গল্প: নেতৃত্ব

মুসা আলি
মুসা আলি
23 মিনিটে পড়ুন

উচ্চ মাধ্যমিকে দু’দুবার ফেল মারার পরে খুচখাচ যাতায়াত সূত্রে জসীম বেশ বুঝে গিয়েছিল, তার পক্ষেই সম্ভব, শুধু সময় ব্যয় করে লেগে থাকতে হবে। সেভাবেই শুরু হয়েছিল তার রাজনৈতিক জীবন।
বিকলাঙ্গ শরীর, বাম পা টেনে টেনে ফেলতে হয়, সাইকেলে চড়তে গেলে আরও বেশি কষ্টকর, প্যাডেলে চাপ দিলে কোমরের কনকনানি মাথায় ওঠে। তবুও মনের জোরে টানা কুড়ি বছর বেশ সমানতালে চালিয়ে আসতে পারলেন। সকলের প্রভাব প্রতিপত্তি খর্ব করে সব দাপটের মালিক হয়ে উঠেছেন জসীম নিজেই।
সাম্প্রতিক সময়ে সেই জসীমকে মাঝে মধ্যে তুচ্ছ বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে বারবার। এ নিয়ে তাঁর তির্যক মন্তব্য, ফারুক এম. এ. পাশ করলে কী হবে, রাজনীতির পাঠ ঠিকমতো শেখেনি। অভিজ্ঞতা নেই বলেই এভাবে পা টলছে।
এ বুজরুকি ফারুককে নতুন করে তাতিয়ে দিল। তার তাৎক্ষণিক মন্তব্য, বাধা পাচ্ছেন বলেই বাধ্য হয়ে কথার তড়পানিতে নিজেকে ঢেকে রাখার চেষ্টা করছেন, শাড়িতে ফলস পাড় লাগানোর মতো। জসীমের সব আয়োজন ভন্ডুল করে দেওয়ার জন্যে মনে মনে কেমন যেন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে উঠল ফারুক। একটা সূক্ষ্ম পার্থক্যবোধ নিয়ে রাজনীতির ঘেরাটোপে পা রাখতে পেরেছিল সে। জসীম জঙ্গীপনায় প্রবল বিশ্বাসী, তাতেই তার যত অবিশ্বাস। ফারুক ভেবেছিল আমজনতাকে ভাবাতে হবে সূক্ষ্ম গণতান্ত্রিক বোধ দিয়ে। সেই সূত্রে দুজনের সম্পর্ক সাপে নেউলে হয়ে উঠল। অবশ্য কে নেউল, কে সাপ, তা নিয়ে যথেষ্ট মতপার্থক্য ছিল সাধারণ মানুষের মধ্যে। কেউ কেউ ভাবল, এতদিন রাজনীতিতে পড়ে থেকে জসীমদা অনেক ভালো কাজ করেছেন, ফারুকের কী দরকার ছিল তাঁর পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়ানোর? মতান্তরও ছিল।
গত দু’তিন মাসে ফারুকের নতুন নতুন উদ্যোগে ভিতরে ভিতরে জসীম ক্ষুধার্ত নেকড়ের মতো অস্থির হয়ে উঠলেন। বুঝে গেলেন, একটু বেশি জঙ্গীপনা দেখাতে না পারলে ছেলেটাকে কিছুতেই থামানো যাবে না। অঙ্কুরে বিনষ্ট করে দেওয়াই ভালো। পরের দিন বিকেলে ঘনিষ্ট সাকরেদ প্রবীরকে ডেকে বললেন, পাতের ভাত কেড়ে খেতে চাচ্ছে রে।
তখন আমার কথা শোনেন নি, এখন বুঝুন। চাষিদের সুযোগ করে দিয়ে যদি কিছু নিয়ে থাকি, তাতে ওর বাপের কী?
