তরুণ-তরুণীদের অনেকে স্টাইলের কারণে ই-সিগারেট গ্রহণ করেন। অনেকে মনে করেন যে, ই-সিগারেট তাদের প্রচলিত সিগারেট ছাড়তে সাহায্য করতে পারে। আবার ই-সিগারেটকে প্রচলিত সিগারেটের তুলনায় স্বাস্থ্যের জন্য কম ক্ষতিকর বলেও কেউ কেউ মনে করেন। এ বিষয়গুলোই উঠে এসেছে ঢাকার দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপর পরিচালিত ই-সিগারেট ব্যবহার বিষয়ক গবেষণার ফলাফলে। ক্যাম্পেইন ফর ট্যোবাকো ফ্রি কিডসের কারিগরি সহায়তায় ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন কর্তৃক পরিচালিত এই গবেষণার ফলাফল প্রকাশ উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে ৪ অক্টোবর বেলা ১১টায় এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য ও ওয়াশ সেক্টরের পরিচালক ইকবাল মাসুদের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন অধ্যাপক ডা. আবদুল আজিজ, মাননীয় এমপি ও সদস্য, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। বিশেষ অতিথি ছিলেন মো. মোস্তাফিজুর রহমান, লিড পলিসি এডভাইজার, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস ও অধ্যাপক ডা. অরূপ রতন চৌধুরী, প্রতিষ্ঠাতা, মানস। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপর পরিচালিত ই-সিগারেট ব্যবহার বিষয়ক গবেষণার ফলাফল উপস্থাপনা করেন ডা. মোহাম্মদ হায়াতুন নবী, সিনিয়র লেকচারার, পাবলিক হেল্থ বিভাগ, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়।
গবেষণা জরিপে দেখা যায়, প্রথমে ই-সিগারেট সেবনের সময়, বেশিরভাগ অংশগ্রহণকারীরা নিশ্চিত ছিলেন না যে এতে নিকোটিন আছে কি না। জরিপে জানা যায় যে, অংশগ্রহণকারীরা ই-সিগারেটের সম্ভাব্য স্বাস্থ্যের ক্ষতি সম্পর্কে সচেতন ছিলেন না। তাদের অধিকাংশই বিশ্বাস করতেন যে, ই-সিগারেট সম্পর্কে পর্যাপ্ত বৈজ্ঞানিক গবেষণা ছিল না যে এটি স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে। অংশগ্রহণকারীদের নিকোটিন সম্পর্কে মিশ্র জ্ঞান ছিল। তারা ই-সিগারেট এবং প্রচলিত সিগারেটের মধ্যে নিকোটিনের পার্থক্য সম্পর্কে নিশ্চিত ছিল না। আবার তাদের কেউ কেউ মনে করতেন যে ই-সিগারেটে প্রচলিত সিগারেটের তুলনায় নিকোটিন কম থাকে।
গবেষণা জরিপে আরো দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা প্রথমে সামাজিক মিডিয়া, বড় ভাইবোন, বন্ধু, পরিবারের অন্যান্য সদস্য, সিনেমা, শপিং মল বা উপহারের দোকান থেকে ই-সিগারেট সম্পর্কে শুনেছে। বেশিরভাগ অংশগ্রহণকারীরা ই-সিগারেটের বিজ্ঞাপনগুলি সোশ্যাল মিডিয়ায় বিশেষ করে ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রামে দেখেছেন। বেশিরভাগ শিক্ষার্থী বন্ধুদের সাথে তাদের প্রথম ই-সিগারেট চেষ্টা (সেবন) করেছিল।
গবেষণায় সুপারিশ করা হয় যে, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের মাধ্যমে ই-সিগারেটসহ সকল ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্ট উৎপাদন, আমদানি-রপ্তানি, প্রচারণা-বিজ্ঞাপণ, বিপণন ও সেবন নিষিদ্ধকরণে পদক্ষেপ গ্রহণ করা। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের মাধ্যমে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি কঠোর করা।
অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ডা. অরূপ রতন চৌধুরী বলেন, ভারত, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ডসহ প্রায় ৫০টি দেশ ই-সিগারেট উৎপাদন, আমদানি বা রপ্তানি, পরিবহন, বিক্রি, বাজারজাতকরণ, মজুদ এবং এ সংক্রান্ত সবধরণের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করেছে। বাংলাদেশেও দিন দিন ই-সিগারেটের ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। একারণে এখনই সময় জনস্বাস্থ্য বিবেচনায় বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করে ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করা।
প্রধান অতিথি সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. আবদুল আজিজ বলেন, তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার স্বাস্থ্য, জাতীয় অর্থনীতি ও পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। কার্যকর তামাক নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন, আইন বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করে ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি এটি কার্যকর করার জন্যও সংশ্লিষ্ট সকলকে ভূমিকা রাখতে হবে।