নিজের পরিচিতি ব্যবহার করে প্রতারণা করে আসছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে আরজে নীরবের বিরুদ্ধে। তিনি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান কিউকমের হেড অফ সেলস কমিউনিকেশন অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন এবং নিজের পরিচিতি ব্যবহার করে গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিলেন। এ প্রতারণায় আরও ছয়জন জড়িত রয়েছে বলেও অভিযোগ গ্রাহকদের। ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিষয় খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, কিউকম ক্রেতাদের কাছে পণ্য পৌঁছে দিয়ে চালানসহ ডকুমেন্ট ফস্টারে জমা দিতো। ফস্টারের পক্ষ থেকে ক্রেতাকে ফোন করার মাধ্যমে পণ্য বুঝিয়ে দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করার পর কিউকমকে টাকা প্রদান করা হয়। ক্রেতা পণ্য বুঝে না পেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রফ অফ ডেলিভারির নির্দেশনা মোতাবেক ফস্টার কিউকমের টাকা আটকে দেয়। যার ফলে ক্রেতারা পণ্য কিংবা টাকা কোনটাই পান না। কিউকম মোটরসাইকেল ছাড় দেওয়ার কারণ ব্র্যান্ড মার্কেটিং করা। মোটরসাইকেলের চাহিদা অনেক বেশি হওয়ায় সাইকেল ছাড়ে বিক্রির বিষয়টি বেশি প্রাধান্য দেয় তারা। গ্রাহকদের প্রায় ২৫০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, আব্দুল্লাহ খান শৈশব কিউকমের বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে খোঁজখবর নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি থেকে ৫৬ লাখ ৫৭ হাজার ৬৮৯ লাখ টাকার বিভিন্ন পণ্য ক্রয় করেন। যার মধ্যে রয়েছে ১৯টি মোটরসাইকেল। পেমেন্ট হিসেবে ফস্টার অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে ব্যবহার করা হয়। প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা আশ্বস্ত করেন, পণ্য ক্রয় করলে যথাসময়ে সরবরাহ করা হবে। নির্দিষ্ট মেয়াদের পরও ডেলিভারি না পাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটিতে যোগাযোগ করা হলে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে পণ্য দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়। গত ২৯ সেপ্টেম্বর কিউকমের অফিসে গিয়ে পণ্যের ডেলিভারি বিষয়ে জানতে চাইলে মারমুখী আচরণ করে করে কর্মকর্তারা।
কিউকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিপন মিয়া, রিপন মিয়ার স্ত্রী সৈয়দা তাহমিনা তারিন, কিউকম-এর চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী, হেড অফ সেলস নীরব ওরফে আরজে নীরব, ডেলিভারি এক্সিকিউটিভ তানভির চৌধুরী, প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার সাজেদুর রহমান সজীবসহ অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। এজাহারে বলা হয়, নিজের পরিচিতি ব্যবহার করে প্রতারণা করে আসছিলেন আরজে নীরব। ফস্টার পেমেন্টের মাধ্যমে ৫৬ লাখ ৫৭ হাজার ৬৮৯ টাকা আত্মসাৎ করেছে কিউকম। আসামিরা তাদের সকল অফিশিয়াল কার্যক্রমের বন্ধ করে দিয়ে পালিয়েছে।
তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার হাফেজ আল ফারুক শুক্রবার (৮ অক্টোবর) গণমাধ্যমকে জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার (৭ অক্টোবর) তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় কিউকমের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন আব্দুল্লাহ খান শৈশব নামে এক শিক্ষার্থী। অর্ডার করা পণ্য না পেয়ে তিনি মামলাটি করেন। তারই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার (৮ অক্টোবর) আরজে নীরবকে আদাবর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ গণমাধ্যমকে জানান, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই আরজে নীরবকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। আদালত একদিনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেন। জিজ্ঞাসাবাদে তার প্রতারণার বিষয়ে তথ্য পেলে পরবর্তীতে জানানো সম্ভব হবে।
উল্লেখ্য, এর আগে ই-কমার্স ব্যবসার নামে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে কিউকম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও রিপন মিয়াকে ৩ অক্টোবর ধানমন্ডি থেকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ।