জ্ঞানবিজ্ঞান চর্চার জন্য পত্রপত্রিকা, ম্যাগাজিন ও জার্নাল একটি সহায়ক ও শক্তিশালী মাধ্যম। এই মাধ্যমে সৃজশীল লেখক এবং গবেষকবৃন্দ তাঁদের মেধামনের মাধ্যমে সৃষ্টি করেন লব্ধ আবিষ্কার। পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও অনুসন্ধানের মধ্য দিয়ে নতুন তথ্য আবিষ্কার করে তারই উত্তরণ ঘটানো হয় গবেষণার প্রদত্ত উপাত্তে। তাই জ্ঞান উৎসারণের ক্ষেত্রে এসবের অবদান অনস্বীকার্য। এমন অনস্বীকার্যের প্রতিফলন দেখা যায় ভারতের পশ্চিম বাংলার দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার ঘটকপুকুর থেকে প্রকাশিত ‘উদার আকাশ’ রিসার্চ জার্নালের প্রতিচ্ছবির মাধ্যমে। এই জার্নালে প্রকাশিত শত শত লেখার মৌলিকতায় পত্রিকাটি বাঙালির আত্মমর্যাদার অভিজ্ঞান হিসেবে বিবেচ্য। পিয়ার রিভিউড দ্বি-ভাষিক রিসার্চ জার্নালটি ইতোমধ্যে চিন্তাশীল পাঠকের মনে জায়গা করে নিয়েছে। এ বছর জার্নালটির কুড়ি বছর পূর্তি হিসেবে ১৪২৮ সংখ্যাটি বিশেষ সংখ্যা হিসেবে পাঠক পর্যায়ে উপস্থাপিত হয়েছে। ‘কোভিড-১৯’ মহামারি ও অতিমারি সময়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ‘উদার আকাশ’ ২০ বছর পূর্তি সংখ্যা ১৪২৮ প্রকাশের নিমিত্তে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজনও করা হয়েছে বলে লেখক জানতে পারেন সম্পাদক ফারুক আহমেদ-এঁর মাধ্যমে৷
হাটি হাটি পা পা করে নানা পথপরিক্রমা অতিক্রম করে জার্নালটি আজ সাফল্যে দণ্ডায়মান। তাই এমন পদার্পণ উপলক্ষে বিশেষ এই সংখ্যাটির প্রকাশ ঘটেছে ১১ অক্টোবর, সোমবার বিকেল তিনটায়। সংখ্যাটির মোড়ক উম্মোচিত হয় কলকাতার নিউটাউনে অবস্থিত আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সেমিনার হল নম্বর ১-এ। মোড়ক উম্মোচিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন সাংসদ মইনুল হাসান, পুবের কলম-এর সম্পাদক আহমদ হাসান ইমরান, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য গৌতম পাল, সাহিত্যিক আবুল বাশার, অধ্যাপক সাইফুল্লা, অধ্যাপক আমজাদ হোসেন, রক্তদান আন্দোলনের নেতা ও সংগঠক রফিকুল ইসলাম, কবি আবদুর রব খান, সমাজসেবী এম এ ওহাব, কবি হাসনাহেনা বেগম, কবি সাবিনা ইয়াসমিন, মোনালিসা রেহমান, সোনা বন্দ্যোপাধ্যায় ও পত্রিকার সম্পাদক ফারুক আহমেদসহ প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ।
আজ থেকে কুড়ি বছর আগে পরিশ্রম ও নিষ্ঠাসহকারে কলেজ পড়ুয়া বন্ধু-বান্ধবীদের টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে পত্রিকা সম্পাদনার কাজ শুরু করেন জ্ঞানপিপাসু ও সমাজ-সভ্যতার অন্তরালে পিছিয়ে থাকা মানুষের জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করা মহান ব্যক্তিত্ব ফারুক আহমেদ৷ সংখ্যাটিতে দুই বাংলার খ্যাতনামা ১৮৫ জন লেখকের গবেষণামূলক ও সৃজনশীল লেখায় ঋদ্ধতা পেয়েছে। সংখ্যার ৩০৮ পৃষ্ঠা জুড়ে আছে বিভিন্ন বিষয় অবলম্বনে সমৃদ্ধ লেখা। বিশেষত কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘বিদ্রোহী’ কবিতার জন্মশতবর্ষ ও বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষের উপর গবেষণালব্ধ বিশেষ আলোচনা ও পর্যালোচনা। এছাড়াও আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে সন্নিবেশিত হয়েছে বাংলাদেশে সংঘটিত ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ অবলম্বনে স্বাধীনতা ও সুবর্ণজয়ন্তীর পরিক্রমা। উৎসবের এই বছরে তাই ‘উদার আকাশ’ পত্রিকায় নানা আঙ্গিকের লেখা ঠাঁই পেয়েছে। সেইসাথে এবছর যেসব ক্ষণজন্মা মহাপুরুষের মহাপ্রয়াণ ঘটেছে তাঁদের বিদেহী আত্মার প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধাও লেখনীর মাধ্যমে জ্ঞাপন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য সংখ্যাটির বিভিন্ন বিভাগ ও পর্বে নানা আঙ্গিক ও বৈশিষ্ট্যের লেখা স্থান পেয়েছে। যাঁদের লেখায় পত্রিকা সমৃদ্ধ হয়েছে তারই একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায় গবেষণামূলক প্রবন্ধ-নিবন্ধ ও কবিতা বিভাগে যথাক্রমে আছে ৪৫ ও ১১৯ জনের লেখা। এছাড়াও স্থান পেয়েছে ১টি করে অনুউপন্যাস ও অনুনাটিকা। সেইসাথে আরও স্থান পেয়েছে ১৯টি গল্প। বর্তমান কালের যুবসমাজকে শিক্ষা ও কর্মজীবনে সুস্থ-সুষ্ঠু শিক্ষা প্রদান, সঠিক ইতিহাস জানানো এবং প্রত্যাশিত কল্যাণকামী সমাজ গঠনে কার্যকর ভূমিকা পালনের নিমিত্তে জার্নালটি সহায়তা করবে এমন বিশ্বাস অপাঙক্তেয় নয়। প্রকাশনায় স্থান পাওয়া গবেষণামূলক প্রবন্ধ-নিবন্ধের মধ্য দিয়ে দেশের হারিয়ে যাওয়া ও বিলুপ্ত অনেক তথ্য উদ্ঘাটিত হয়েছে। এ ধারা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে। পত্রিকাটির মান ধরে রাখা ও উত্তরোত্তর এর শ্রীবৃদ্ধিসাধনের নিমিত্তে পরিকল্পণা প্রণয়নের কাজটি সম্পাদনা পরিষদ নিরলস ও নিঃস্বার্থভাবে করে যাচ্ছেন। সেইসাথে জার্নালটির আরও গুণগত মান বৃদ্ধির জন্য বিশেষজ্ঞ ও শুভানুধ্যায়ীর মতামত প্রত্যাশা করে।
আরও উল্লেখ্য যে, বাংলা লিটল ম্যাগাজিনের জগতে অত্যন্ত পরিচিত ‘উদার আকাশ’ জার্নালটি এবার ২০ বছর পূর্ণ করল। ইদ ও শারদোৎসব উপলক্ষে এই সংখ্যাটির আনুষ্ঠানিক প্রকাশ হয় সোমবার। উদার আকাশ পত্রিকার সম্পাদক ফারুক আহমেদ জানান-‘দীর্ঘ কুড়ি বছর ধরে নিরবচ্ছিন্নভাবে প্রকাশিত হয়ে চলেছে পত্রিকাটি। এজন্য তিনি পাঠক, লেখক, বিজ্ঞাপনদাতাসহ সমস্ত শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।’
সংখ্যাটির প্রথমেই স্থান পেয়েছে ত্রিশ বছর আগের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক প্রয়াত সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের দেওয়া একটি সাক্ষাৎকার ভিত্তিক প্রবন্ধের মধ্য দিয়ে। প্রয়াত মহান এই কথাসাহিত্যিকের সেদিনের বক্তব্য আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। এছাড়াও সম্প্রতি প্রয়াত কবি শঙ্খ ঘোষ সম্পর্কে দুটি স্মৃতিকথা এবং কাজী নজরুল ইসলামের জীবন ও সাহিত্য বিষয়ক পাঁচটি আলোচনা পত্রিকাকে বিশেষ মাত্রায় উন্নীত করেছে। সংখ্যাটিতে আরও স্থান পেয়েছে বিশিষ্ট নজরুল গবেষক আজহারউদ্দিন খানের উপর একটি পুরনো সাক্ষাৎকার। সেইসাথে রয়েছে কবি নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ কবিতার ইংরাজি অনুবাদ। বিশিষ্ট মানবতাবাদী ব্যক্তিত্ব সদ্য প্রয়াত পার্থ সেনগুপ্ত সম্পর্কে দুটি স্মৃতিচারণা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিকতা পেয়েছে। এগুলো প্রকাশ করে ‘উদার আকাশ’ সম্পাদক তাঁর সামাজিক দায়বদ্ধতার পরিচয় দিয়েছেন। এমন আলোচনা ও পর্যালোচনার বিষয়টি নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে।
এদিন উদার আকাশ প্রকাশন থেকে প্রকাশিত মইনুল হাসান রচিত “বাঙালি ও মুসলমান” আবদুর রব খান রচিত “দুরন্ত সকাল” এবং ফারুক আহমেদ -এর সম্পাদনা মূল্যবান গ্রন্থ “বাঙালির অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম” আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হলো। উদ্বোধন করলেন যথাক্রমে আগাত সমস্ত অতিথিগণ।
যাঁদের লেখায় ‘উদার আকাশে’র এই সংখ্যাটি বিশেষ অবয়ব পেয়েছে তাঁদের অন্যতম ব্যক্তিত্ব ও লেখক মইনুল হাসান, জয়ন্ত ঘোষাল, ড. মোহাম্মদ শামসুল আলম, শেখ মকবুল ইসলাম, সুবোধ সরকার, মীরাতুন নাহার, আবুল হাসনাত, সুরঞ্জন মিদ্দে, গিয়াসুদ্দিন দালাল, স্বস্তিনাথ শাস্ত্রী, সফিউন্নিসা, একরামূল হক শেখ, কামাল হোসেন, ইসমাইল দরবেশ, সুমন ভট্টাচার্য, মোশারফ হোসেন, মঈন শেখ, সোনিয়া তাসনিম খান, শামীম আহমেদ, সোনা বন্দ্যোপাধ্যায়, তৈমুর খান, গৌতম বিশ্বাস, অভিজিৎ সিরাজ, মহিউদ্দিন সরকার, হারাধন চৌধুরি, চৈতালি বসু, অরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়সহ অনেকেই রয়েছেন। এছাড়াও সহ-সম্পাদক মৌসুমী বিশ্বাস ও রাইসা নূর জার্নালের মান ধরে রাখার জন্য কৃতজ্ঞতা চিত্তে নিরলসভাবে কাজ করেছেন।