ফারুকের হিসেব আলাদা, জায়গা ছেড়ে দিলে সব লাভ ঢুকবে জসীমদার পকেটে, তা হতে দেওয়া যায় না, বরং লেগে থাকলে তার চারণক্ষেত্র বাড়বে। মানুষের বিশ্বাস বাড়তে বাড়তে হেঁতাল গাছ হয়ে যেতে পারে। পরবর্তী পর্যায়ে সেটাকেই সে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে। রাজনীতি সম্ভাবনার শিল্প, ভালোমতো জাপটে ধরতে পারলে সফলতা আসবে পরিশ্রমের বুক বেয়ে। পরের দিন থেকে নেকড়ে বাঘের মতো ওঁত পেতে থাকল জসীমের গালের খাবার কেড়ে নেওয়ার জন্যে। লোকবল বাড়লেই তা যে সম্ভব, সেই যুক্তিতে ভিতরে ভিতরে বেশ কম্পিত হতে থাকল।
জসীম অনুভব করতে পারলেন, ফারুকের কারণে তাঁর প্রভাব প্রতিপত্তিতে কোপ পড়তে চলেছে, আয়ের উৎসও সংক্ষিপ্ত হয়ে আসছে। এ উপদ্রব যে খুব বেশি দিন মেনে নেওয়া যায় না, সেই ভাবনা তির হয়ে ঢুকল মাথার ভিতরে। শনিবার সন্ধের পরে বারান্দায় বসে শিকারি বাঘের মতো মুখ করে সামনের উঠোনে জমে ওঠা অন্ধকারের দিকে চেয়ে থাকলেন। একটা হাঁটুর বয়সি ছেলে ফলকা রাজনীতি করে তার রাজত্ব কেড়ে নিতে চাচ্ছে। একেবারেই অসম্ভব, ভিতরে ভিতরে রাসভ হয়ে উঠলেন জসীম।
ফারুক বেশ স্বচ্ছল পরিবার থেকে রাজনীতির চত্বরে পা রাখতে পেরেছিল। এতটুকু নিয়ে নয়, স্রেফ দিয়ে আম-মানুষের আনুগত্য আদায় করে নিতে চায় সে। সেই হবি তার জীবনে ছবি হয়ে ভেসে ছিল। পরের সপ্তাহে সোমবার জানতে পারল যে হাইকোর্টে মামলা চলছে এমন জমি বি.পি.এল. কার্ডধারীর মধ্যে বিলি করার নাম করে জসীম মাথা পিছু দু’হাজার টাকা নিয়েছেন। একটা নতুন হাতিয়ার পেল হাতে, নাড়া দিয়ে জসীমকে অস্থির করে তোলার জন্যে মনে মনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হল, এমন কী প্লটে সামনাসামনি উপস্থিত থেকে বাধা দেওয়ার কথাও ভাবল।
জসীম প্রবীরকে ডেকে বললেন, কাল সকালে চাষিদের সঙ্গে নিয়ে জমিটা দখল করে নিতে পারলে আর কোনো ল্যাটা থাকবে না।
রাতে খবর পেয়ে বাধা দেওয়ার জন্যে ফারুক প্রস্তুতি নিল কিন্তু পরের দিন সকালে দেখল, সকলের ভয় জসীমের জঙ্গীপনাকে দেখে। তবুও আশা ছাড়ল না, কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে প্লটে উপস্থিত হতেই জসীমের চাষিরা হইহই করে লাঠি, কোদাল, কুড়ুল হাতে তেড়ে এল ফারুকের দিকে। জসীম জমির পশ্চিম কোণে দাঁড়িয়ে প্রবল হুঙ্কারে তোল্লা দিলেন, শ্লালাকে মেরে শেষ করে দে। ঢ্যামনা বজ্জাত কোথাকার।
রেগে গেলে জসীম শালা শব্দটাকে এভাবে ‘শ্লালা’ বলে উচ্চারণ করতেন।
ছুটে পালাতে বাধ্য হল ফারুক। জসীম খুব মজা পেলেন। এতদিন যে বিরোধ আড়াআড়িতে ছিল, তা খাড়াখাড়িতে পরিণত হল। ফারুক অপেক্ষায় থাকল জসীমকে বিপদে ফেলার জন্য। পরের মাসে প্রথম সপ্তাহে সেই সুযোগও এল। গ্রামের একটা মেয়েকে তালাক করিয়ে দেওয়ার দায়ভার ঘাড়ে নিয়ে জসীম মেয়ের বাপের কাছ থেকে নগদ দু’হাজার টাকা গুণে নিয়েছিলেন। আশ্বাস দিয়ে বলেছিলেন, ঠিক সময়ে কাজটা সেরে দেবেন। তাতেই মেয়ের বাপ বেজায় খুশি। জামাইকে নিয়ে আর পারছিল না লোকটা, মনে মনে অতিষ্ট হয়ে উঠেছিল।
খবরটা কানে যেতেই ফারুকের তৎপরতা শুরু হল। গোপনে জামাই এর সঙ্গে যোগাযোগ করল। বউ ফিরে পাবে যদি মদ খাওয়া ছেড়ে দিতে পারো। ছেলেটা বাধ্য হয়ে রাজি হল। বউ-এর প্রতি তার ভালোবাসা পাহাড়ের মতো উঁচু। কয়েকদিন পরে ফারুক নিজের উদ্যোগে গ্রামীণ সালিশি ডাকল, জামাইকে হাজির করালো সেই সভাতে। তর্কবিতর্ক, আলোচনার শেষে মদ ছোঁবে না বলে সে মুচলেকা দিল। ঘটনার টানাপোড়েন শেষ পর্যন্ত নামল সমতলভুমিতে। মেয়ের বাপ এত খুশি হল যে জসীম কৌশল করে তার কাছ থেকে যে দু’হাজার টাকা নিয়েছিলেন, তা প্রকাশ করে দিল সালিশি সভাতে। মেয়ে জামাই-এর ঘর সংসার নতুন করে শুরু হতেই জসীমকে কয়েক দিনের মধ্যে সেই টাকা ফেরত দিতে হল। রাজনীতিতে এর চেয়ে বড়ো কষ্টের আর কিছু নেই।
দিন কুড়ি পরে আবার একটা মওকা এল ফারুকের সামনে। মাঠ ছেড়ে ছুটে পালানোর লজ্জা ঢাকার আরেকটা সুযোগ। মনে মনে দুলতে লাগল, ভিতরে জিতে যাবার প্রবল প্রত্যাশা। ষাট বছরের কম কয়েকজনকে বার্ধক্যভাতা পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রত্যেকের কাছ থেকে জসীম নগদ দশ হাজার টাকা গুণে নিয়েছেন। নিজের মন্তব্যে বলেছেন, তোরা তো গেঁটে থেকে দিচ্ছিস না। সরকারের দেওয়া টাকার অংশ দিচ্ছিস মাত্র।
নিজের উদ্যোগে বিডিও অফিসে ফোন করল ফারুক। বিভাগীয় অফিসার বললেন, বিষয়টা খুব জটিল, অফিসে আসুন, সব কিছু নিজেই জেনে যেতে পারবেন। লোকগুলোর বয়সের প্রমাণপত্র পঞ্চায়েত থেকে ইতিমধ্যে সংগ্রহ করে নিতে পেরেছিল সে। পরের দিন অফিসে গিয়ে বলল, পলাশবাবু, লোকগুলোর তো এখনও ষাট পূর্ণ হয়নি।
পলাশ প্রামাণিক, অমায়িক ভদ্রলোক, দুঃখ করে বললেন, জোর করে কাউকে বার্ধক্যভাতা পাইয়ে দেওয়া যায় না অথচ জসীমবাবু— সরকারি দলের নেতা বলে এভাবে সাতে সত্তর করে দিতে পারছেন।
অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে ফারুকের মন্তব্য, লোকগুলো needy তা মানছি কিন্তু বয়স না হলে তো কিছুই করার নেই। তারপর জসীমের বিরুদ্ধে বি.ডি.ও-র কাছে একটা লিখিত অভিযোগ জমা দিয়ে বাড়িতে ফিরে এল। জসীমকে ডেকে বি.ডি.ও. কী বলেছিলেন, ফারুক তা জানতে পারেনি, কিছুদিন পরে শুনেছিল, জসীম সব টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হয়েছেন।
এ জয়লাভ ফারুকের জীবনে নতুন আলোর দ্যোতক হিসেবে দেখা দিল। পর পর দুটো ঘটনায় অলৌকিক জয় জসীমকে অনেকখানি পিছনে ফেলে দিল। এত দিনের ভারিক্কি নেতৃত্বের ব্যর্থতায়, কিছুটা ব্যক্তিগত লজ্জায় ছটফট করতে লাগলেন জসীম। মনের গভীরে ক্ষুধার্ত নেকড়ের গর্জন। মাঠ ছেড়ে পালানোর সেই দৃশ্য নতুন করে একবার অনুভূতির ছবিতে ভেসে উঠে নিভে গেল। অস্ফুটে শুধু বললেন, সেদিন অল্পের জন্যে সুযোগটা হাতছাড়া না হয়ে গেলে এতদিন মাঠ ফাঁকা হয়ে যেত।
পরের সপ্তাহে শনিবার। সকাল ন’টার আগে মতলব হন্তদন্ত হয়ে জসীমের বাড়িতে ঢুকল। অনেক ডাকাডাকির পরে দুচোখ কচলাতে কচলাতে বারান্দায় এসে বললেন, কী খবর রে?
গ্রামে পুলিশ ঢুকেছে।
তা বুঝলাম, কিন্তু কেন?
পলাশকে তুলে নিয়ে গেছে।
কারণ কী জানতে পেরেছিস?
মতলব ঠায় দাঁড়িয়ে থাকল, জসীম বিরক্ত হয়ে বললেন, এখন যা, গুরুতর হলে নিশ্চয় পলাশের বাড়ির থেকে কেউ না কেউ আসবে।
মতলব ফিরে চলল। এ তল্লাটে একান্ত পরিচিত সুপারি কিলার। প্রকৃত নাম ভয়ঙ্কর ব্যানার্জী। রাজনৈতিক খুনের ছকে শ্রেষ্ঠ বলেই সকলের কাছে সে মতলব নামে পরিচিত।
জসীম বারান্দার উপরে বসে চা খেতে শুরু করলেন। মনে মনে ভাবলেন, ফারুক শুধু শুধু বিরোধ করতে শিখেছে, কাজ করতে শেখেনি। পারলে থানা থেকে পলাশকে ছাড়িয়ে এনে নিজের শক্তি প্রমাণ করুক, তাহলে বুঝব, ব্যাটার বুকে কিছুটা শক্তি জমেছে। ভাবনার ফাঁক গলে পলাশের দাদা পরিমাল তাঁর বাড়িতে ঢুকল, জসীমের রাজনীতির হিসেব মিলে গেল টক্কে টক্কে, একগাল হেসে বললেন, কী খবর রে?
