমুখি বসে থেকে এইবার না হয় দুদণ্ড শান্তির আয়োজন…
আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে জীবনানন্দ দাশ প্রায়ই নাকি ট্রাম দূর্ঘটনায় মৃত্যুর কথা ভাবতেন। এর চেয়েও আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে গত একশত বছরে কলকাতা শহরে ট্রাম দূর্ঘটনায় মৃত্যূর ঘটনা একটাই।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় (যিনি জীবনানন্দের শব কাঁধে বহন করে নিয়ে গিয়েছিলেন কেওড়াতলা মহাশ্মশানে) জীবনানন্দকে বলেছেন, ‘একজন অতুলনীয় মায়াবি’। আর ভূমেন্দ্রর ভাষায়, ‘মানুষ মায়াবদ্ধ জীব। এই মায়াটুকুই তার সমাজচেতনা, সময়ানুবর্তিতা এবং জীবন ও মৃত্যু অনুভাবনাও বটে। এই উৎকৃষ্ট মায়ার অনুধ্যান সন্ধান ও বাস্তবায়নের জন্যই তো তার নানারকম চোট, বড় আত্মত্যাগ, কষ্টসহিষ্ণুতা প্রেমে পড়া—এমনকি বেঁচে থাকতে চাওয়ায় রক্তাক্ত হওয়া, নির্বিশেষ মরে যাওয়া বা আত্মহনন।’ ফলে কয়েক দশক ধরেই জীবনানন্দের মৃত্যুটি মৃত্যু নাকি আত্মহনন—পাঠককুলে সেই প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে; তর্ক চলেছে কিংবা আরও হয়তো চলবে। কিন্তু আমরা এখন মোটামুটি একটা বিষয়ে একমত হতে পারলে ভালো যে, জীবনানন্দ স্বেচ্ছায় ট্রামের নিচে পড়েননি। অর্থাৎ আত্মহত্যার উদ্দেশ্য তার ছিল না। থাকলে তার হাতে আরও অনেক বিকল্প ছিল। দোকান থেকে একটা বিষের শিশি কিনে এনে ছিপিটা খুলে গিলে ফেললেই হতো। অথবা রাতের আঁধারে একগাছা দড়ি হাতে অশ্বত্থের ডালে গিয়ে ঝুলে পড়া যেতো। সেসব করেননি। আবার যদি আত্মহত্যা করতেই হবে, তাহলে আর এই অতি ধীর গতির ট্রাম কেন?
একটা দ্রুতগামী বাসের নিচে পড়ে গেলেই জীবনের লেনদেন চুকে যেতো। তা তো করেননি। বরং তিনিই একমাত্র ব্যক্তি, যার আগে-পরে কলকাতা শহরে কেউ আর ট্রামের নিচে পড়েনি। এটি এমনই বাহন যে, নিতান্ত অন্যমনস্ক অথবা বিপন্ন বিস্ময়ে আক্রান্ত কোনো মানুষ ছাড়া এমনকি কোনো কুকুরেরও এর নিচে পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয় না।
তার অন্যমনস্কতা নিয়ে অনেক ঘটনা তার সুহৃদদের জবানিতে পাওয়া যায়। সঞ্জয় লিখছেন, ‘তিনি রাস্তায় হাঁটছেন, বুদ্ধদেব বসু পেছন থেকে ডেকে তার সাড়া পাননি। পাশাপাশি গণেশ এভিনিউতে হেঁটে দেখেছি, একটি কথাও বলছেন না, বা হঠাৎ কী মনে হওয়াতে জোরে হেসেই উঠলেন হয়তো।’
ডায়াবেটিকে আক্রান্ত ছিলেন তিনি। ফলে প্রতিদিন বিকেলেই হাঁটতে বের হতেন। বরিশাল শহরেও তিনি হাঁটতেন। হাঁটার প্রসঙ্গে একবার বোন সুচরিতা দাশকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘তুমি বরিশালের জাহাজঘাটা দেখেছ? আলেকান্দা হয়ে হেঁটেছ কখনও? কালিবাড়ি রোড? বগুড়া রোড?’