পুলিশ এসে পলাশকে তুলে নিয়ে গেছে।
কী করেছিল তোর ভাই?
গতকাল বিকেলে খেলার মাঠে ও-পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে মারপিট করেছিল, শুনেছি তাদের একজনের দাঁত ভেঙেছে পলাশের প্রবল ঘুসিতে।
হাফ মার্ডার কেস, বেশ ভারী, পয়সা কড়ি এনেছিস?
কত দিতে হবে বলুন?
এখন হাজার দশেক দিয়ে যা।
এত লাগবে?
আরও বেশি লাগতে পারে, ছুঁচো ওসিটা এসব কেস হাতে পেলে খুব নিসপিস করে।
একটু কমেজমে কী করলে হয় করুন।
দুপুরের দিকে থানায় গিয়ে কথা বললে সব বুঝতে পারব।
পরিমল টাকা গুঁজে দিয়ে হিসেবের খাতা মিলিয়ে দেখতে দেখতে বাড়ির পথে ফিরে চলল। মাঝপথে ফারুকের সঙ্গে দেখা, মুহূর্তে দুজনের চোখাচোখি হল। নিজেই উদ্যোগ নিয়ে ফারুক বলল, সব শুনেছি, ছাড়িয়ে আনার কী ব্যবস্থা করেছিস?
জসীমকাকুর কাছে টাকা দিয়ে এসেছি, দুপুরের দিকে থানায় যাবেন, বলেছেন, কেসটা নাকি খুব ঘোরালো।
কত দিতে হল?
দশ বলেছিলেন, নয় দিয়ে এসেছি।
ফারুকের মাথায় একটা চকিত চিন্তা বিদ্যুতের মতো খেলে গেল। যে কোনো মূল্যে পলাশকে ছাড়িয়ে আনতে পারলে জসীমদার মুখ নতুন করে পোড়ানো সম্ভব বলেই ভাবল। পরিমলকে বলল, তুই এখন যা, দেখছি কী করা যায়।
সাইকেলের প্যাডেলের সঙ্গে প্রতিযোগিতা শুরু হল ফারুকের। দুরন্ত গতিতে থানার দিকে ছুটে চলল, রাজনীতির দাদাদের ধরে দুপুরের আগে পলাশকে ছাড়িয়ে গ্রামে এনে হাজির করল। জসীমের কট্টর সমর্থকরা কম বেশি অবাক হল সেই দৃষ্টান্ত দেখে। একটা উলঙ্গ ধারণা দুরন্ত স্রোতের মতো এগিয়ে চলল গ্রামীণ মানুষের মানসিক স্তরে। ফারুক এম.এ. পাশ করা ছেলে, খুব বুদ্ধি ধরে, থানার বড়বাবু নাকি ভয় পেয়ে পলাশকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। কেউ কেউ ভাবল, অল্প দিনে ছেলেটা বেশ তো জসীমদার বিকল্প হয়ে উঠতে পারল। পলাশের বড়ো দাদা পরিমল নতুন সুযোগ পেয়ে গেল, ছুটল জসীমের বাড়ির দিকে, ঢুকেই গুম মুখে বলল, টাকাগুলো ফেরত দিন।
কেন, তোর ভাইকে ছাড়িয়ে আনতে হবে না?
ফারুকদা সে কাজ সেরে ফেলেছে।
মোট টাকা দুভাগ করে জসীম দু’পকেটে রেখেছিলেন। তা যোগ করে পরিমলের হাতে দিয়ে বললেন, কাজটা ভালো করলি নে তুই।
এভাবে ভাবছেন?
ফারুককে দিয়ে যদি সব কাজ হয়, আমার কাছে এলি কেন?
আসতে নিষেধ করছেন?
আমি কী তাই বললাম?
ফারুকদা উপযাচক হয়ে এসব করল।
কত দিতে হল?
এক পয়সাও লাগেনি, উল্টে ভাইকে দুধ রুটি খাইয়ে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে গেছে।
আমাকে তা বিশ্বাস করতে হবে?
না করলে তো কিছুই করার নেই।
আর কোনোদিন দায়েঘায়ে আমার কাছে আসবি নে।
তাহলে ফারুকদার কাছে যেতে বলছেন?
সে তোর ব্যাপার?
জসীম হাড়ে হাড়ে বুঝলেন, রাজনীতির পোগ্রামগুলো অন্যভাবে না সাজালে নয়। ঢাকঢোল পিটিয়ে আর কিছুই করা যাবে না। ফারুকের মতো ঢ্যামনা রাতদিন পিছনে লেগে রয়েছে। ভালো করেই জানেন, রাজনীতি তার জীবনে শুধু সেবা নয়, ব্যক্তিগত পেশাও। তাতেই সংসার চলে, পকেট ভারী থাকে, বছরে অন্তত এক দু’বার ট্যুরে যাওয়া সম্ভব হয়। কোনোরকম আর্থিক ঝক্কির মুখোমুখি হতে হয় না, ছেলেমেয়েরা দিব্যি পড়াশোনা চালাতে পারছে। রাজনীতির এ শিল্পে ঘাটতি দেখা দিলে নিজস্ব প্রফেশন বলে কিছুই থাকবে না, ফারুক সেটাই চাচ্ছে। ছেলেটা হাড়ে হাড়ে হারামি।
পরের দুটো মাসে অদ্ভুত টানাপোড়েনে জসীম আরও পাকাপোক্ত হয়ে উঠলেন। তৃতীয় মাসের প্রথম সপ্তাহ, খুব সম্ভব সোমবার, বিডিও অফিস থেকে ফিরে বেশ সঙ্গোপনে কাছের জনাকুড়ি অনুগামীকে নিয়ে নিজের বাড়িতে বসে সবিস্তার বোঝানোর পরে বললেন, প্রত্যেকে বোরো চাষের জন্য সার ওষুধ বাবদ পাঁচ হাজার টাকা সরকারি অনুদান পেতে পারে যদি অফিসে মাথাপিছু পাঁচশো গুঁজে দেওয়া সম্ভব হয়। চাষের কাজে যুক্ত না থেকেও এ টাকা পেতে পারবে তারা। দায়িত্বে থাকা চ্যাটার্জীবাবু খুব কাজের মানুষ, তবে একটু হাতটান। তোমরা রাজি থাকলে চেষ্টা নিতে পারি।
চাষ না করে মাথাপিছু সাড়ে চার হাজার, বেশ তো বড়োসড়ো অঙ্ক, লোকগুলোর মুখ প্রাপ্তির মোহে উজ্জ্বল হয়ে উঠল, উৎফুল্ল হয়ে বলল, আপনার উপর আমাদের অপরিসীম ভরসা।
তাহলে লেগে পড়তে পারি তো?
সমবেত সম্মতি, অবশ্যই।
কালেকশানগুলো একসঙ্গে হাতে পাব কবে?
কাল পরশুর মধ্যে আপনার বাড়িতে পৌঁছে দেব।
সকলে সহমত হয়ে বলছ?
দ্বিমতের কিছু নেই জসীমদা, আমরা তো কম পাচ্ছিনে।
জসীম মনে মনে বেজায় খুশি না হয়ে পারলেন না। নেতৃত্বের প্রতি বিশ্বাস জাগিয়ে রাখাই রাজনীতির মূল আর্ট। এতদিনের চেষ্টায় সেই অনুশীলনে নিজেকে বেশ পাকাপোক্ত করে তুলতে পেরেছেন।
ফারুকের ভাবনা অন্য খাতে অন্য পথে, জসীমের লোক ভাঙিয়ে নিজের সমর্থন বাড়িয়ে তোলা। বিডিও অফিসে গিয়ে জানতে পারল, ইতিমধ্যে প্রত্যেকের নামে পাঁচ হাজার টাকা মঞ্জুর হয়ে চলে এসেছে, পাঁচশো টাকা গুঁজে দেওয়ার প্রসঙ্গ সম্পূর্ণ মিথ্যে। বাড়িতে ফিরে নিজের উদ্যোগে চাষিদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করল। সকলের কাছে তার বিনীত অনুরোধ, অফিসে গেলেই আসল ব্যাপারটা জানতে পারবে তোমরা।
সেই ডোজে যথেষ্ট কাজ হল। জসীম চাষিদের টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হলেন। দল ভাঙার খেলায় নতুন করে জসীম-ফারুকে টানাটানি শুরু হল। ফারুক ফেবিকলের মতো লেগে থাকল জসীমের সমর্থকদের ভাঙিয়ে নিতে, শেষ পর্যন্ত পারলও। প্রায় অর্ধেক চাষি তার পক্ষে চলে এসেছে। বিকেলের সূর্য-তেজ কমতে কমতে যেমন নিস্তেজ হয়ে পড়ে, জসীম তাৎক্ষণিক অবস্থানে সেই পর্যায়ে চলে যেতে বাধ্য হলেন।
পরের রবিবার মতলব নিজেই এল জসীমের কাছে। আম-মানুষ হয়তো তাকে ভালো চোখে দেখে না। কিন্তু জসীম বোঝেন, তার রাজনৈতিক জীবনে মতলবের কত বড়ো ভূমিকা রয়েছে। শুধু বলে দিলেই হল, তারপর সব দায়িত্ব মতলবের। কাজ সারা হয়ে গেল চুপিসাড়ে এসে বলে যেত, কয়েক দিন দেরি হলেও পেরেছি জসীমদা।
সেই মতলব টানা পাঁচ মাস উপোস রয়েছে, সারা শরীরে মরিচার পলেস্তারা। নেতিসময় বলে জসীম কোনো কাজ দিতে পারেননি। মতলব ভালো করেই জানে, এ্যাকশনে থাকলে তবেই নেতাদের কাছে কদর থাকে, খুচখাচ এটাওটা চেয়ে নেওয়াও যায়। ঘরের মধ্যে দুজনে সামনাসামনি বসে। মতলব চেয়ে থাকল জসীমের মুখের দিকে, একটা চরম নির্দেশ পাওয়ার অপেক্ষায়। এক সময় ধূসর ইশারা পেয়ে বলল, তাহলে কী ফেলে দেব?
পারবি?
ও নিয়ে কিস্তু ভাববেন না।
লোকজনের ঢল নেমেছে ওর পক্ষে, খুব রিস্কের।
পেরে যাব জসীমদা।
তাহলে চেষ্টা করে দেখতে পারিস।
দিন শেষ হতে থাকল মতলবের গোপন ইচ্ছার গলিপথে। সকালে সূর্য উঠল, সন্ধ্যায় তা ডুবে গেল। সপ্তাহ শেষ হল, নতুন মাস এল, মতলবের পক্ষে কিছু করে ওঠা সম্ভব হল না। ফারুকের পাশে সর্বক্ষণ লোক গিজগিজ করছে। একটা উল্টো প্রচারের দগদগে আগুন বার বার ছ্যাকা দিতে থাকল জসীমকে। দুজনে রাজনীতি করলেও ফারুকের চেয়ে জসীম অনেক বেশি নিষ্ঠুর, যা কাঁটা হয়ে বিঁধল তাঁকে। মনের তলানিতে হতাশার ছায়া। তাহলে কী মতলবের পক্ষে এ কাজ সেরে ফেলা সম্ভব হবে না? দিন গুণতে গুণতে সময় শেষ করে দেবে? শনিবার সন্ধেয় চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে গ্লানির সমুদ্রে ডুবতে ডুবতে অস্ফুটে শুধু বললেন, আল্লা, কেন যে ওর অপঘাতে মৃত্যু হয় না।
রাজনীতিতে জসীম সম্পূর্ণ নাস্তিক, জীবনে কোনোদিন মসজিদে যাননি। প্রবল পূজাআচ্চায় বিশ্বাসী উচ্চ বামনেতৃত্বের সুনজরে থাকতে প্রতি শুক্রবার দুপুরে পার্টি অফিসে বসে পত্রপত্রিকায় চোখ রেখে সময় কাটিয়ে দিয়েছেন। একান্ত অসাবধানে ‘আল্লা’ শব্দ উচ্চারণ করে কেমন যেন শঙ্কিত হয়ে পড়লেন। কেউ শুনে ফেলেনি তো? তাঁকে ছোটো করার জন্যে ফারুক হারামিটা রাতদিন ধর্মের কলে কাঠি মেরে চলেছে। নেই কাজ তো খই ভাজ। ঈদ এলেই সব ব্যবস্থাপনায় ছেলেটার নাম। চাঁদা তোলার নাম করে এ-বাড়ি সে-বাড়ি ঘুরে তাঁর নাস্তিকতা নিয়ে ফারুকের যত প্রশ্ন। যেন অন্য প্রসঙ্গ থাকতেই পারে না।
ভাবনার খরস্রোতে মনের আকাশ বেয়ে শেষ পর্যন্ত কঠোর বাস্তবে নামতে পারলেও নাস্তিক জসীম কোনো উপায়ান্তর খুঁজে পেলেন না। সকালে সূর্য উঠল ঘটা করে, সন্ধেয় তা ডুবে গেল। তা নিয়ে জসীমের জীবনে কোনো হেলদোল ছিল না। ফারুক যেন তার জীবনের সব আলো ছিনিয়ে নিয়ে চলে গেছে। বাধ্য হয়ে তাঁকে সবকিছু মেনে নিতে হচ্ছে।
পরের মাসে প্রথম রবিবার, রোদ ঝলমল সকাল। ভারাক্রান্ত মনে বারান্দায় বসে ছিল জসীম। মতলবের অপরাগতায় সেই দুশ্চিন্তা আরও গভীরতর হয়ে উঠছিল। দুচোখের সামনে মুকুট হারানোর হাতছানি। চারদিকে কেমন যেন প্রতিকূলতার জোয়ার শুরু হয়েছে, কিছুতেই কিছু করে উঠতে পারছেন না। গরম চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে এক মারাত্মক গুঞ্জনে চমকে উঠলেন জসীম। সামনের গ্রাম পার হয়ে বাঁকের মোড়ে ফারুক নাকি লরির ধাক্কায় গুরুতর আহত হয়েছে। প্রবল যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে, সাইকেলটা ছিটকে পড়েছে রাস্তার পাশে।
তাৎক্ষণিক ব্যস্ততা শুরু হল জসীমের মধ্যে, রান্নাঘরে ব্যস্ত দুলিকে উদ্দেশ্য করে ঢিল ছোঁড়ার মতো করে বললেন, এ্যাই, এ্যাই, আমার সাইকেলটা কই?
কী হয়েছে বলবে তো?
আগে বলো সাইকেলটা কোথায় রেখেছ?
ওই তো রান্নাঘরে।
আমাকে একটু বের হতে হচ্ছে।
কোথায় যাচ্ছ শুনি?
ফারুক লরির ধাক্কায় এ্যাকসিডেন্ট করেছে।
তাতে তোমার কী, যা আড়াআড়ি সম্পর্ক।
গুম মুখে জসীমের প্রশ্ন, কী আবোলতাবোল বকছ? পারলে মতলবকে একটু খবর দাও, আমি বের হচ্ছি।
বিকলাঙ্গ জসীম পুরনো সাইকেলে চেপে বসলেন। মনের গভীরে দুরন্ত তাগিদ, সবার আগে তাঁকে অকুস্থলে পৌঁছাতেই হবে। কোমরের যন্ত্রণা মাথার ভিতরে চাবুক মারছে, তাতেও ভ্রূক্ষেপ ছিল না জসীমের। আরও জোরে প্যাডেলে চাপ দিয়ে এগিয়ে চললেন। চারদিক থেকে ভিন ভিন করে লোক আসছে অকুস্থলের দিকে। ল্যাংচা পা নিয়ে বীরের মতো নেতৃত্ব দিতে শুরু করলেন জসীম। ফারুকের বউ এসে রাস্তার পাশে বসে ঢুকরে কাঁদছে। জসীম তার সামনে গিয়ে চাপা সান্ত্বনার ঝড় বইয়ে দিয়ে বললেন, বৌমা, এভাবে ভেঙে পড়ো না, আমি তো রয়েছি।
তমাল বর, ফারুকের মূল সাকরেদ, অন্ধকার মুখে দাঁড়িয়ে ছিল। জসীম সরে গিয়ে তার কাঁধে হাত রেখে বললেন, বিপদের দিনে কোনো বিভেদ নয় রে, এক্ষুণি এ্যাম্বুলেন্স দরকার, যোগাযোগ করতে পেরেছিস?
তমাল না-সূচক মাথা নাড়ল।
তাহলে আমি ব্যবস্থা করছি। লাউড স্পিকার দিয়ে কথা বলতে শুরু করলেন, হ্যালো, আমি জসীমদা বলছি, এক্ষুণি এ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়ে দে, আমার ছোটোভাই এ্যাক্সিডেন্ট করেছে।
জায়গাটার কথা নির্দিষ্ট করে বলতে হবে জসীমদা।
ভজুপাড়া পার হলেই বাঁকের মোড় ঘুরে কিছুটা দক্ষিণে।
তমাল চমকে উঠল জসীমের আন্তরিকতায়। কোন জসীমদাকে দেখছে সে? কান থেকে ফোন নামিয়ে জসীমের বিনীত অনুরোধ, তমালভাই, তোমাকেই এ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে যেতে হবে। আর কাকে কাকে নিলে হয়, গাড়িতে তুলে নাও।
আবার বামদিকে সরে গিয়ে ফারুকের বউকে উদ্দেশ্য করে বললেন, বৌমা, তোমার জন্যে আলাদা গাড়ি করে দিচ্ছি, কয়েকজনকে নিয়ে তুমিও এ্যাম্বুলেন্সের পিছনে পিছনে যাও। মনের শক্তি তোমাকেই তো যোগাতে হবে।
প্রবীর ব্যানার্জী, ফারুকের আর এক সাকরেদ, তখনও দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দুঃখের সাগরে ভাসছিল। হাত দশেক সরে এসে বলল, জসীমদা, আমিও যাব তবে বাড়ি থেকে কিছু পয়সাকড়ি না নিয়ে তো–।
বাঘের মতো গর্জে উঠলেন জসীম, কী বলছিস্‌ রে তুই। ছোটোভাইয়ের বিপদে আমাকেই কৃপণ ভাবছিস? এই নে ধর, প্রবীরের হাতে পাঁচ হাজার টাকা গুঁজে দিয়ে বললেন, পকেটে রেখে দে, ইনসা আল্লা, ফারুককে সুস্থ করিয়েই বাড়িতে ফিরব।
এ্যাম্বুলেন্স এলেই জসীম ছুটে গিয়ে ফারুকের শরীরটা চাগিয়ে ধরলেন, পাশে দাঁড়িয়ে থাকা তমাল প্রবীর রঘুকে উদ্দেশ্য করে বললেন, তোমরাও একটু ধরো, যা ভারী শরীর।
তখনও ফারুকের পুরো জ্ঞান ছিল। কোমর আর পাঁজরের হাড়ে প্রচণ্ড চোট লাগার কারণে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিল। চেয়ে থাকল জসীমের দিকে। সকাতর দুচোখে বিন্দু বিন্দু পানি যা নতুন হিসেবের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে। দুটো হাত দিয়ে সজোরে জড়িয়ে ধরল জসীমকে, ভিতরে বাঁধভাঙা আবেগের উচ্ছ্বাস, জসীমদা—
এই তো, তোর সঙ্গেই রয়েছি।
বলছি কী—
বলাবলির কী আছে শুনি?
ফারুক আরও আবেগতাড়িত হল, এ্যাম্বুলেন্স ভোঁ করে বের হয়ে গেল। জসীম উদ্বিগ্ন দুচোখ নিয়ে এদিক ওদিক বার কয়েক তাকিয়ে নিলেন, রুমাল দিয়ে মুখ মুছলেন, ডেকে ডেকে বাকি সকলকে বললেন, আমার ছোটো ভাইয়ের বিপদের দিনে তোমরাও হাসপাতালে যাও, তাতেই ও মনে জোর পাবে। বিপদের দিনে পাশে দাঁড়াতে না পারলে বন্ধু কিসের?
জসীমের সমাজ ভাবনায়, সেবার মনোভাবে উপস্থিত সকলে কম্পিত না হয়ে পারল না। যে যার মতো ছুটল হাসপাতালে। কেউ সাইকেলে, কেউ মোটর ভ্যানে, কেউ কেউ ম্যাজিক গাড়িতে। টোটোতেও গেল কয়েকজন। বাকি যারা অকুস্থলের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দাঁড়িয়েছিল, তাদেরকে শুনিয়ে জসীম বললেন, বাড়ি থেকে ঘুরে আমিও হাসপাতালে যাব, আরও কিছু টাকা সঙ্গে নেওয়া দরকার, অপারেশন হলে তো লাগবেই।
সকলে স্তম্ভিত চোখে চেয়ে থাকল জসীমের দিকে, কী ভীষণ পাল্টে গেছেন লোকটা। জসীমকে নতুন করে চিনতে পারল তারা। হতচকিত না হয়ে পারল না।
আরেকটু পরে জসীম সাইকেলে বাড়িতে ফিরে চলেছেন। দুশ্চিন্তার মেঘ চক্কর দিচ্ছে মাথার ভিতরে। মুখের প্রতিভাসে একই ছবির প্রকাশ। রাস্তার দুধারে দাঁড়িয়ে গ্রামের মেয়েরা কম স্তম্ভিত হল না। লোকটা কেন যে এত বছর রাজনীতিতে টিকে আছেন, সেই আনুপূর্বিক ইমেজ ভেসে উঠছে সবার মনের ছায়ায়। আরেকটু পরে গ্রাম ছাড়িয়ে ফাঁকা রাস্তায় তরতরিয়ে এগিয়ে চলেছেন জসীম। পিছনে আসছে মতলব, চাপা স্বরে ডাকল, জসীমদা।
এতক্ষণ ছিলিস্‌ কোথায় রে?
কেন, অকুস্থলে।
দেখতে পেলুম না যে।
লজ্জার কারণে সামনে আসতে পারি নে।
সে কী রে?
কাজ সারতে একটু দেরি করেছি বলেই এভাবে আমেদুধে মিশে গেলেন?
এমনি করে ভাবছিস?
তাই তো দেখলুম।
জসীম সাইকেল থামিয়ে বাম পায়ে ভর দিয়ে কাত হয়ে দাঁড়ালেন। মতলব পিছনে, জসীম তাগিদ দিলেন, একেবারে পাশে চলে আয়।
মতলবের বোবা মনে নতুন করে তোলপাড় শুরু হল। কৌতূহলের বন্যা ভিতরের নদীতে। সাইকেলটা টেনে নিয়ে গা ঘেসে দাঁড়িয়ে গেল। জসীমের বুকের গভীর থেকে একটা বড়ো দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে এল। মতলব-এর কাঁধে বাম হাত রেখে চাপা স্বরে টেনে টেনে বললেন, কোমরের কনকনানি নিয়ে বড়ো আশা করে সবার আগে অকুস্থলে এসেছিলুম ফারুকের মরা মুখ দেখব বলে, কিন্তু আল্লা সেই সুযোগটুকু দিল কই?

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
লেখক: মুসা আলি
শিক্ষক জীবনের ৫৫ বছরে এসে সাহিত্যচর্চা শুরু। ইতিমধ্যে পঞ্চাশের বেশি উপন্যাসের মনসবদার। গল্প উপন্যাস লেখার ক্ষেত্রে দীর্ঘ জীবন পরিক্রমায় কঠোর বিশ্বাসী। এখন বিদগ্ধ পাঠক শুধুমাত্র কাহিনি বা চরিত্র খোঁজেন না বরং তার ভিতরে লেখক এর নিজস্ব গভীর মনন আবিষ্কার করতে চান। ঔপন্যাসিক মুসা আলি দীর্ঘ জীবন পরিক্রমার জাদুতে তার নিজস্ব মনন দিয়ে বাঙালি পাঠককে ঋদ্ধ ও সমৃদ্ধ করে তুলতে বদ্ধপরিকর।
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!